মাত্র তিন উপায়ে সহজেই বাড়ান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
আমাদের শরীর সব সময়ই পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এই প্রচেষ্টাই রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন। আর যাদের এই ইমিউন সিস্টেম দুর্বল তাদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভবনাও বেশি। মারণ ভাইরাস করোনা মোকাবেলায় রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন শক্তিশালী করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে কিভাবে ইমিউনিটি বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবেন? মাত্র তিনটি উপায়েই করোনা মোকাবেলায় জন্য রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া বা ইমিউন শক্তিশালী করতে পারবেন। জেনে নিন-
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে শারীরিক পরিশ্রমের সম্পর্ক আছে। একজন মানুষ যখন শারীরিক পরিশ্রম করে তখন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করে। শরীরের মাংসপেশি এবং হৃদযন্ত্র অনেক কার্যকরী হয়। একই সঙ্গে শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীরের দূরতম প্রান্ত পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছবে। তখন শরীরের কোষগুলোতে শক্তি উৎপাদন শুরু হবে। সুতরাং প্রতিদিন শারীরিক পরিশ্রমের সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপ্পালাচিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটির হিউমান পারফরমেন্স ল্যাবরেটরির এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট ডেভিড নিয়মান বলেন, যারা নিয়মিত অনুশীলন বা ব্যায়াম করেন তাদের মৌসুমী সর্দি এবং ফ্লুর মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। যারা নিয়মিত ২০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম যেমন, হাঁটা, সাইক্লিং বা শারীরিক পরিশ্রম করেন তারা খুব কমই অসুস্থ হবেন।
বেশি করে খাবার খান, তবে…
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেতে হবে। শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। মূলত পাঁচ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এগুলো হলো, ভিটামিন-এ, সি, ই, বিটা-ক্যারোটিন, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা লেবু, করলা, বেগুনি বা লাল বাঁধাকপি, বিট, ব্রকোলি, গাজর, টমেটো, মিষ্টি আলু, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, পালংশাক, সবুজ শাক, কমলালেবু, পেঁপে, আঙুর, আম, কিউই, আনার, তরমুজ, বেরি, জলপাই খান বেশি করে।
ডেভিড নিয়মান বলেন, আপনি যদি খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন পান তাহলেই রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তিনি ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই বাড়িয়ে দিয়ে ক্রীড়াবিদদের ওপর গবেষণা চালিয়েছিলেন। তিনি দেখেন ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই সি বাড়িয়ে দেওয়া কারণে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা পূর্বের তুলনায় বেড়ে যায়।
মাঝে মাঝে মস্তিষ্ককে বিরতি দিন
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মাঝে মাঝে মস্তিষ্ককে বিরতি দিন। পর্যাপ্ত ঘুমাতে পারেন মস্তিষ্ককে শান্ত রাখতে। তবে হতে হবে ভালো ঘুম। অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে কেউ বিরক্ত করলে চলবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেল্ডন কোহেন এক গবেষণায় দেখতে পান, যারা রাতের সাত ঘণ্টার নিচে ঘুমান, তাদের ঠান্ডা জাতীয় রোগ বেশি হয়। তাই তিনি সাত ঘণ্টার উপরে ঘুমানোর পরামর্শ দেন।
কাজের চাপও কমাতে হবে। কাজের চাপ কমিয়ে বিরতি দিতে হবে মস্তিষ্ককে। অধ্যাপক শেল্ডন কোহেন আরো একটি গবেষণায় দেখতে পান, যারা সবচেয়ে বেশি কাজের চাপের মধ্যে থাকেন; তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় ঠান্ডা জাতীয় রোগের লক্ষণ। এই প্রভাবের একটি কারণ হলো স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাটির কিছু অংশকে দমিয়ে রাখে। তাই তিনি চাপ মুক্ত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।