১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শনিবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

ঘুমোলে বাড়ে ইমিউনিটি: ঘুম এলে তবে তো

হাতে প্রচুর সময়। ঘুমোলেই হয়৷ কিন্তু সে আসবে তবে তো! দু-চোখের পাতা এক হলেও, খুলে যায় থেকে থেকে। নির্ঘুম রাতের ক্লান্তিতে না হয় ব্যায়াম, না হয় ঠিকঠাক খাওয়া। আর এর ফলে ইমিউনিটি কমে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

“অবশ্যই কমে৷” জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়। “কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। শরীরে যখনই কোনও বড় পরিবর্তন হয়, মানসিক চাপ বাড়ে, ঘুম কমে যায়, দুর্বল হয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা৷ রোগ সারতে চায় না৷ উল্টো দিকে, যখন স্ট্রেস-টেনশন তত নেই, তখন অসুস্থ হলে কিন্তু ঘুম বাড়ে৷ কারণ শরীর জানে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে গেলে তার সৈন্য-সামন্তকে তরতাজা হতে হবে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে৷ ঘুম হল যার অন্যতম মাধ্যম।”

ঘুম না এলে?

“এই মুহূর্তে ঘুম না আসার সবচেয়ে বড় কারণ হল স্ট্রেস।” জানালেন মনোচিকিৎসক অমিতাভ মুখোপাধ্যায়৷ “কিন্তু ভেবে দেখুন, স্ট্রেস তো রোগের আশঙ্কাতেই৷ যদি রোগ হয় তো কী হবে— ভেবে ভেবে যে ঘুম নষ্ট করছেন, তাতে তো আরও ক্ষতি হচ্ছে৷ কাজেই বাস্তবকে বুঝুন৷ স্ট্রেস নিজে থেকে কমাতে না পারলে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন৷ কিন্তু ঘুমের সঙ্গে সমঝোতা করবেন না৷”

অর্থাৎ ঘুমোতেই হবে৷ তার জন্য কী কী করতে হবে সে সব নিয়ে আলোচনা হবে৷ তার আগে বরং দেখে নেওয়া যাক, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ঘুম ঠিক কী ভাবে কাজ করে৷

ঘুম ও শরীরের প্রতিরক্ষা

কোনও ক্ষতিকর বস্তু, তা সে ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস হোক কি প্রোটোজোয়া-ফাংগাস বা অন্য কিছু, শরীরে ঢুকলে তৎপর হয়ে ওঠে শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শক্তি৷ সৈন্য-সামন্ত পাঠায় তাকে ধ্বংস করতে৷ তার মধ্যে প্রধান হল রক্তের শ্বেত কণিকা বা টি সেল৷ সরাসরি সামনে থেকে হই হই করে যুদ্ধ করে সে৷ কিন্তু যদি কোনও কারণে স্ট্রেস বাড়ে, ঘুম কমে যায়, এবং তা বেশ কিছুদিন ধরে চলতে থাকে, ভাটা পড়ে তার এনার্জিতে৷ গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যায় তার৷ আর সেই অবসরে প্রতিরোধের বেড়া ডিঙিয়ে সংক্রমণ ঢুকে পড়ে শরীরের আনাচে-কানাচে৷

শুধু এটুকু নয়, ঘুমের সঙ্গে যোগ আছে আর এক গুরুত্বপূর্ণ সৈনিকের৷ তার নাম প্রোটিন সাইটোকাইন, যার কাজ ঝড়ের বেগে কোষে কোষে বিপদের সংকেত পৌঁছে দেওয়া, যাতে তারা প্রস্তুত থাকে৷ কিন্তু ঘুমের যে চারটে পর্যায় আছে, সে সব পর্যায় যদি ৭-৮ ঘণ্টার নিশ্ছিদ্র ঘুমে বার পাঁচেক অন্তত ঘুরে-ফিরে না আসে, সাইটোকাইনের উৎপাদন কমে যায়৷ ফলে কী ঘটতে পারে, তা অনুমেয়।

ঘুম ভাল না হলে লড়াইয়ের গেমপ্ল্যানও সঠিকভাবে বানানো যায় না৷ ঠিক ফুটবল খেলার মতো৷ ভাল কোচ যেমন প্রথমার্ধের খেলা দেখে হাফটাইমে বিপক্ষ টিমের শক্তি ও নিজের দলের দুর্বলতা বুঝে নতুন করে গেমপ্ল্যান সাজান, শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও তাই৷ সারাদিন যে লড়াই হয়েছে, কী ভাবে তাকে আরও উন্নত করা যায়, সেই প্ল্যান সে ছকে নেয় ঘুমের সময়ে৷ তাকে সেই সময়টুকু না দিলে লড়াইটা অনেক সময়ই জোরদার হয় না৷ অতএব, ঘুম বিনে পথ নেই৷

