রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর খাবার
রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ারকেই রক্তস্বল্পতা বা রক্তশূন্যতা বলা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে রক্তস্বল্পতাকে তেমন একটা গুরুত্বের সাথে দেখা হয়না। যদিও রক্তস্বল্পতা আপাত দৃষ্টিতে তেমন বড় কোন ক্ষতিকর রোগ না, কিন্তু রক্ত সল্পতার কারণে হৃদপিণ্ডের সমস্যা, নার্ভ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার সম্ভাবনা হয়ে থাকে।
রক্তশূন্যতার সমস্যা যে কোন সময়, যে কোন বয়সেই হতে পারে। দেহে রক্তশূন্যতার কারণে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে যায়। দেখা দেয় আরও নানা রকমের সমস্যা।
দেহে রক্তশূন্যতার কারণে যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে তা হলো-
১। অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
২। মাথা ঘোরা
৩। শ্বাসকষ্ট
৪। বুকে ব্যথা
৫। মাথা ব্যথা
৬। বেশি ক্লান্ত থাকা
জেনে নিন রক্তশুন্যতা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়-
দুধ
প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। দুধে আয়রন ও সব রকমের ভিটামিন বি-এর সাথে সাথে, পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম আছে। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্ত শূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্ত শূন্যতা রোগীদের জন্য নিয়মিত অন্তত এক গ্লাস করে দুধ খাওয়া প্রয়োজন।
এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD
গরু ও খাসির কলিজা
রক্তস্বল্পতা রোগের প্রধান কারণ দেহে আয়রনের ঘাটতি। তাই আমাদের এমন খাবার খাওয়া উচিৎ যা দেহের আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। খাসি বা গরুর কলিজায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। নিয়মিত গরু বা খাসির কলিজা খেলে দেহের আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। এছাড়াও কলিজায় ভিটামিন বি এর সব শাখাগুলো আছে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীরা সম্ভব হলে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলিজা রাখা উচিত।
মধু
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এগুলো শরীরে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা কমাতে মধু একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন ১ চামচ মধুর সাথে পরিমাণ মত লেবুর রস মিলিয়ে পান করুন।
সামুদ্রিক মাছ
মাছের মাঝে, ভালো আয়রনের উৎস হল সামুদ্রিক মাছ। শিং মাছ, ইলিশ মাছ, ভেটকি মাছ, টেংরা মাছ ইত্যাদি সব মাছেই প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সর্বনিম্ন ৬০ গ্রাম মাছ রাখলে রক্তস্বল্পতা রোগ থেকে দেহকে মুক্ত রাখা যাবে।
আপেল
ফলে বেশি পরিমাণে আয়রণ থাকে। তাই সরাসরি আয়রণ গ্রহণ করতে প্রতিদিন ২-৩টি আপেল খেতে ভুলবেন না।
ডিম
প্রোটিনে ভরপুর এই অসাধারণ খাদ্যটি দেহে অনেক পুষ্টির যোগান দেয়। এতে করে পুষ্টিহীনতার কারণে সৃষ্টি রক্তস্বল্পতা দূর হয়। অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ১ টি ডিম প্রতিদিন খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হবে দ্রুত।
বেদানা
বেদানা একটি সর্বগুণ সম্পন্ন ফল। এটি রক্তস্বল্পতা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। বেদানায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, জিংক ও আয়রন সহ অনেক মিনারেল রয়েছে, যা দেহের সুস্থতায় কাজ করে। দিনে ৩ বার ১ গ্লাস বেদানার রস খাবার আগে খেলে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে রক্তস্বল্পতা রোগ দূর হবে । তাই এধরনের রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বেদানা থাকা জরুরি। এছাড়া আরো যেসব ফল রক্তশূন্যতা দূর করে সেগুলো হলো কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি।
ভিটামিন বি-১২
দেহে পুষ্টি, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রনের কারণে রক্তস্বল্পতা রোগের উৎপত্তি হয়। দেহে এই সকল প্রয়োজনীয় মিনারেলের ঘাটতি পূরণ করতে খাবার তালিকায় রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি। বিভিন্ন রকম সবজি যেমন কচু শাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়মিত বেশি করে খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এই সবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ভিটামিন বি-১২, ফলিক এসিড ও অন্যান্য শক্তিবর্ধক খাদ্য উপাদান আছে যেগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
আয়রণ জাতীয় খাবার
রক্তশূন্যতায় ভুগছেন এমন কোন ব্যক্তির এই সমস্যা হওয়ার প্রথম কারণ হল তার দেহে আয়রণের অভাব। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আয়রণ যুক্ত খাবার রাখুন কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রণ পিল খেতে পারেন।
ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন
প্রতিদিন অন্তত দুইবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন। দেহে রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য এটি খুব ভালো সমাধান।
ভিটামিন সি জাতীয় ফল
আমাদের দেহে রক্ত কোষ তৈরিতে ভিটামিন সি জাতীয় যে কোন ফল এর উপকারিতা অনেক বেশি। তাই প্রতিদিন ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাওয়া উচিত দেহের রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য।