নারীদের মধ্যে অনেকেই অনিয়মিত ঋতুস্রাব সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে কিশোরীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ নিয়ে কিশোরীরা দুশ্চিন্তায় ভোগেন।

নিয়মিত ঋতুচক্র প্রতিমাসে দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী থাকে। বেশিরভাগ নারী প্রতিমাসের ২৮ তারিখের সাতদিন পূর্বে অথবা সাতদিন পরে ঋতুস্রাবের মুখোমুখি হয়। প্রতি ঋতুস্রাবে গড় রক্তক্ষরণের মাত্রা ৬০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম। এর অধিক রক্তক্ষরণ হলে সেটাকে অনিয়ন্ত্রিত ঋতুস্রাব হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণঃ
১. গর্ভধারণজনিত অনিয়মিত ঋতুস্রাব। ঋতুস্রাব সমস্যা শুরু হলে প্রথমে গর্ভধারণ টেস্ট (প্রেগনেন্সি টেস্ট) করা দরকার। নির্ধারিত সময়ের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে গর্ভপাতের আশংকা বা ইকটোপিক (জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ) গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি টেস্ট বা গর্ভধারণ পরীক্ষা জরুরী।

২. গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে।

৩. সন্তান জন্মদানের সময় ইনজেকশন গ্রহণ করলে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে।

৪. শারীরিক ওজন বাড়লে বা কমলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি থাইরয়েড রোগ এবং পলিস্টিক ওভারিয়ান
রোগের সম্ভাবনা বাড়ায়। আবার শারীরিক ওজন কমে গেলে তা ক্যান্সার, টিউবারকোলোসিস রোগ বাড়াতে পারে। এছাড়া শারীরিক ওজনের এই তারতাম্য থাইরয়েড, অনিয়মিত ঋতু চক্র এবং ঘুমের মাত্রা বাড়ায়। তখন হরমোনজনিত এই রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

৫. আবেগীয় মানসিক চাপের (পরীক্ষা সক্রান্ত, বৈবাহিক সমস্যা, নিকট আত্বীয় হারানো) প্রভৃতির ফলেও অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে।

৬ জননাঙ্গের যক্ষা, গণোরিয়া, সিফিলিস, এইডস, ডায়াবেটিস প্রভৃতির কারণে হতে পারে৷

লক্ষণঃ
* মাসে ২/৩ বার মাসিক বা ঋতুস্রাব হতে পারে
* শুরু হওয়ার ১/২ দিন পরই শেষ হয়ে যায়
এবং কয়েকদিন পর আবার শুরু হয়
* একনাগাড়ে অনেকদিন ধরে চলতে পারে
* কোনো কোনো সময় স্বল্পকালীন মাসিক দেখা যায় এবং পরবর্তীতে মাসিক শুরু হলে তা প্রায় ২/৩ মাস পর্যন্ত চলতে থাকে
* রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া দেখা দিতে পারে
* ক্ষুধামন্দা ও শরীর দুর্বল বোধ হয়
* মেজাজ খিটখিটে ও অশ্বস্তি বোধ
* রুগ্নতা ও সাংসারিক অশান্তি দেখা দিতে পারে৷

জটিলতাঃ
* সন্তান ধারণে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্ব দেখা যেতে পারে
* অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ হতে পারে
* টিউমার ও ক্যান্সারজনিত হলে সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে মৃত্যুও হতে পারে৷

অনিয়মিত ঋতুস্রাব বন্ধে যা করা উচিতঃ

১. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং নিজেকে ঠান্ডা রাখুন।
২. বিবাহিতরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ বন্ধ
করবেন না। কেননা এই সময়ে গর্ভধারণের
ঝুঁকি থেকেই যায়। যদি আপনি জন্ম নিয়ন্ত্রণের
বড়ি নিয়মিত গ্রহণ করেন। সেক্ষেত্রে এটা আপনার ঋতুস্রাব বন্ধ হবার পরও চালিয়ে যেতে হবে।
৩. শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন।
নিয়মিত শরীর চর্চা, সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
৪. প্রতিদিন ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে (ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট) এরকম ওষুধ সেবন করুন৷
৫. রোগীকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্রামে থাকতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে৷
৬.মানসিকভাবে আস্বস্ত হতে হবে৷
৭.রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে রক্ত দিতে হবে৷
৮.পুষ্টিকর খাবার ও হালকা ব্যায়াম করতে হবে৷