রমজানে গর্ভবতী মায়ের সতর্কতা
রমজান মাসে গর্ভবতী মায়েদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।তানা হলে হতে পারে অনেক বড় বিপদ। রমজান মাসে সবাই চায় রোজা রাখতে তাই গর্ভাবস্থায় রোজা রাখতে হলে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।চিকিৎসকরা বলেন গর্ভাবস্থার মাঝের তিন মাসে মায়েরা বেশ একটু সুস্থ বোধ করেন। এসময় সাধারণত তাদের বমি হয় না এবং খেতেও কোনো অসুবিধা দেখা দেয় না। তাই এসময়টায় আর অন্য কোনো অসুস্থতা না থাকলে গর্ভবতী মা রোজা রাখতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস অনেকেরই বমি বমি ভাব, মাথা ঘুরানো বা খাবারে অরুচি থাকে। ফলে খেতে না পারা আর বার বার বমির কারণে অনেকেরই ওজন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস একজন গর্ভবতী নারীর রোজা না রাখাই ভালো।
তাছাড়া গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই এ সময় মায়ের পুষ্টি ও গর্ভস্থ শিশুকে গ্লুকোজসহ অন্যান্য পুষ্টির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
শেষের তিন মাসে গর্ভস্থ শিশুসহ জরায়ুর উচ্চতা বাড়ার কারণে গর্ভবতী মায়ের অসুবিধা আরো একটু বেড়ে যেতে পারে।এসময় নিঃশ্বাস ছোট আর ঘন ঘন হয়। তাছাড়াও খাবার হজম হতে দেরি হয়, গলা-বুক জ্বালাপোড়া বেড়ে যায় এবং স্বাভাবিক নড়াচড়া ধীর হয়ে আসে। তবে গর্ভবতী মা যদি অস্বস্তিবোধ না করেন এবং স্বাভাবিকভাবেই খাওয়া-দাওয়া করতে পারেন এবং সেই সাথে যদি তার শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি না হয় তবে তিনি ইচ্ছা করলেই রোজা রাখতে পারেন।
তাই গর্ভবতী মা যদি রোজা রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ দিনে একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে ছয়বার খাবার গ্রহণ করা উচিৎ। তাই যেহেতু রোজার সময় এই খাবারের সময়ের হেরফের হয়, তাই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।
সেহরির সময় একজন গর্ভবতী মা স্বাভাবিক মানুষের খাবারের তালিকা অনুযায়ী খাবার খাবেন। তবে এসময় ক্যালোরি ও আঁশযুক্ত খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এসময় পানিশূন্যতা ও শরীরে লবণের পরিমাণ কমে যাবার প্রবণতা এড়াতে পানি ও তরল খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে।
যাদের বুক জ্বলা বা গ্যাসের সমস্যা আছে, তারা এ সময় এ জাতীয় খাবার পরিহার করবেন। অবশ্যই যেকোনো ফল যেমন- আম, কলা ইত্যাদি সেহরির মেন্যুতে রাখবেন। ফল ও আঁশযুক্ত খাবার ধীরগতিতে পরিপাক হয় বলে ক্ষুধা কম লাগবে। কিন্তু কখনোই সেহরি না খেয়ে রোজা রাখা যাবে না।
ইফতারে খেজুর, ফলের রস, চিঁড়া-দই ও ফল খেতে হবে। এসকল খাদ্যের দরুণ রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিক থাকবে। দুধ ও দুধের তৈরি এসব খাবার রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার প্রবণতা কমায়। তাই দুধ, লাচ্ছি, মাঠাও এসময়ের পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় পড়ে।
এছাড়াও তাজা ফল বা সবজির সালাদ, স্যুপ ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখতে হবে। ইফতারে একসাথে বেশি খাবার খাওয়া যাবে না। অল্প অল্প করে বার বার খাবার খেতে হবে। আর অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার যেমন- পিঁয়াজু, বেগুনি পরিহার করাই ভালো।
রাতের খাবারে মাছ, মাংস, নানা জাতের ডাল ইত্যাদি আমিষ খাবারের সঙ্গে সবজির সুষম সমন্বয়ে রাতের খাবার খেতে হবে। ঢেকিছাঁটা লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি খাওয়া ভালো। গুরুপাক, অতিরিক্ত তেল-ঝাল-মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে প্রচুর পানি পান করতে হবে।
কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলুন:
. রোজার সময় চিকিৎসকের দেয়া ওষুধগুলো সময়মত খাওয়া হয় না। তাই আগে থেকেই আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তিত নিয়ম জেনে নিন।
. গর্ভকালীন যাদের ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাডপ্রেসার থাকে তাদের জন্য রোজা না থাকাটাই ভালো।
. অনেকেই আছেন যারা ইফতার করে আর রাতের খাবার খেতে চান না। গর্ভাবস্থায় এটা একদমই করবেন না। মনে রাখুন, আপনার গর্ভের শিশুটি আপনার দ্বারাই পুষ্টি পাচ্ছে। তাই সময় মতো রাতের খাবার খেয়ে নিন।
. গর্ভাবস্থায় বাইরের ইফতার না খাওয়াই ভালো। বাসায় তৈরি হালকা খাবার খান।
. সারাদিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিন।
. রাতের খাবার পর বেশি রাত জেগে থাকবেন না। সময়মতো ঘুমিয়ে পড়ুন। কারণ এই সময় পর্যাপ্ত ঘুম খুবই দরকার।
. রোজা থাকাকালীন কোনো রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে দেরি না করে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।