করোনা রুখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রতি দিন খান এই ভেষজ জল
গরম বাড়ছে, সঙ্গে রয়েছে করোনাভাইরাসের দাপট। কাজেই এই সময় শরীরে জলশূণ্যতার আভাষ পেলে, ক্লান্তি, বিরক্তি যেমন চেপে ধরবে, শরীরের অন্য ক্ষতির পাশাপাশি ক্ষতি হবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও। এই মুহূর্তে করোনা-লড়াইয়ের একমাত্র সম্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অতএব কোনও বিশেষ রোগের কারণে কড়াকড়ি না থাকলে দিনে কম করে আড়াই-তিন লিটার জল খান। খাটাখাটনি বা ব্যায়াম বেশি করলে খেতে হবে আরও বেশি।
এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা তেষ্টা পেলেও সামান্য দু’-এক গ্লাস জল ও চা-কফি-নরম পানীয় দিয়ে সে তেষ্টা মিটিয়ে নেন। আসলে এঁরা সবাই কম-বেশি ডাইইউরেটিক। অর্থাৎ জল বেশি খেলে ইউরিনের মাধ্যমে বেশি জল টেনে বার করে শরীরকে ঠেলে দেয় জলশূন্যতার দিকে। জলের এমনিতেই কোনও বিকল্প নেই। দিনে ৮-১০ গ্লাস খেতেই হবে। সব সময় স্বাদহীনে মন না ভরলে কিছুটা স্বাদ, রং ও সুগন্ধ মিশিয়ে দিতে হবে। প্রকৃতিতে এমন অনেক উপাদান আছে যাতে স্বাদ-গন্ধের পাশাপাশি আছে অঢেল পুষ্টি ও রোগ সারানোর ক্ষমতা। সে সব মেশাতে পারলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় জল খাওয়ার বিরক্তি যেমন কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।
সেই কোন যুগে চরক বলে গিয়েছিলেন ভেষজ জলের কথা। যাকে বলে ‘হিম’ বা ‘শীত’। পরে ‘ভাব সংহিতা’ বইয়ে আচার্য ভাবমিশ্র তার নাম দেন ‘ঊষাপান’। বিভিন্ন উপকারি ভেষজ ও মশলা রাতভর ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জল খেলে কী কী উপকার হতে পারে তার ব্যখ্যাও দিয়েছিলেন তাঁরা।
আয়ুর্বেদিক নানা উপাদান মিশিয়ে খান জল।
আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ জানালেন, “বিভিন্ন রোগ সারাতে যেমন উষাপানের ভূমিকা আছে, আবার জলের স্বাদ-গন্ধ বাড়ানোর পাশাপাশি কিছু বিশেষ পুষ্টি যোগানোর ক্ষেত্রেও কয়েক ধরনের ভেষজ-জল বিশেষ ভাবে কার্যকর। ঠিক পদ্ধতিতে বানিয়ে ঠিক সময়ে খেলে সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও উন্নতি হয়।”
রোগমুক্তিতে ভেষজ জল
• এক চামচ ত্রিফলা অর্থাৎ শুকনো আমলকি, হরিতকি ও বহেরা নামে তিনটি ফলের চূর্ণ এক গ্লাস জলে সারা রাত ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে পেট পরিষ্কার হয়। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণের জন্য এই মিশ্রণ প্রদাহ কম রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফ্লু ঠেকাতে কাজে আসে। উষ্ণ জলে গুলে খেলে গলা ব্যথার প্রকোপ কমে। এর সঙ্গে এক চিমটি দারচিনির গুঁড়ো ও এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে স্বাদ-গন্ধের যেমন উন্নতি হয়, ভারী হয় উপকারের পাল্লাও।
• এক চামচ মেথি শুকনো কড়াইয়ে ভেজে, গুঁড়ো করে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবিটিস ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, এলডিএল-এর প্রকোপ কমে। প্রদাহ কমে বলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। হজমও ভাল হয়।
• মৌরির জল বানাতে পারেন দু-’ভাবে। হয় এক গ্লাস জলে এক চামচ মৌড়ি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে খান। নয়তো এক গ্লাস জল ফুটিয়ে তাতে এক চামচ মৌরি দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন ২-৩ মিনিট। তারপর ছেঁকে চায়ের মতো খান। স্বাদ ও গুণ বাড়াতে অল্প লেবুর রস ও এক চামচ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। ঠান্ডা করেও খেতে পারেন। সুগন্ধী এই জল খেলে নিমেষে তরতাজা লাগে। পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজমের উপসর্গ কমে কিছুটা। শরীরে জমা জল বেরনোর সুরাহা হয়। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবিটিসের প্রকোপও কম থাকে।
• গরম জলে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে বানান ধনের জল। হজমের যেমন উপকার হবে, কম থাকবে প্রদাহের প্রকোপ। বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
• ১ চা চামচ সাদা জিরে, দেড় কাপ জল, আধ চা চামচ মধু নিন। কড়াইতে জিরে হালকা করে ভেজে দেড় কাপ জল দিয়ে ৩-৪ মিনিট ফোটান। ঠান্ডা হলে ছেঁকে জলটা খেয়ে নিন। এতে ওজন যেমন কমবে, হজম শক্তিও বাড়বে।