জ্বর হওয়া ভালো কারণ …
আজকের ফিচারের শিরোনামটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! জ্বর হলে অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয় এবং জ্বরকে আমরা অসুখ হিসেবেই গণ্য করি। কিন্তু সত্যি বিষয়টা হল জ্বর আসলে কিছু মারাত্মক রোগের লক্ষণ মাত্র যা আপনার শরীরে প্রকাশিত হয়। জ্বর হওয়ার অর্থ হছে আপনার শরীরে এমন কিছু ক্ষতিকর আগন্তুক প্রবেশ করেছে যাদেরকে বিতাড়িত করার জন্য আপনার শরীরকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এটি উষ্ণ ও ঠান্ডা রক্তের প্রাণীদের বৈশিষ্ট্য যা বিবর্তনের শেষ ৬০০ মিলিয়ন বছর ধরে হয়ে আসছে।
বংশানুক্রমিকভাবেই আমরা জ্বরকে ভয় পাই বলে প্যারাসিটামলের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকি। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবেই কিছু সমাজে জ্বরকে খারাপভাবে দেখা হয় না। আসলে জ্বর হওয়া আপনার ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভালো একটি বিষয়। জ্বর কীভাবে আমাদের সাহায্য করে তা জেনে আসি চলুন।
১। ইমিউন সিস্টেমকে ভালো কাজ করতে সাহায্য করে জ্বর
শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম কে না চায়? উন্নত ইমিউন সিস্টেম আপনাকে সুস্থ থাকতে, জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে, আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অসুস্থতাজনিত ছুটি না নিতে সাহায্য করে। আর জ্বরের সবচেয়ে উপকারী দিকই হচ্ছে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করা। রসঅয়েল পার্ক ক্যান্সার ইন্সটিটিউট এর ইমিউনোলজি বিভাগের করা এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে, জ্বর আপনার ইমিউন ফাংশন এর উন্নতি ঘটাতে পারে।
২। জ্বর ভাইরাসকে ধ্বংস করে
ভাইরাস সন্তর্পণে আপনার শরীরে প্রবেশ করে এবং আপনার শরীরে ব্যপক ক্ষতি সাধন করে। ঠান্ডা থেকে শুরু করে হেপাটাইটিস পর্যন্ত অনেক রোগের জন্যই দায়ী এই সংক্রামক এজেন্ট। এ লিম্ফোসাইট সিডি৮ + সাইটোটক্সিক টি-সেল হচ্ছে এক ধরণের শক্তিশালী ইমিউন কোষ যা ভাইরাসকে ধ্বংস করতে পারে এবং টিউমার কোষের বৃদ্ধিকে বন্ধ করতে পারে। যখন আপনার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন এই কোষের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যার ফলে আপনার শরীর সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। ইন্টারফেরন হচ্ছে আপনার শরীরের ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোষ। গবেষণায় ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, জ্বর আপনার শরীরের ইন্টারফেরনের উৎপাদনকে বৃদ্ধি করতে পারে।
৩। সহজাত ইমিউন সিস্টেমের উন্নতিতে সাহায্য করে
সহজাত ইমিউন সিস্টেম হচ্ছে আপনার ইমিউন সিস্টেমের একটি অংশ। এটি সংক্রমণের অঞ্চলে ইমিউন কোষকে নিয়ে যাওয়ার কাজ করে, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্য জীবাণুকে শনাক্ত করে এবং শরীরে প্রবেশকৃত অনাকাঙ্ক্ষিত বস্তুকে দূর করে। এছাড়াও আপনার জ্বরের সময় আপনাকে চার্জ হতে সাহায্য করে।
৪। ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা যায় জ্বরকে
ইচ্ছাকৃতভাবে হাইপারথারমিয়া বা জ্বর সৃষ্টি করে শরীর কিছু ধরনের ক্যান্সার নিরাময় করতে পারে বলে জানা গেছে! ফোকাল হাইপারথারমিয়া যেখানে ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা হয় তাকে সরাসরি ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে ব্যবহার করা যায় এবং মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে টিউমার রোধে সক্রিয় করে তুলতে পারে।
কিন্তু জ্বরের কোন খারাপ দিক নেই তা বলা যাচ্ছে না। উচ্চমাত্রার জ্বরের সঙ্গে যদি অন্যান্য উপসর্গের সাথে কাঁপুনি হতে দেখা যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে উঠলে চিকিৎসা সহায়তা নেয়া প্রয়োজন। উচ্চমাত্রার জ্বরকে অবহেলা করলে তা রোগীর জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।