করোনাযুদ্ধে চিকিত্সকদের বড় ভরসা ‘প্লাজমা ট্রান্সফিউশন’?
করোনাভাইরাসকে রুখতে হিমশিম দশা গোটা বিশ্বের। কিন্তু অতি সহজেই চিরাচরিত উপায়ে তাকে মনুষের শরীর থেকে নির্মূল করা সম্ভব। অন্তত কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই উপায় প্রয়োগের পথে হাঁটতে চান বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের একটা বড় অংশ।
পদ্ধতির নাম প্লাজমা ট্রান্সফিউশন। যা প্রয়োগ করে এর আগে অনেক মহামারির মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন চিকিত্সকরা। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের খুব সামান্য অংশের ওপর সেই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সাফল্য মিলেছে বলে মার্কিন চিকিত্সাবিজ্ঞানীদের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে। আপাতত করোনা যুদ্ধে ভরসা এই প্লাজমা ট্রান্সফিউশন পদ্ধতিই।
কিভাবে করোনা পজিটিভ রোগীদের সুস্থ করে তুলবে প্লাজমা ট্রান্সফিউশন? পদ্ধতি বহু প্রাচীন। ১৮২০ সালে স্প্যনিশ ফ্লু যখন মহামারির আকার নিয়েছিল, তখনও প্রাথমিকভাবে এই পদ্ধতিকে হাতিয়ার করেই চিকিত্সা শুরু করা হয়। মারণ রোগের কবল থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনো ব্যক্তির দেহ থেকে রক্ত নিয়ে তার প্লাজমা অংশটি আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো। কী এই প্লাজমা? রক্তের দুটি অংশ – প্লাজমা এবং সিরাম। দুটিতেই রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি থাকে। তবে প্লাজমায় কিছু প্রোটিন থাকে, যা সিরামে থাকে না। তাই সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির প্লাজমাই নেওয়া হয় অসুস্থ ব্যক্তির চিকিত্সায়।
জেফরি পি হেন্ডারসন, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের মেডিসিন অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের এমডি’র কথায়, যেকোনো ভাইরাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে চিকিত্সা করা হয়েছে। যেমন, হাম, পোলিও, ইনফ্লুয়েঞ্জা। টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগেও প্লাজমা ট্রান্সফিউশন প্রয়োগ করেছেন আমাদের পূর্বসূরীরা। পরবর্তী সময়ে প্রতিষেধক এসে যাওয়ায় মানুষ আর এর দিকে ফিরে তাকাননি। অনেকেই ভুলে গিয়েছে প্রাচীন পদ্ধতিটির কথা।
একই বিভাগের আরেক চিকিত্সা বিজ্ঞানী ব্রেন্ডা গ্রসম্যান বলছেন, সুস্থ রোগীর দেহ থেকে বেশ অনেকটা পরিমাণ রক্ত সংগ্রহ করতে হবে। তারপর তার দুটো অংশকে পৃথক করে নিতে হবে। প্লাজমা অংশটি অসুস্থ রোগীর দেহ প্রয়োগ করার পর কয়েকদিনে ফল মিলবে। পদ্ধতি সহজ, কিন্তু প্রয়োগের ক্ষেত্রটা একটু কঠিন। কারণ আপনি জানেন না যে কার রক্তে কতটা প্লাজমা থাকবে, সেই পরিমাণ প্লাজমা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য যথাযথ কি-না। এই পরিমাণের ব্যাপারটা এখনো পরীক্ষামূলকভাবেই ঠিক করতে হয়।
বিজ্ঞানীরা এও দেখেছেন যে একজন সুস্থ মানুষের প্লাজমা দিয়ে কোথাও তিনজন সুস্থ হয়েছেন, তো কোথাও এই সংখ্যাটা ১০ জন। চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গুটিকয়েক রোগীর ওপরে প্লাজমা ট্রান্সফিউশন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। তারা সকলেই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে দাবি চিকিত্সকদের।
এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম, তাদের ওপরেই করোনার হামলা বেশি। তাই প্লাজমা ট্রান্সফিউশনের মাধ্যমে তাদের দেহে অ্যান্টিবডি প্রবেশ করিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার পদ্ধতিটি এই মুহূর্তে বেশ কার্যকরী বলেই মনে করছেন মূলত মার্কিন গবেষকরা। সে দেশে মৃত্যুমিছিল আটকাতে এটাই আপাতত অস্ত্র।