৪০ বছরের আগে ঋতুবন্ধ হলে বিপদ
মেয়েদের ঋতুচক্র শুরু হয় মোটামুটি ১১ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে এবং ঋতুবন্ধ হয় ৪০-৪৫ বছর বয়সে। ঋতুচক্র রিপ্রোডাকশন বা প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যতদিন ঋতুচক্র চলে ততদিন পর্যন্ত একজন নারী স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানধারণ করতে পারেন। ইদানীং বিশেষ ফার্টিলিটি চিকিৎসার সুবাদে অনেক ক্ষেত্রে ঋতুবন্ধের পরেও সন্তানের জন্ম সম্ভব কিন্তু সেটা হলেও মেনোপজ বা ঋতুবন্ধ একটি প্রাকৃতিক ঘটনা যা এড়ানো অসম্ভব, তা ঘটবেই।
ঋতুবন্ধের পরে নারীদের নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অনেকের মধ্যে এক ধরনের ডিপ্রেশন কাজ করে কারণ মেনোপজের পরে শরীরের আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। অন্যদিকে সমবয়সি পুরুষ সঙ্গীর কিন্তু তখনও চাহিদা তুঙ্গে থাকে। তাই সঙ্গীকে তৃপ্তি দিতে না পারার অবসাদে অনেকেই গভীর মনের অসুখে ভোগেন। কিন্ত মনের থেকেও অনেক বড় প্রভাব পড়ে শরীরে।
ঋতুবন্ধের পরে নারীদের হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ে, একথা অনেকেরই জানা। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, যদি ৪০ বছরের আগে মেনোপজ হয়ে যায় তবে হাড় অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায় এবং অল্প একটু ধাক্কা বা পড়ে যাওয়াতেই হাড়ে ফ্র্যাকচার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গত কয়েক দশক ধরেই তিরিশ বছরের বেশি বয়সি নারীদের মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। এছাড়া মেনোপজকে যতদিন সম্ভব ঠেকিয়ে রাখতে হরমোন থেরাপিও করেন বহু নারী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি উইমেনস হেলথ ইনিশিয়েটিভ ট্রায়ালে সম্প্রতি ২২ হাজার নারীর উপরে একটি সমীক্ষা করা হয়। সেই সমীক্ষাতেই দেখা গেছে, ৪০ বছরের কমবয়সি যেসব নারীরা এখন ঋতুবন্ধ পর্যায়ে রয়েছেন, তাদের হাড় ভিটামিন ডি-ক্যালসিয়াম ইনটেক বা হরমোন ট্রিটমেন্ট করার পরেও অপেক্ষাকৃত দুর্বল। অর্থাৎ একবার ঋতুবন্ধ ঘটে গেলে তার পরে যতই বাইরে থেকে সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হোক না কেন, হাড় দুর্বল হবেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হোক বা ভারত, এখন ৪০ বছরের নারীরা ঘরে-বাইরে অত্যন্ত বেশিমাত্রায় কর্মক্ষম থাকেন। তাই ৪০ বছরের আগে মেনোপজ হলে যারা কাজেকর্মে অত্যন্ত অ্যাকটিভ, তাদের হাড়ে গুরুতর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সম্প্রতি ‘মেনোপজ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণা বিষয়ক একটি প্রবন্ধ।
নর্থ আমেরিকান মেনোপজ সোসাইটির সদস্য জোয়ান পিংকারটনের বক্তব্য, তিরিশের কোঠার মাঝামাঝি থেকেই তাই অত্যন্ত সচেতন হতে হবে মেয়েদের। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টস খেতে তো হবেই, কারণ যতটা সম্ভব হাড়কে শক্তপোক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
পিংকারটন জানান, অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট খেলে আবার শরীরে অন্য সমস্যা হতে পারে। তাই কারও কথা শুনে বা কোনও বিজ্ঞাপন দেখে নয়, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই হরমোন থেরাপি নিতে হবে বা সাপ্লিমেন্টস খেতে হবে।