ভিটামিন ডি কি করোনা সারাতে পারে? যা বলছেন বিজ্ঞানীরা
ভিটামিন ডি কি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে? করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে জোরদার চর্চা চলছে। তবে এক কথায় এই প্রশ্নে উত্তর হল– না। তবে ভিটামিন ডি করোনার সংক্রমণ রোধে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে বলে বলছেন গবেষকরা।
তা হলে খাবেন কেন?
করোনভাইরাস বেঁচে থাকার হার এবং ভিটামিন ডি সম্পর্কে তদন্ত শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে দেখা গেছে রোগীর সুস্থ্য হওয়ার ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। স্পেনের গ্রানাডা ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ২০০ কভিড-১৯ রোগীর উপর ১০ সপ্তাহের একটি পরীক্ষা করে দেখছেন ব্যাপারটা বৈজ্ঞানীকভাবে আসলে কতটা সত্যি। ভিটামিন ডি আসলেই মারাত্মক অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে কি-না সেটা নির্ণয় করাই উদ্দেশ্য। ভিটামিন ডি ত্বকের উপর সূর্যের আলো থেকে উৎপাদিত হয় এবং এটি স্বাস্থ্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা জন্য প্রয়োজনীয়।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজের গবেষকরা বলেছেন, যে কোনো সংক্রমণ ঠেকাতে, তা সে ভাইরাস হোক কি ব্যাক্টিরিয়া কি অন্য কিছু, শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে জোরদার করে তুলতে ভিটামিন ডি-এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে এই সময় যখন আপামর জনগণ বসে আছেন কার্যত সূর্যালোকের অন্তরালে।
ফুসফুসের সংক্রমণ ঠেকানোর ক্ষমতা রাখে এই ভিটামিন। তা সে টিবি হোক কি হাঁপানি, কি ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ অথবা কভিড এবং শরীরে এর ঘাটতি না থাকলে রোগ হলেও তা সারে সহজে।
ট্রিনিটি কলেজের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে যারা ভিটামিন ডি পরিপূরক গ্রহণ করেছেন তাদের বুকে সংক্রমণের হার ৫০ শতাংশ কম।
বিশ্বের ১৪টি দেশের ১১ হাজার ৩২১ জন মানুষকে নিয়ে একটি রিভিউ স্টাডি করে দেখা যায় ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার পর তাদের ফুসফুসে আচমকা বড় ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমে গেছে। দীর্ঘ দিন ধরে শরীরে এর ঘাটতি থেকে গেলে ফুসফুসের কার্যকারিতা কমতে পারে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।
করোনভাইরাসের কোন প্রতিষেধক নেই। তাই শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোই সংক্রমণ এড়ানোর একমাত্র উপায়। আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার এবং অসুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি প্রশংসনীয় ভুমিকা রাখে। তাই কভিড-১৯ সংক্রামিত রোগীদের সারিয়ে তুলতে এটা দারুণ ভুমিকা রাখতে পারে। তবে এটা তাদের ক্ষেত্রেই কাজ করবে যাদের সংক্রমণ অতটা তীব্র বা গুরুতর নয়।
গবেষণার লক্ষ্য ছিল,ভিটামিন ডি ব্যবহার স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটায় এবং সেইসাথে স্বাস্থ্যের অবনতি রোধ করে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা।
সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. জেনা ম্যাকসিওচি বলেছিলেন, ‘আপনার যদি ভিটামিন ডি এর ঘাটতি থাকে তবে আপনার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা তিন থেকে চারগুণ বেশি থাকে। অতএব এটি বোঝা যায় যে কভিড -১৯ এর মতো একটি ভাইরাল শ্বাস প্রশ্বাসের সংক্রমণ আরও খারাপ হতে পারে যদি আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থাকে।
তা হলে কথা হল কভিড-১৯ আশঙ্কা কমবে কি না? হিসেব তো তাই বলে। করোনাভাইরাস সবার আগে জব্দ করে ফুসফুসকে। কাজেই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ফুসফুসকে যদি সতেজ রাখা যায়, রোগের আশঙ্কা যেমন কমে, রোগের বাড়াবাড়ি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। তার উপর হৃদরোগ, হাইপ্রেশার, ডায়াবেটিস— সবই তো কভিড ১৯-এর রিস্ক ফ্যাক্টর। এরা থাকলে রোগের আশঙ্কা ও জটিলতা, দুই-ই বাড়ে। অতএব ভিটামিন ডি খেতেই পারেন।
সূত্র- ডেইলি স্টার ইউকে।