অনেক বক্ষব্যাধিই আছে, যেখানে একটু নড়াচড়া বা হালকা পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। বক্ষব্যাধিগুলোর মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ও অ্যামফাইসিমা প্রণিধানযোগ্য। একজন বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগতে পারেন নানা সমস্যার কারণে।

এসব কারণের একটি হলো- ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস। এ রোগ সাধারণত পুরুষেরই বেশি হয় এবং মধ্যবয়সের পর থেকেই তা প্রকাশ পেতে শুরু করে। ধূমপায়ীদের মধ্যে এই রোগটির প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ধূমপানকে তাই এ রোগের একটি প্রধান কারণ হিসেবে আমরা শনাক্ত করে থাকি। ধূমপান ছাড়াও ধুলা, গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বিষাক্ত ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এই রোগের উত্তম সহায়ক। সাধারণত কোনো ব্যক্তি বছরে অন্তত তিন মাস ধরে কাশিতে ভুগতে থাকলে এবং এভাবে দুই বছরের অধিক হলে আমরা রোগীকে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের রোগী বলে ধরে নিই। এই রোগে আক্রান্তদের শব্দ করে কাশি হয়। সেই সাথে শ্লেষ্মা বা কফ থাকে।

ব্রঙ্কাইটিস জীবাণুর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এ রোগের লক্ষণ হলো- কাশির সাথে অন্তত তিন মাস ধরে শ্লেষ্মা থাকে। প্রতি বছরই একই রোগীর এ রোগ হতে পারে। এবার অ্যামফাইসিমা নিয়ে কিছু লিখব। অ্যামফাইসিমা যার হয়েছে তিনি জানেন, তার কাছে জীবন কতটুকু গদ্যময়। এটি এক ভয়ানক শ্বাসকষ্টজনিত বক্ষব্যাধি। অ্যামফাইসিমা রোগটি মোটামুটিভাবে প্রচলিত একটি দুরারোগ্য বক্ষব্যাধি; যেখানে সমস্যা মানে কফ-কাশি আর শ্বাসকষ্ট। যখন ফুসফুসের কাঠামোর অভ্যন্তরে বাতাস জমে ফুলে ওঠে, তখন ফুসফুসের ভেতরের অংশগুলো নষ্ট ও অক্ষম হয়ে স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ হারিয়ে অকার্যকর হয়ে যায়। এ রোগ এক দিনে তৈরি হয় না। মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে ফুসফুসের মধ্যে তৈরি হয়। অ্যামফাইসিমা অনেক ক্ষেত্রে নিজে নিজেই দেখা দিতে পারে। আবার কিছু শ্বাসকষ্টজনিত রোগ যেমন ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস অথবা বহুদিনের পুরনো হাঁপানি জটিলতার কারণেও অ্যামফাইসিমা রোগটি দেখা দিতে পারে। অন্যান্য বক্ষব্যাধির মতো ধূমপানের কারণে এটি হয়। বহুদিনের পুরনো ধূমপায়ীর ফুসফুসে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের সাথে অ্যামফাইসিমা দেখা দিয়ে থাকে। তবে ধূমপানের সাথে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্পর্ক নিবিড় ও ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। পরিবেশ দূষণও এ রোগের জন্য দায়ী। যদি অ্যামফাইসিমা অন্য কোনো রোগের সাথে সম্পৃক্ত না থাকে অর্থাৎ যদি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস এবং হাঁপানির জটিলতার কারণে না হয়ে থাকে, তবে প্রথম দিক থেকেই ব্যাপক শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ার ফলে রোগী একটু চলাফেরা করলেই আর দম পায় না। পরের দিকে শ্বাসতন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার জন্য ফেইলিউর দেখা দেয় এবং শরীরের রঙ গোলাপি হয়ে যায়। অপর দিকে, অ্যামফাইসিমা যদি ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসের সাথে সম্পৃক্ত থাকে তবে প্রথম দিকে তেমন শ্বাসকষ্ট থাকে না, পরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। হৃদযন্ত্রের ডান দিকের অংশ অকার্যকর হয়ে হার্ট ফেইলিউর দেখা দেয়, পায়ে পানি আসে এবং রোগীর শরীর নীলাভ হতে থাকে। অর্থাৎ এক কথায় বললে এই রোগের প্রধান লক্ষণই হলো শ্বাসকষ্ট। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য বুকের এক্স-রে একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। একজন অভিজ্ঞ বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ বুকের একটি সাধারণ এক্স-রে দেখেই এ রোগের উপস্থিতি বলে দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে পালমোনারি ফাংশন টেস্টের প্রয়োজন পড়ে।

অ্যামফাইসিমা একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। তাই শ্বাসকষ্ট অবশ্যই ওষুধের মাধ্যমে কমিয়ে রোগীকে প্রশান্তিময় শ্বাস উপহার দিতে হবে। যদি জীবাণু সংক্রমণের জন্য কফ পেকে হলুদ হয়ে যায়, তবে এক কোর্স ভালো এবং কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দিতে হবে। ধূমপান যেহেতু এই রোগের মুখ্য কারণ, তাই ধূমপান ছাড়তে হবে। গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার বিষাক্ত কালো বাতাস থেকে দূরে থাকতে হবে। যদি বংশগত কারণে এ রোগ হয়ে থাকে, তবে তা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করে রোগীকে চিকিৎসা দিতে হবে।