৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

আপনার সন্তান এমন কিছু খেলছে না তো?

রিবা (ছদ্ম নাম)। বয়স ৭। ওয়ানে পড়ে। ধবধবে ফর্সা। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো চুল। টলটলে চোখ। মনেহয় একটু ছুঁয়ে দিলেই ব্যস। চোখের মায়া আবীর হয়ে হাতে লেগে যাবে। প্রজাপতির রঙের মতো। মায়ের সাথে ডাক্তারের চেম্বারে এসেছে। প্রসাবে জ্বালা পোড়া। তলপেটে ব্যথা। মায়ের ভাষ্য, ম্যাডাম, ‘পিসাব করনের সময় খালি কান্দে আর লাফায়। পেট চেপে খিচ্চা বইসা থাকে।’

পরীক্ষা করে দেখতে চাইলে, প্যান্ট খুলে রিবার মা যা দেখালো তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, বললেই ভালো। সরাসরি জিজ্ঞেস করলে মা বলবে, কী যে কন, ছোট মানুষ। মনেমনে দু একটা গালি ও যে দিবে না, বলা যায়না। ডাক্তারদের এ এক জীবন! কত কী যে দেখতে হয়! ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে জিজ্ঞেস করি, বাড়িতে কে কে আছে?

-ওর বাপ আর আমি।

-আর কেউ না?

-না ম্যাডাম। তবে পাশেই ভাসুরের বাসা।

-ও কার সাথে খেলাধুলা করে?

-আমার ভাশুরের পোলার সাথে। বয়স এগারো বারো। সিক্সে পড়ে। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি ঝাঁপাঝাপি। ভিডিও গেমস, ইউটিউব নাকি কি কয় এসব নিয়া থাকে। সারা বাড়িতে আর বাচ্চাকাচ্চা নাই তো। অরা অরাই খেলে। আমিও তেমন খেয়াল করি না। আহারে বাচ্চারা!
বাড়িতেই তো থাকে সারাদিন। হয় দাদির ঘর, নয় চাচির ঘর। আসলে মাইয়া আমার এই একটাই। মিছা কইয়া লাভ নাই। চাচা চাচিও আদর করে। খুব। মিতুল (ছদ্ম নাম) তো বইন বলতে অজ্ঞান।

-কখনো জিজ্ঞেস করেছেন, কি খেলা খেলে?

-না ম্যডাম। কী খেলব আর, চোর পলান্তি। পুতুল খেলা। এই সব আরকি। জিগানোর কী আছে?

-আছে, এখন জিজ্ঞেস করেন তো।

-রিবা মা, মিতুল ভাইয়ার সাথে কি খেলা-ধুলা করো বলো তো মা?

-বউ জামাই খেলি।

-বউ জামাই খেলা কী করে খেলো?

মেয়ে যা বর্ণনা দিলো, শুনে মা মুর্ছা যান আরকি! ছোট বাচ্চার আর দোষ কি? বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। এটা সবাই জানে। বড়রা অবিবেচকের মতো কাজ করবে আর বাচ্চাকাচ্চা দেখে শুনে চুপ করে বসে থাকবে, এটা ভাবার কারণ নেই। আসলেই নেই। ওহ, ভালো কথা। রিবা মিতুল কাকে অনুসরণ করল? বাবা মাকে? টিভি সিনেমাকে? নাকি ইউটিউবকে? কাউকে না কাউকে তো অবশ্যই।

-রিবা, এ ধরনের খেলা তো ভালো না মা। এটা পঁচা কাজ। কথা শেষ করতে দেয় না পাকনি বুড়ি টা। টাসটাস করে মুখের উপর বলে ওঠে, বাবা মা খেলে যে! তাহলে বাবা মা কি পঁচা? কী উত্তর দেবে রিবার মা? উত্তর দেয়ার কি মুখ থাকে? মহিলা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। যেনো পায়ের তলায় কোন মাটি নেই। বেচারা!

রিবার মাকে প্রশ্ন করি, ‘আপনারা কি স্বামী স্ত্রী রিবাকে নিয়ে এক বিছানায় ঘুমান?’

-হ ম্যাডাম। ছোট বাচ্চা। ওর বাপে কয়, কী বুঝব? ও ঘুমালেই তো কাদা। লোকটার খাই বেশি। বাচ্চা ঘুমালো কি ঘুমালো না। তর সয় না। আমি আগেই কইছিলাম!

হাহাকার থই থই কান্না হয়ে ঝরে পড়ে। আহারে! দেখুন, আমরা বাচ্চাদের যতটা নির্বোধ মনে করি, আসলে ততটা নির্বোধ ওরা না। বরং একটু বেশিই বুদ্ধি রাখে ওরা। শুধু আমরা বড়রাই এ কথাটা মানতে চাই না। আমাদের দিয়ে ওদের হিসেব করি। কিন্তু ওরা হিসেবে বাবা-মায়েদের চেয়ে পাকা। যে কাজটা বাবা মা করে, সে কাজটা খারাপ কিভাবে হয়? কাজেই বাবা-মা, বাবা-মা খেলা তারা খেলতেই পারে। তাদের তো দোষ দেয়া যায় না। একটু ভেবে বলুন তো, যায় কি?

আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর বাচ্চাকাচ্চার বিছানা আলাদা হওয়াই বাঞ্চনীয়। সবার পক্ষে হয়তো, সন্তানদের জন্য আলাদা আলাদা রুম দেয়া সম্ভব না। সে ক্ষেত্রে অন্তত বিছানাটা আলাদা করা যায়। বাবা মায়ের বিছানাটা কাপড় দিয়ে পার্টিশন দেয়া যায়। মশারির মতো। আর নিতান্তই যদি সম্ভব না হয়, শিশু সম্বলিত সংসারে দম্পতিদের অবশ্যই সর্বোত্তম সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কী সেটা আমি জানিনা। আর সবার ঘরে নিশ্চয় একরকম ফর্মূলা চলবে না। নিজের ঘর অনুযায়ী নিজেদের ফর্মূলা তৈরী করুন প্রিয় অভিভাবক।

আমরা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘুরতে যাই। মজার মজার খাবার খাই। দামী দামী গেজেট দেই। নতুন নতুন ট্রেন্ডি জামা কাপড় পরাই। কিন্তু সবচেয়ে দামী যে লেসন সেটাই দেই না। হেলথ এডুকেশন, সেক্স এডুকেশন। কত্ত জরুরি যে এসব জীবনমুখী শিক্ষা। কী আজব আমরা! কবে বুঝব এর গুরুত্ব? আর কত ভুল বার্তা দেহ মনে নিয়ে বড় হবে আমাদের শিশুরা?

বাচ্চাদের কি কি করা উচিৎ আর কি কি না সেটা বলুন। ছোটদের কাজ, বড়দের কাজ কি কি জানান। ধীরে ধীরে নিজের শরীর সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। নারী পুরুষের যৌন জীবন সম্বন্ধে শিক্ষা দিন। ধীরে ধীরে, সহজ করে। কাজের লোক কিংবা ক্যানভাসারের কাছে ভুল জানার চেয়ে, বাবা মার কাছে জানা ভালো নয় কি? সন্তানের কথা বিশ্বাস করুন। সন্তানের বন্ধু হোন। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করুন। লালনপালন করাই কিন্তু শেষ কথা না। সন্তানকে সুরক্ষিত রাখাও বাবা মার পবিত্র দায়িত্ব। আসুন ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করি। ওদের জীবনটা আরেকটু সহজ করি।

ডা.ছাবিকুন নাহার
মেডিকেল অফিসার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ

সূত্র: কালের কন্ঠ

Comments

comments