১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, সোমবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

দেহের ৮টি রোগ প্রতিরোধে মুখের স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে ডেন্টিষ্ট এর সংখ্যা জনসংখ্যার তুলনায় অতি নগণ্য। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেকের পক্ষেই একজন ডেন্টিষ্ট দেখিয়ে দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্যের জন্য সেবা নিতে পারেন না। অথচ মুখের স্বাস্থ্য ও দেহের স্বাস্থ্য খুবই সর্ম্পকযুক্ত। তাই প্রতিটি মানুষকে অন্ততঃ মুখ ও দাঁতের সাধারণ কয়েকটি নিয়ম কানুন মেনে চলতে হবে যেমন নিয়মিত দু’বেলা দাঁত ব্রাশ করা, বছরে অন্তত:একজন ডেন্টিষ্টকে দিয়ে মুখ ও দাঁত পরীক্ষা করানো। প্রতিদিন কিছু শাক সবজি ও ফলমূল গ্রহণ ইত্যাদি।

বিভিন্ন গবেষণা ও তথ্য থেকে পাওয়া বাস্তবতা হলো মুখের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে বা রোগাক্রান্ত থাকলে দেহের অন্যতম প্রধান অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। যেমন-

১. হূদরোগ- মাড়ির রোগের মধ্যে জমে থাকা ডেন্টাল প্লাক থেকে সৃষ্ট মাড়ির রোগ থেকে যে প্রদাহ সৃষ্ট হয় তা রক্তের মাধ্যমে শরীরে হূদরোগ সৃষ্টি হতে পারে। কারণ মাড়ির রোগ ও হূদরোগ দু’টি প্রদাহজনিত কারণে হয়ে থাকে।

২.আলজিমারস রোগ- গবেষণায় মুখের রোগের সাথে আলজিমারস রোগের সম্পর্ক খুজে পেয়েছেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে মুখের প্রদাহে যে সমস্ত জীবানুর অস্তিত্ব আছে ঠিক সেই সমস্ত জীবানুই আলজিমারস রোগীর ব্লাড প্লাজমাতে পাওয়া গেছে। গবেষকরা অভিমত দেন যে যাদের দীর্ঘদিন মাড়ির প্রদাহ থাকে তাদের কগনেটিভ ডিসফাংশন হতে পারে।

৩. শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ- গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত জীবানু মাড়ির আক্রান্ত স্থানে থাকে সে সমস্ত জীবানু ফুসফুসের মধ্যেও পাওয়া গেছে তা ধীরে ধীরে প্রদাহের সৃষ্টি করে।

৪. ডায়াবেটিস- ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কটি হচ্ছে একটা দু’মুখি রাস্তার মত। ডায়াবেটিক-এ সাধারণতঃ মুখের প্রদাহ সহ অন্যান্য প্রদাহ অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা মুখের এ ধরণের রোগের কারণে প্রদাহ থেকে ডায়াবেটিস-এর সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে না বরং বেড়ে যায়।

৫. অষ্টিওপরোসিস- অস্টিওপরোসিস এমন একটি রোগ যার কারণে হাড়ের ক্ষয় হয় এবং একইভাবে দাঁতের ও চোয়ালের ক্ষয় হয়। যদি কারো অস্টিওপরোসিস থাকে তাদের দন্তক্ষয় প্রতিরোধে অতিরিক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয় প্রয়োজন। গর্ভাবস্থা-গবেষণায় দেখা যায় যে, গর্ভাবস্থায় যাদের মাড়ির রোগ বা মাড়ির প্রদাহ থাকে তাদের গর্ভের সন্তান কম ওজনের অথবা নির্ধারিত সময়ের পুর্বেই সন্তান প্রসবের জটিলতা হতে পারে।

৬. মানসিক ভারসাম্যহীনতা- দাঁতের বা মুখের সমস্যায় যদি কারো হাসতে অসুবিধা হয় বা সুন্দর হাসি দেয়া থেকে তিনি বঞ্চিত হন তবে তিনি একটি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন এবং তার সামাজিক মর্যাদা ও ব্যাক্তিত্ব অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফলে তার শারীরিক অসুস্থতাও বৃদ্ধি পায়।

৭. পেটের হজমের সমস্যা- দাঁতের ব্যথার জন্য বা অসুস্থতার জন্য যদি কেহ

নিয়মিত আহার ও খাদ্যসমূহ পরিপূর্ণভাবে দাঁত দিয়ে চিবুতে না পারেন তবে সেই খাদ্য পাকস্থলিতে পৌঁছে হজম হতে পারে না। অন্যদিকে সুস্থ্য দাঁতের অভাবে শক্ত খাবার থেকে তরল বা নরম খাদ্য গিলার প্রবণতার কারণে নানান অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

৮. শিশুদের আচার আচরণ বা বেড়ে উঠতে অসুবিধা- শিশুদের শৈশবকাল থেকে দাঁতের যত্নের অবহেলার কারণে বাড়ন্ত শিশুর বেড়ে উঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে সমস্ত শিশু দাঁতের ব্যাথা হয় এবং সঠিকভাবে চিবুতে পারে না। অপরদিকে যে সমস্ত শিশু দাঁতের ব্যথা

