জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ (পিআইডি) প্রতিরোধে করণীয়
পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ) হচ্ছে জরায়ু ও ডিম্বনালীতে জীবাণুর সংক্রমণ। মাঝে মাঝে এটি ডিম্বাশয়কেও আক্রান্ত করতে পারে। পিআইডির একটি কমন কারণ হচ্ছে Chlamydia and gonorrhoea নামক জীবাণুর সংক্রমণ। এছাড়া আন্যান্য কিছু জীবাণুও এই রোগের কারণ হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌন বাহিত রোগের মাধ্যমে এই জীবাণুর প্রবেশ ঘটে।এছাড়াও গর্ভপাত, জরায়ুর কোনো অপারেশন, অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদির মাধ্যমে জীবাণুর প্রবেশ ঘটতে পারে।
কিছু লক্ষণ দেখে এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগে আক্রান্তদের সনাক্ত করা যায়।
এ রোগের কিছু পরিচিত লক্ষণ হলো
* তলপেটে ব্যথা, জ্বর ও এবনরমাল স্রাব
* মাসিকের অনিয়মিত হওয়া, এসময় অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ ও পেটে ব্যথা, সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া ।
এই লক্ষণগুলোর তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। এমনকি অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও আপনি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ এ রোগের জীবাণুগুলো অনেক সময় কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই জরায়ুর মুখে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
এ রোগ নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষার দরকার হয়।জরায়ুর মুখ বা মুত্রনালী থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষা করে জীবাণুর উপস্থিতি নির্নয় করা যেতে পারে।এছাড়া সংক্রমণের লক্ষণ বোঝার জন্য রক্ত, ইউরিন পরীক্ষা ও পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ল্যাপারস্কপি পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয় এবং একই সময় চিকিৎসাও সম্ভব।
এর চিকিৎসা কী?
প্রাথমিক অবস্থায় এন্টিবায়োটিক ও পেইন কিলার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।এ ক্ষেত্রে ওষুধগুলো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় খেতে হবে। একই সাথে হাজব্যান্ড বা পার্টনারের চিকিৎসাও জরুরি। অন্যথায় বার বার জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে সার্জারি করার দরকার হতে পারে যেমন, ডিম্বনালী সংক্রমিত হয়ে পুঁজের সৃষ্টি হলে এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায়। এছাড়া যাদের বয়স বেশি তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণের তীব্রতা কমানোর জন্য ডিম্বনালী এবং জরায়ু সার্জারি করে অপসারণ করা হয়।
কেন সময়মতো চিকিৎসা করা জরুরি?
এর চিকিৎসা সময়মতো না করালে কিছু দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
এগুলো হচ্ছে-
দীর্ঘদিন ধরে তলপেট ব্যথা, মাজা ব্যথা, ডিম্বনালীর পথ বন্ধ হয়ে বা জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়ে সন্তান ধারনে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা,
* ডিম্বনালীর পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে একটোপিক প্রেগনেন্সি (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) হওয়ার আশঙ্কা,
* প্রজননতন্ত্র সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে গর্ভপাত, সময়ের আগে বাচ্চা প্রসব এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মদানের আশঙ্কা।
কিভাবে প্রতিরোধ সম্ভব
এটি একটি প্রতিরোধযোগ্য সমস্যা। সচেতনতা আপনাকে এ সমস্যায় আক্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক ও কনডম ব্যাবহার জীবাণুর সংক্রমণ থেকে জরায়ুকে রক্ষা করে। যত্রতত্র এমআর (গর্ভপাত) করানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এমআর বা ডিএন্ডসি করার দরকার হলে রেজিস্টার্ড ডাক্তার দিয়ে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে করতে হবে।
এ রোগের লক্ষণ দেখা দেবার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতার হার অনেকাংশে কমে যায়।
অ্যাসোসিয়েট কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি)
ইম্পিরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম।
সুত্র: নয়াদিগন্ত