গোপনাঙ্গে চুলকানি যৌনমিলনের পূর্বলক্ষণ নয়…
যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া কখনই সেক্স করতে চাওয়ার পূর্ব লক্ষণ না। এটি একটি অসুখ। অনেকের মাঝেই এই ভ্রান্ত ধারণাটি আছে যে যৌনাঙ্গে চুলকানি (বিশেষ করে মেয়েদের) হওয়া মানে সেক্স করতে চাওয়া। কিন্তু এটি কখনই সত্য না। শারীরিক মিলনে আগ্রহী হওয়ার অন্য ধরনের লক্ষণ দেখা যায় যেমন যৌনাঙ্গ গরম হয়ে যাওয়া ও ফুলে যাওয়া, শারীরিকভাবে উত্তেজনা অনুভব করা, যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া না।
আসুন জেনে নিই যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।
* কারণ
১. ইস্ট বা ছত্রাকের আক্রমণ
এটি যৌনাঙ্গের চুলকানি বা ইচিং হওয়ার অন্যতম কারণ। সাধারণত Candida Albicans, এই ছত্রাকের কারণে যোনিতে চুলকানি হয়। এই ছত্রাক নরমালি মেয়েদের যৌনাঙ্গে পরজীবী হিসেবে থাকে। কিছু ল্যাকলোব্যাসিলাস নামে উপকারী ব্যাকটেরিয়া এই ছত্রাকের বংশবিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু এন্টিবায়োটিক খেলে, গর্ভাবস্থায়, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকলে, হরমোনাল ইমব্যালেন্স থাকলে ও খাদ্যাভাসের কারণে এই উপকারী ব্যাকটেরিয়া মরে যায়, ফলে ঈস্টগুলো তাদের জন্মের জন্য অনুকূল পরিবেশ পায়। এর কারণে যোনিতে ইনফেকশন হয়।
উপসর্গ
– যোনি পথ দিয়ে ঘন, সাদা তরলের নির্গমন হয়।
– চুলকানি, ব্যথা ও প্রদাহ হয়।
– যৌন মিলনের সময় ব্যথ্যা হয়।
২. ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের সংক্রমণ
এটি ভ্যাজাইনা বা যোনিতে চুলকানি হওয়ার অন্যতম কারণ। যোনিতে নরমালি কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে। যখন কোন কারণে এই ব্যাকটেরিয়া গুলোর অনেক বেশি বংশবিস্তার ঘটে তখন যোনিতে ইনফেকশন হয়।
উপসর্গ
– গন্ধযুক্ত ও মাছের আশঁটে গন্ধযুক্ত তরল নির্গত হয় যোনি দিয়ে।
– চুলকানি হয় প্রচুর।
– প্রসাবের সময় জ্বালাপোড়া হওয়া।
৩. ট্রাইকোমোনিয়াসিস এর আক্রমণ
এটি একটি প্যারাসাইট। এটির আক্রমণে যোনিতে চুলকানি হয়।
উপসর্গ
– হলুদ, সবুজ রঙের ও খুব তীব্র বাজে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব হয়।
– তলপেটে ব্যথ্যা হয়।
– যোনিতে চুলকানি হয়।
৪. এছাড়াও যৌনাঙ্গে উকুন, খোসপাচড়া ও মাইকোপ্লাজমা জেনেটালিয়াম এর সংক্রমণ হলে যোনিতে চুলকানি হয়।
৫. কিছু সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ যেমন– সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস ইত্যাদির কারণে যৌনাঙ্গে ইচিং বা চুলকানি হতে পারে।
৬. বিভিন্ন বিরক্তিকর পদার্থ যেমন– বিভিন্ন ডিটারজেন্ট, কেমিক্যাল, সুগন্ধিযুক্ত সাবান, রঙ ওয়ালা টিশ্যু পেপার, ফেমিনিন হাইজেনিক স্প্রে, ডুশ ব্যবহার করলে যোনিতে চুলকানি হতে পারে।
৭. মেনোপোজের পর মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন কমে যায়। ফলে যোনি শুকিয়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন পরজীবীর সংক্রমণ হয়। ফলে যোনিতে ইচিং হয়।
৮. ডায়াবেটিস, রেনাল ডিজিজ, একজিমা ও রক্তে কোন রোগ থাকলে ও অন্যান্য কোন রোগ থাকলেও যৌনাঙ্গে চুলকানি হয়।
৯. মাসিকের সময়, অস্বাস্থ্যকর প্যাড ও কাপড় ব্যবহার করলে।
১০.যৌনকর্মীদের এই রোগগুলো বেশি হয়। তাই অবাধ যৌন আচরণের কারণে হয়ে থাকে।
১১.যৌনাঙ্গ সবসময় গরম ও আর্দ্র রাখলে।
১২.অপরিষ্কার থাকলে।
* প্রতিকার
– ছত্রাকের সংক্রমণ হলে, এন্টিফাংগাল ওষুধ যেমন– ketoconazole, miconazole, clotrimazole, tioconazole, fluconazole ইত্যাদি খেতে হয় ৩ থেকে ৫ দিন। তবে কিছু ওষুধ একদিনেও কাজ করে। তাই ডোজ ও কতদিন খাবেন তা জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া lactobacillus acidophilus ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে এর সাথে।
– ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে এন্টিব্যায়োটিক ড্রাগস খেতে হয়। যে এন্টিবায়োটিকই খান না কেন তা কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন খাবেন।
– প্যারাসাইটের সংক্রমণ হলে Metronidazole খেতে পারেন। এছাড়াও vaginal clindamycin cream (clencin) or tinidazole এইগুলো যোনিতে লাগাতে হয়।
– বেশি চুলকানি হলে Lidocaine নামক জেল আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন। এতে সাময়িক আরাম হবে। কিন্তু পুরা সেরে যাবেনা। তাই ডাক্তারকে দেখাবেন।
– চুলকানি কমানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন যেমন– fexofenadine, loratadine খেতে পারেন।
– এছাড়া প্রদাহ কমাতে steroid cream ব্যবহার করা যেতে পারে।
– মেনোপোজের পর চুলকানি হলে ইস্ট্রোজেন সাপোজেটরি যোনিপথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
Related Posts
Comments
comments