আছে, খাবার চিবুতে পারেনা, সুন্দরভাবে হাসতে পারেনা, তারা জীবনে স্বাস্থ্যবান হতে পারে না, তেমনি সমৃদ্ধি লাভ করতে পারে না। বিজ্ঞানীদের মতে দেহের বেশীরভাগ রোগের প্রভাব বা লক্ষণ মুখ গহ্বরে প্রথমে আসে। যেমন ধরুন দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই মুখের ভিতরে তার নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। দেহের এই ইম্যুউন সিস্টেম

বা প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের দেহকে বাইরের রোগ জীবাণু থেকে রক্ষা করে। তবে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে যেমন, দেহের অন্যান্য রোগ, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, শরীরে কৃত্রিমভাবে স্থাপিত অঙ্গ সমূহের জন্য নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ অথবা ক্যান্সার রোগীদের জন্য নিয়মিত গ্রহণ করা কেমোথেরাপি ইত্যাদি। তাছাড়া দেহের অন্যান্য রোগের জন্য গ্রহণ করা নিয়মিত ওষুধ যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হূদরোগ, হাঁপানী, পেটের বা হার্টের অসুস্থতা ইত্যাদি। এই সমস্ত রোগের বেশীর ভাগই ওঠে মুখের ভিতরে

পরিশেকে শুকিয়ে শুস্ক করে দেয়, ফলে দেখা দেয়- ডিহাইড্রেশন বা যাকে বলা হয় ড্রাই মাউথ। মুখের এই শুস্কতার জন্য দেখা দেয় নানান রোগ। যেমন ডেন্টাল ক্যারিজ বা দন্তক্ষয় সেই সাথে জীবাণু বা ব্যাকটিরিয়া বিস্তারও ঘটে। এর ফলে মুখের স্বাদ বা টেইষ্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ডেন্টিজ বা দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ মুখ পরীক্ষা করার সময় এমন

অনেক রোগ সনাক্ত করেন যে সমস্ত রোগের উপস্থিতি রোগী নিজেরাও বুঝতে পারে না। এই সমস্ত লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র ডেন্টিষ্ট দেখানো বা অন্যান্য মেডিকেল বিশেষজ্ঞের কাছেও রেফার করেন। কারণ দেহের অনেক রোগই মুখের ভিতরে প্রাথমিক সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। যাদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা সারাজীবনের রোগ আছে যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ তাদেরকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে মুখও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ মুখের অনেক সমস্যাই দেহের অন্যান্য রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা সুস্থ রাখতে অসুবিধার সৃষ্টি করে। গবেষকরা ইতিমধ্যেই প্রমাণ করেছেন যে, মুখের ভিতরে মাড়ির রোগ দেহের অন্যান্য রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ হতে পারে। এসব রোগের মধ্যে হূদরোগ এবং কম ওজনের শিশু বা সকলেই শিশু ভূমিষ্ট হওয়া অন্যতম। শরীরের সাথে মনের সম্পর্ক সম্বন্ধ নিয়ে আমরা হয়ত অনেক কিছুই জানি। কিন্তু মুখের সাথে শরীরের সম্পর্ক নিয়ে কতটুকু জানি। অনেকের কাছে ডেন্টাল ক্লিনিক এ আসা মানেই হচ্ছে দাঁত ও মাড়ি পরিস্কার করা, দাঁত তুলে ফেলা অথবা দাঁতের ফিলিং করা। তবে ডেন্টাল ক্লিনিকে বা হাসপাতালে যাওয়া শুধু মাত্র দাঁতের জন্যই নয়। কারণ যা কিছু মুখে ঘটুক না কেন তার প্রভাব দেহের উপরও পড়ে। অনুরূপভাবে দেহের যে কোনো অঙ্গ রোগাক্রান্ত হলে তার প্রভাব ও মুখের উপর আসে।

প্লাক প্রতিরোধ

১. মূল আহার গ্রহণের (সকালের নাস্তা-দুপুরের খাবার-রাতের খাবার) মধ্যবর্তী সময়গুলোতে চিনি বা শর্করা জাতীয় খাদ্য (যেমন চকলেট, বিস্কুট, লজেন্স, কেক, টফি, চুইংগাম, আইসক্রিম, মণ্ডা, মিঠাই) খাওয়া শেষে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন।

২. প্রতিদিন মুখ পরিষ্কার ও দুই বেলা সকালে ও রাতে দাঁত ব্রাশ করা প্রয়োজন।

৩. দাঁত ব্রাশের আগে ডেন্টাল ফ্লস

ব্যবহার করা।

৪. প্রতিদিন রাতে ঘুমাবার আগে মাউথ ওয়াশ (ক্লোরহেক্সিডিন) ব্যবহার করা।

৫. বছরে অন্তত: দু’বার ডেন্টিষ্ট এর কাছে দাঁত পরিস্কার করা বা স্কেলিং করা।

Comments

comments