কী ভাবে আসবে ঘুম

·        চাই একটু ডিসিপ্লিন৷ ঘুম পাচ্ছে অথচ হাতের কাজটা সেরে নিই বা সিনেমা শেষ হলে ঘুমোতে যাবো, এখন অন্তত সে সব চলবে না৷ ঘুম পাওয়া মাত্র বিছানায় যান৷

·        শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাঁটা বা টিভি দেখা চলবে না৷ হতে পারে আপনার ঘুম না আসার সবচেয়ে বড় কারণ সেটাই৷ না, আতঙ্কের খবর দেখছেন বলে নয়। সেটা একটা কারণ হতেই পারে। আর একটি বড় কারণ হল নীল আলো, যা মোবাইল বা টিভির পর্দা থেকে এসে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদন কমিয়ে দেয়৷ কাজেই ঘুমোনোর অন্তত দু-ঘণ্টা আগে মোবাইল ও টিভি থেকে দূরে থাকুন৷ বই পড়া, গান শোনা, হাঁটাহাটি, মন ভাল করা আড্ডা, সব চলবে, কিন্তু মোবাইল ও টিভি নয়৷

·        শুতে যাওয়ার অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা আগে থেকে চা-কফি-কোলা-চকলেট বাদ৷ কারণ এ সবে উপস্থিত ক্যাফেইন আপনাকে ঘুম পাড়ানোর বদলে আরও সজাগ করে দেবে৷

·        শুতে যাওয়ার আগে মন হালকা করতে হবে৷ “এই পরিস্থিতিতে কাজটা খুব সহজ নয়৷” জানালেন ডা. অমিতাভ মুখোপাধ্যায়৷ “কাজেই স্নান করে নেওয়া, হাঁটা, গান শোনা ইত্যাদি কাজে নাও লাগতে পারে৷ ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারলে উপকার পাবেন৷ আর পাবেন জার্নালিং করলে৷ অর্থাৎ মনে যা ভাবনা আসছে, লিখে ফেলুন৷ তার পর যুক্তি দিয়ে একে একে ভুল আবেগকে খণ্ডণ করুন৷আপনার যতটুকু করার করুন, বাকিটা ছেড়ে দিন ভাগ্যের হাতে৷ তার পর মন হালকা হলে শুতে যান৷ অনেকের এ রকম পরিস্থিতিতে কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হয়৷ দরকার হলে তাই করুন৷”

·        আগে হয়তো সারাদিন কাজকর্মের পর এত ক্লান্ত থাকতেন যে যেখানে-সেখানে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন, এখন এই শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় তেমনটা নাও হতে পারে৷ কাজেই বিছানা যেন আরামদায়ক হয়, সে দিকে খেয়াল রাখুন৷

·        ঘরের তাপমাত্রাও যেন ঠিকঠাক থাকে৷ নিয়মিত সার্ভিসিং না হলে এসি একটু কমই চালাতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ দূষণের ভয় এখন কম, তাই জানালা খুলে ঘুমোতে পারেন। ফ্যান চালিয়েও অস্বস্তি হলে, হালকা করে এসি চালাতে পারেন৷ দরকার হলে গলা ও মাথায় কাপড় জড়িয়ে নিন৷ কারণ এখন সাধারণ সর্দি-কাশিও এড়িয়ে যাওয়া দরকার৷ না হলে কমতে পারে প্রতিরোধ ক্ষমতা৷

·        ঘুমের রুটিন ঠিক রাখুন৷ অর্থাৎ ঘুম হোক বা না হোক, শুতে যাওয়া ও সকালে ওঠার সময় যেন ঠিক থাকে৷ তাতে শরীরের যে নি্জস্ব ঘুমের ঘড়ি, ঘুমের ছন্দ, যাকে বলে সারকাডিয়ান রিদম, তা ঠিক থাকবে৷ আস্তে আস্তে পরিস্থিতির উন্নতি হবে৷

·        দুঃস্বপ্ন দেখা এ সময় খুব কমন৷ তাকে খুব একটা গুরুত্ব দেবেন না৷ কাজেকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন৷

·        খাটাখাটনি করুন৷ হাঁটুন, ঘরের কাজ করুন, ব্যায়াম করুন৷ স্ট্রেস যেমন কমবে, ক্লান্ত শরীরে ঘুমও ভাল হবে৷

সূত্র: আনন্দ বাজার।

Comments

comments