শিশুর নাক বন্ধ?
ঠান্ডা গরমের সামান্য তারতম্যে শিশুর ঠান্ডা লাগতে পারে। আর ঠান্ডায় নাক দিয়ে পানি পড়া বাচ্চাদের মধ্যে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। নাকে শ্লেষ্মা জমা হলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এর রঙ সাদা, হলুদ, সবুজ বা ক্লিয়ার হতে পারে। সাধারণত এটা ঠান্ডা লাগার ফলে হয়ে থাকে। এর ফলে জ্বর, হাঁসি, গলা ব্যথা, পেট খারাপ ও এর সঙ্গে নাক বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় ওষুধ ছাড়াই নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ হয়ে যায়। আবার কোনো সময় ওষুধ দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বা একদিনে সেরে যাবে এমন আশা করাও উচিত নয়। এর জন্য ঘরোয়া কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এতে বাচ্চা আরাম পাবে আর খুব তাড়াতাড়ি নাক দিয়ে পানি পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।
১. স্যালাইন রিনস: স্যালাইন রিনস নাকে জমানো রস গলিয়ে দেয়। এর ফলে সহজেই পানি বেরিয়ে আসে। এটি ব্যবহার করলে নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে আর বাচ্চা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারবে। এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ লবণ দিয়ে সেই পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ঐ পানি ঠান্ডা করে নাকের মধ্যে দিতে হবে। এই সময় বাচ্চার মাথা যেন পেছনের দিকে হেলানো থাকে। পানি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা ভাল্ব সিরিঞ্জের মাধ্যমে টেনে বের করে নিতে হবে। একদিকের নাক আঙ্গুল দিয়ে বন্ধ করে অপর দিকে নাকে একই ভাবে পানি দিতে হবে। দিনে তিন থেকে চার বার এটা করতে পারেন। এতে বাচ্চা অনেক আরাম পাবে। আর নাক দিয়ে পানি পড়াও কমে যাবে। এর ফলে ঠিকভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারবে।
২. ইউক্যালিটাস তেল: বন্ধ নাক ফাঁকা করতে বা নাক দিয়ে পানি পড়া কমাতে এই তেল খুব ভালো কাজ করে। এই তেল বিভিন্ন রকম ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে সহজেই নাকে জমে থাকা শ্লেষ্মা বের হয়ে যায়। এর জন্য এক বালতি গরম পানি নিয়ে এর মধ্যে ৪ থেকে ৫ ফোটা ইউক্যালিটাস তেল নিতে হবে। তারপর সেই পানি দিয়ে বাচ্চাকে গোসল করাতে হবে। কিন্তু ১০ মিনিটের বেশি গোসল করানো যাবে না। একই সঙ্গে কিছু ভার্জিন অয়েল গরম করে ১০ থেকে ১২ ফোঁটা ইউক্যালিটাস তেল মিশিয়ে বাচ্চার বুকে মালিশ করতে পারেন। এতে বাচ্চার নাকে বা বুকে জমে থাকা পানি বের হয়ে যাবে।
৩. তুলসি পাতা: তুলসি পাতায় অ্যান্টি-ব্যক্টেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাস ও অ্যান্টি-ভাইরাস প্রোপারটিস রয়েছে যা নাক দিয়ে পানি পড়ার সমস্যা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও নিয়মিত তুলসি পাতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যারা ছোট বাচ্চা, পাতা চিবিয়ে খেতে পারবে না তাদের রস করে খাওয়াতে পারেন। রসের মধ্যে সমপরিমাণে লেবুর রস, আদার রস ও মধু মিশিয়ে দিতে হবে। দিনে তিন থেকে চার বার এটা খাওয়াতে হবে। এটি ঠান্ডার সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে।
৪. মধু: মধুতে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল বা অ্যান্টি-ফাঙ্গাস উপাদান রয়েছে। যা নাক দিয়ে পানি পড়া কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ঠান্ডা কাঁশি ও গলা ব্যথা কমিয়ে দিতেও সাহায্য করে। এক বা দুই টেবিল চামচ মধু গরম পানিতে মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিন বার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। আবার বাচ্চাকে এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। এটিও নাক দিয়ে পানি পড়া বা ঠান্ডার সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে।
৫. চিকেন স্যুপ: এক বছর বয়সী শিশুকে চিকেন স্যুপ খাওয়ালে অনেক উপকার পাবেন। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি পাবে। আর এতে ঠান্ডাজাতীয় রোগ ব্যাধি অনেক কম হবে। দিনে তিন থেকে চার বার বাচ্চাকে স্যুপ খাওয়াতে পারেন। তবে অবশ্যই ঘরে তৈরি স্যুপ খাওয়াতে হবে। প্যাকেটে যে স্যুপ পাওয়া যায় তা না খাওয়ানোই ভালো।