ফলে বিষ সাবধান নিজে পড়ুন এবং শেয়ার করে অন্যকে সচেতন করুন !!!
মধু মাস জৈষ্ঠ্য আসতে আরও দিন কয়েক বাকি। মধু মাস আসতে দেড়ি হলেও মধু মাসের ফল এসে গেছে বাজারে। কিন্তু সময়ের আগেই পাকানো এই ফলের বেশির ভাগেই আছে মধুর বদলে বিষ !
সময়ের আগেই ফল পাকিয়ে নেওয়া, রঙ আকর্ষণীয় করা আর ও অনেক দিন পঁচন থেকে রক্ষা করার জন্য এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ফলকে বিষাক্ত করে তুলছে। তাই ফল কেনা ও খাবার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন আপনার কেনা ফলগুলো নিরাপদ কিনা। কেনার সময় সৌন্দর্য না দেখে একটু সচেতন থাকেন, তাহলেই কিন্তু সম্ভব রাসায়নিকমুক্ত ফল চেনা।
কী করে চিনবেন রাসায়নিকমুক্ত ফল ?
প্রথমেই লক্ষ্য করুন যে ফলের গায়ে মাছি বসছে কি-না। ফরমালিনযুক্ত ফলে মাছি বসে না। তবে কিছু কিছু বিক্রেতা অনেক বেশি ধূর্ত। তারা ফলের গায়ে চিনির সিরার হালকা প্রলেপ দিয়ে রাখে। ফলে ফরমালিন থাকা সত্ত্বেও ফলের গায়ে মাছি বসে। তাই শুধু মাছি দেখেই নিশ্চিত হবেন না যে, ওই ফল বা আমে ফরমালিন নেই।
আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছ পাকা হলে লক্ষ্য করে দেখবেন যে আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর। কার্বাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের ত্বক হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আম গুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।
গাছপাকা আমের ত্বকের রঙেথাকবে ভিন্নতা। বোঁটার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কার্বাইড দেওয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেওয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।
হিমসাগর ছাড়াও আরও নানান জাতের আম আছে যা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এইসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।
আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে গন্ধ অনুভব করুন। গাছ পাকা হলে অবশ্যই বোঁটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেওয়া আম হলে কোনও গন্ধ থাকবে না, কিংবা রসুনের ঝাঁঝালো বাজে গন্ধ থাকবে।
আম মুখে দেওয়ার পর যদি দেখেন যে কোনও সৌরভ নেই, কিংবা আমে টক/ মিষ্টি কোনও স্বাদই নেই, বুঝবেন যে সে আমে ওষুধ দেওয়া।
আম কিনে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেওয়া আমে এ মিষ্টি গন্ধ থাকবেই না।
লিচুর রঙ কাঁচা অবস্থায় হবে সবুজ, পেকে গেলে ইট রঙের। এখন গাছে থাকা অবস্থায় রাসায়নিক দেওয়ার কারনে তার রং হয়ে যায় ম্যাজেন্টা। এই ধরনের লিচু দেখতে ভালো দেখায়, কিন্তু খেতে নয়।তাই ম্যাজেন্টা রং এর লিচু কিনবেন না ।
স্বাভাবিক ফল পেকে যাওয়ার পর ফ্রিজে রাখা না হলে স্বভাবতই পঁচে যাওয়া শুরু করবে। কিন্তু ফরমালিন যুক্ত ফল ফ্রিজে না রাখলেও পঁচবে না।
অনেক সময় সচেতনতার অভাবে কিংবা উপায়হীন হয়ে রাসায়নিক মিশানো ফল আমাদের কিনতেই হয়।
আসুন জেনে নিই- ফলকে কিছুটা রাসায়নিক মুক্ত করা যায় কিভাবে-
যে কোনো ধরনের রাসায়নিকই দেওয়া হোক না কেন খাওয়ার আগে ফলগুলো পানিতে ১ ঘন্টা বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি সময় ডুবিয়ে রাখতে হবে।সবচেয়ে ভালো হয় ভিনেগার ও পানির মিশ্রণে ১৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে। তাতে শতকরা ১০০ ফরমালিন নষ্ট হয়ে যায় ।
কার্বাইডের ও ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক:
অতিমাত্রায় কার্বাইড গ্রহণ করলে ফুসফুসে পানি জমে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ক্যালসিয়াম কার্বাইড মুখ,গলা এবং কোমল ঝিল্লি পর্দায় প্রদাহ সৃষ্টি করে। এসব রাসায়নিক চোখের কর্ণিয়া ও রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
তাৎক্ষণিকভাবে ফরমালিন,কার্বাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, বমি,ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে।এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে।গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।