বুকে কেন পানি জমে? এর সঠিক চিকিৎসা কি?
অনেক সময়ই আমরা শুনি যে অমুকে শ্বাস কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং তার ফুসফুস থেকে ১ লিটার বা দেড় লিটার পানি বের করে দেবার পর সে সুস্থ হয়ে গেছে। এসব খবর আমাদের কাছে চাঞ্চল্যতা সৃষ্টি করলেও প্রকৃতপক্ষে ঐ পানি কিন্ত ফুসফুস থেকে বের করা হয়না, আর বের করা ঐ পানিও ফুসফুসে জমা পানি না। তা হলে আসলে ওটা কোথায় থাকে? ফুসফুসকে যে পাতলা আবরনী বা প্লুরা ঘিরে রাখে তাতেই জমা হয় ঐ পানি, আর এই রোগটির নাম হলো প্লুরাল ইফিউশন। তাহলে কি ফুসফুসে কখনোই পানি জমেনা? হ্যা, ফুসফুসেও পানি জমে তবে সেই রোগটিকে বলে পালমোনারি ইডেমা (Pulmonary Edema) আর সেই পানি কিন্ত এভাবে বের করা আনা সম্ভব না, তাই পাঠক গন সঠিক ধারনা টি মনে গেথে নিয়ে আর বিভ্রান্ত হবেন না বলেই বিশ্বাস করি।
ফুসফুসের নিজস্ব কিছু রোগের কারণে ফুসফুসের আবরণীতে পানি জমে। আবার ফুসফুসের সঙ্গে কোনো
সম্পর্কই নেই—এমন কয়েকটি কারণেও ফুসফুসে পানি জমে। যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ফুসফুসের ক্যানসার হলে এ রকম পানি জমা স্বাভাবিক। আবার হৃদরোগ, যকৃৎ ও কিডনির অকার্যকারিতা, অপুষ্টির কারণেও পানি জমতে পারে। ফুসফুসের আবরণীতে পানি জমলে রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকের পাঁজরের ওঠানামা কমে যায়। পাশাপাশি বুকে ব্যথা, কাশি ইত্যাদি থাকতে পারে।
বুকের এক্স-রে করালে ফুসফুসের ইফিউশন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে পানির পরিমাণ খুব কম হলে, অর্থাৎ ফুসফুসে অল্প পরিমাণ পানি জমলে আলট্রাসনোগ্রাম বা সিটিস্ক্যান করার প্রয়োজন হতে পারে। এ ছাড়াও সিরিঞ্জ দিয়ে পানি বের করে এনে নানা রকম পরীক্ষা করে দেখা হয়। অনেক সময় এ রোগে বায়োপসি করারও প্রয়োজন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে রোগীর কি রোগের কারনে এই সমস্যা হয়েছে তা নিশ্চিত করেন এবং তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা শুরু করেন। যেমন টিবি হবার কারনে এমনটি হলে রোগীকে টিবির ওষুধ দেন আবার ক্যান্সার এর কারনে এমনটি হলে ক্যান্সার এর চিকিৎসা শুরু করতে হয়। তেমনি ফুসফুস এর বাইরে অন্য কোনো রোগের জন্য এমন সমস্যা হলে সেই রোগের চিকিৎসা করালে প্লুরাল ইফিউশন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
কারণ দূর করাই হলো এই পানি জমা সমস্যার মূল চিকিৎসা। অতিরিক্ত পানি জমে গেলে রোগীকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য পানি বের করে নেওয়া হয়। বারবার পানি জমলে অনেক সময় বিশেষ পদ্ধতি, যেমন প্লুরোডেসিস, টিউব থোরাকোস্টোমি করা হয়। পানির কারণে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হলে অনেক সময় অস্ত্রোপচার (ডিকরটিকেশন অব লাং) করতে হয়। পানি জমার কারণ নির্ণয় ও সমাধান না করলে নানা জটিলতা হতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে প্লুরায় পানি থাকার পরও যদি চিকিৎসা শুরু না হয়, তাহলে প্লুরায় শক্ত আবরন পড়ে গিয়ে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। তাই কারো প্লুরাল ইফিউশন হলে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
ডা. মো. আজিজুর রহমান বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
—- ওয়ানবিডি ডট নিউজ