ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চাইলে মাংস খাওয়া কমান
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাংস এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাদ্য বেশি মাত্রায় থাকলে পুরুষ এবং নারী, উভয়েরই কলোরেকটাল বা মলাশয় ও পায়ুপথের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। গবেষণাটি চলাকালীন বিশেষজ্ঞরা লক্ষ করেছিলেন বেশি মাত্রায় এই ধরনের খাবার খেলে শরীরের অন্দরে প্রদাহের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে ইনফ্লেমেশন যত বাড়তে থাকে, তত শরীরের একের পর এক অঙ্গের কর্মক্ষমতা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বাড়ে নানাবিধ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও।
প্রায় ১,২১,০৫০ জন পুরুষ এবং নারীর ওপর প্রায় ২৬ বছর ধরে স্টাডিটি চালানোর পর গবেষকদের মনে আর কোনো প্রশ্ন নেই যে মাংস এবং উচ্চ ক্যালোরি খাদ্যের সঙ্গে ক্যান্সার রোগের যোগ রয়েছে। তাই যদি সুস্থভাবে বাকী জীবনটা কাটাতে চান, তাহলে কখনো অনিয়ন্ত্রিত হারে এমন ধরনের খাবার খাবেন না যেন।
গত কয়েক বছরে আমাদের দেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ সালে সারা বিশ্বের প্রায় ৯০ লাখ মানুষ ক্যান্সারের কারণে মারা গেছেন এবং আগামী দিনে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, আমাদের দেশের অবস্থা আরও শোচনীয়। একদিকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনো উন্নতি নেই। অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ এবং আরো সব ক্ষতিকর ফ্যাক্টরগুলি এত মাত্রায় বাড়ছে যে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা ভয় করছেন হয়তো এমন একদিন আসবে যখন প্রতিটি পরিবারে একজন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হবেন। এমন পরিস্থিতি ভয় পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই ভয় দূর করার উপায়ও রয়েছে।
নানাবিধ আধুনিক চিকৎসার মাধ্যমে এই রোগের প্রসারকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু যদি বলি এমন একটা পদ্ধতি আছে যাকে কাজে লাগালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাই আর থাকবে না, তাহলে কী বলবেন! কী সেই পদ্ধতি? একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে এই মারণ রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষথে পারে না। কারণ…
ভিটামিন সি এবং ক্যান্সার
ক্যান্সারকে দূরে রাখতে যে কোনো আধুনিক মেডিসিনের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি কাজে দেয় ভিটামিন সি। সম্প্রতি এক গবেষণা চলাকালীন বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছিলেন ক্যান্সার সেলের জন্ম আটকাতে এবং এমন ধরনের ক্ষতিকর সেলকে দ্রুত মেরে ফেলতে ভিটামিন সি-এর কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। এখানেই থেমে না থেকে গবেষকরা বিষয়টির আরো গভীরে গিয়ে দেখেছিলেন ভিটামনি সি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ক্যান্সার সেলগুলি খুঁজে খুঁজে তাদের ধ্বংস করে দেয়। ফলে ক্যান্সার রোগের মারণ ফাঁদ থেকে শরীর রক্ষা পায়।
আবার যাতে এই মারণ রোগ না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখে
শরীরে উপস্থিত ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যাতে এমন কোষের জন্ম না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে ভিটামিন সি। তাই তো ক্যান্সারে বেঁচে যাওয়াদের বেশি বেশি করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল এবং খবার খাওয়া উচিত। যাতে তাদের শরীরে পুনারয় এমন মারণ কোষের জন্ম না হয়।
ভিটামিন সি-এর অন্য উপকারিতা
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর মধ্যে দিয়ে জ্বর, সর্দি-কাশি এবং নানাবিধ সংক্রমণের প্রকোপ কমাতে ভিটামিন-সি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, শরীর যাতে ঠিক মতো আয়রণ শোষণ করতে পারে সেদিকেও নজর থাকে ভিটামিন সি-এর। প্রসঙ্গত, এই যে কোনও ধরনের ভাইরাল সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে আয়রণ বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো শরীর যাতে ঠিক মতো আয়রণ গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়টি সুনিশ্চত করা একান্ত প্রয়োজন।
২. রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে
একাধিক গবেষণায় একথা প্রণামিত হয়েছে যে ব্লাড প্রেসারকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে এই নির্দিষ্ট ভিটামিনটি দারুন কাজ আসে। তাই তো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীরা আজ থেকেই ডায়েটে ভিটামিন সিকে অন্তর্ভুক্ত করুন। আর যদি তেমনটা করতে না পারেন তাহলে ভিটামিন সি সাপ্লিমেন্ট খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার পাবেন।
৩. ছানি প্রতিরোধ করে
শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ছানি বা ক্যাটারাক্টে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। তাই বয়স্ক মানুষদের এই ভিটামিনটি রয়েছে এমন খাবার খাওয়া জরুরি।
৪. হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমায়
প্রতিদিন সবুজ শাকসবজি এবং ফল খেলে শরীরে ভিটামিন সি-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা দেহের প্রতিটি অংশে, বিশেষত হার্টে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে নানাবিধ হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমায়। সেই সঙ্গে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও হ্রাস করে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
১. সাইট্রাস ফল যেমন কমলা লেবু, পাতি লেবু এবং মৌসম্বি লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
২. কাঁচা লঙ্কা এবং শুকনো লঙ্কাতেও পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিস সি রয়েছে।
৩. আমলকিও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। প্রসঙ্গত, ১০০ গ্রাম আমলকিতে প্রায় ৬০০-১৮০০ এমজি ভিটামিন সি থাকে।
৪. শরীরে ভিটামিন-সি-এর ঘাটতি দূর করতেও জাম ফলের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৫. পেঁপে এবং আনারসেও এই ভিটামিনটি প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। তাই তো সুস্থ থকতে প্রতিদিন ব্রেকফাস্টে কয়েক টুকরো পেঁপে বা আনারস খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
৬. সবজিদের মধ্যে ব্রকলি, কর্নফ্লাওয়ার, টমাটো এবং বাঁধারোপিতে রয়েচে এই ভিটামিনটি। আর ফলের মধ্যে আমও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
৭. বাঙালি ভোজন রসিকেরা পালং শাক খেতে খুব ভালবাসেন, তাই না! এই ভালবাসায় কোনও দিন যেন ঘাটতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। কারণ পালং শাকে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি রয়েছে, যা নানাভাবে আমাদের শরীরের উপকারে লাগে।
৮. আলুকে যারা পছন্দ করেন তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কারণ এতে উপস্থিত ভিটামিন সি, ক্যারোটিনয়েড, ফ্লেবোনয়েড এবং ফাইবার ক্যান্সারের পাশাপাশি একাধিক মারণ রোগের হাত থেকে আমাদের প্রতিনিয়ত রক্ষা করে চলে।