করোনাকালে শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে যা জানা জরুরি
করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্ব কুপোকাত। করোনাভাইরাস নিয়ে জনমনে তৈরি হওয়া কয়েকটি সাধারণ প্রশ্নের একটি হলে শারীরিক মিলনে কী করোনাভাইরাস ছড়ায়? মনে এমন প্রশ্ন ঘুরলেও যারা মুখ ফুটে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারছেন না, তাদের জন্য প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
করোনার সময়ে শারীরিক মিলন করা যাবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেস’র জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অ্যালেক্স জর্জ এবং বিবিসি রেডিও’র যৌন-বিষয়ক সাংবাদিক অ্যালিক্স ফক্স’র সঙ্গে আলোচনা করেছে বিবিসি। এ আলোচনা নিয়ে বিবিসিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রশ্নটিসহ আনুষঙ্গিক আরও কিছু প্রশ্নের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হলো-
করোনার সময় যৌনমিলন কতটা নিরাপদ?
এ বিষয়ে ডা. অ্যলেক্স জর্জ বলেন, ‘স্বামী-স্ত্রী যদি একই পরিবেশে, একসঙ্গে বাস করেন এবং ঘরের বাইরে না যান, তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুজনের মধ্যে কারও মাঝে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া উপসর্গ দেখা দিলে ঘরের মধ্যেই সম্পূর্ণভাবে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে অন্ততপক্ষে দুই মিটার বা ছয় ফুট দূরত্বে থাকতে হবে । তবে স্বভাবতই এই ব্যবস্থার কার্যকারিতা খুবই সামান্য।’
এ চিকিৎসক বলেন, ‘আবার এটাও মনে রাখতে হবে আপনার সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেই যে সঙ্গীরও সংক্রমণ হয়ে গেছে তা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না। তাই দূরত্ব বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।’
নতুন সঙ্গীর ক্ষেত্রে শারীরিক মিলন কতটা নিরাপদ?
বিবিসির এমন প্রশ্নে ডা. অ্যালেক্স বলেন, ‘এই সময়ে অবশ্যই নতুন সঙ্গীর সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেব। কারণ এক্ষেত্রে ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থেকেই যায়।’
তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে ভাইরাস থাকলেও অনেকের মধ্যে সেই লক্ষণ দেখা দেয় না। তাই আপাতদৃষ্টিতে নিরাপদ মনে হলেও ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।’
চুম্বনে করোনাভাইরাস ছড়ায়?
এ বিষয়ে ডা. অ্যালেক্স জর্জ বলেন, ‘যেকোনো ধরনের শারীরিক সংস্পর্শে আসা ব্যক্তির যদি করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে প্রথমেই নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে। নিজের শারীরিক উপসর্গগুলোর প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। যদি উপসর্গ দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘নিজেদের দায়িত্বশীল হতে হবে। যে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার উচিত সম্প্রতি শারীরিক সংস্পর্শে আসা সবাইকে তা জানানো, যাতে সে সতর্ক হতে পারে, সবার থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারে। অপরপক্ষের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।’
করোনাভাইরাস ছড়ানোর আগে জন্মনিরোধক ব্যবহার করিনি, এখন কি শুরু করতে হবে?
এ বিষয়ে বিবিসির স্বাস্থ্য বিষয়ক সাংবাদিক অ্যালিক্স ফক্স বলেন, ‘কনডমের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো সম্পর্ক নেই। যেসব কারণে কনডম ব্যবহার করা হয়, তা যদি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়, তবে ভাইরাসের আতঙ্কে নতুন করে তা শুরু করা জরুরি নয়।’
জননাঙ্গ স্পর্শ করলে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে?
এ বিষয়ে ডা. অ্যালেক্স জর্জ বলেন, ‘একে অপরের জননাঙ্গ স্পর্শ করা মানেই আপনারা সঙ্গমে লিপ্ত হতে যাচ্ছেন। যৌন সঙ্গমের সময় ভাইরাস পরস্পরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার অসংখ্য উপায় আছে। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে যার সঙ্গে একই ঘরে, একই পরিবেশে বাস করছেন না তার থেকে পুরোপুরি দূরে থাকা।’
এইচআইভি-এইডস আক্রান্তরা কী করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন?
এ বিষয়ে অ্যালিক্স ফক্স বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে ব্রিটেনের এইচআইভি-বিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান টেরেন্স হিগিন্স ট্রাস্টের ডা. মাইকেল ব্র্যাডি সবচেয়ে ভালো উপদেশ দিয়েছেন। তার কথায়, ‘‘যারা এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্ত তারা যদি প্রতিনিয়ত চিকিৎসার মধ্যে থাকেন এবং ‘‘সিডি ফোর’’ অর্থাৎ সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য রক্তে শ্বেত কাণিকার মাত্রা প্রয়োজনীয় পরিমাণে থাকে এবং নির্ণয় করা যায়নি এরকম ‘‘ভাইরাল লোড’’ মানে রক্তে এইচআইভি’র পরিমাণ শনাক্ত করা যায়নি- এরকম পরিস্থিতিতে ধরে নেওয়া যায় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল নয়। আর এক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আলাদা কোনো ঝুঁকি নেই।’
ডা. মাইকল ব্র্যাডির বরাত দিয়ে অ্যালিক্স ফক্স বলেন, ‘যাদের এইচআইভি ‘‘পজেটিভ’’ তাদের উচিত হবে নিয়মিত চিকিৎসা যা চলছে তা চালিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি করোনাভাইরাস রোধে আর সবাই যা করছে সেগুলো মেনে চলা। এবং নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখা।’
সূত্র: আমাদের সময়