যে ১০টি রোগ থেকে মুক্তি মিলে তুলসী পাতায়
গত ৫০০০ বছর ধরে নানা রোগ সারাতে এই গাছটিকে কাজে লাগানো হয়ে আসছে, তা ত্বকের রোগ হোক কী চুল, বা অন্য কোনো শারীরিক অসুবিধা। আসলে তুলসি গাছের রসের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ছোট-বড় নানা রোগ সারাতে দারুণ কাজে আসে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে তুলসি গাছের পাতা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে, সেই সঙ্গে নানা ধরনের সংক্রমণ হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে নানা রোগ এমনিতেই দুরে পালায়।
আসলে ‘দ্য কুইন অব হার্বস’ নামে পরিচিত তুলসি গাছের গুণাগুণ লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। তবু কয়েকটির কথা না বললেই নয়।
এখানে এমন ১০টি রোগের বিষয়ে আলোচনা করা হল, যেগুলো সারাতে তুলসির কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে।
১. কিডনির পাথর : তুলসি পতায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানে পাথর হওয়ার আশঙ্কা কমায়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন যদি মধু দিয়ে তৈরি চুলসি পাতার রস খাওয়া যায়, তাহলে কিডনির পাথর গলে তো যায়ই, সেই সঙ্গে শরীর থেকে তা বেরিয়েও যায়। প্রসঙ্গত, তুলসি পাতায় যে ডিটক্সিফাইং এজেন্ট রয়েছে তা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে দেয় না। ফেল কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
২. হার্ট ভালো রাখে : ইউজেনল নামে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে তুলসি পাতায়, যা রক্তচাপ এবং কোলেস্টরলের মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে। আর এ কথা তো সকলেরই জানা যে এই দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। আপনি কি কোনো রকমের হার্টের রোগে ভুগছেন? তাহলে রোজ সকালে খালি পেটে কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে খান। দেখবেন অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।
৩. ক্যানসার রোগকে হারিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে : প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক প্রপাটিজ এবং অ্যান্টি-অ্যাক্সিডেন্ট থাকায় তুলসি পাতা খেলে ক্যানসার রোগও দূরে পালায়। একাধিক গবেষণা অনুসারে, রোজ যদি তুলসি পাতা চিবিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে ব্রেস্ট এবং ওরাল ক্যানসার কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে তুলসি পাতার রস খেলে পরিবেশে উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদান আমাদের শরীরকে নষ্ট করতে পারে না। ফলে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে।
৪. নানা রকমের স্টমাক সম্পর্কিত রোগ কমায় : গত কয়েক বছরে আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম, আলসার, ব্লটিং প্রভৃতি রোগের প্রকোপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আর তুলসি পাতা এইসব রোগ সারাতে দারুণ কাজে আসে। প্রতিদিন এক চামচ তুলসির জুসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে নানা রকমের পেটের রোগ একেবারে দূরে পালায়।
৫. ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে : অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুগারের সবথেকে বড় যম। আর এই উপাদানটি বিপুল পরিমাণে রয়েছে তুলসি পাতায়। তাই তো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটি তুলসি পাতা যদি চেবানো যায়, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করে। তবে এক সঙ্গে অনেক চুলসি পাতা খেয়ে নিলে কিন্তু হঠাৎ করে শর্করারা মাত্রা কমে গিয়ে অন্য় বিপদ হতে পারে। তাই অল্প করে তুলসি পাতা খাওয়া উচিত।
৬. মুখের দুর্গন্ধ দূর করে : সকাল সকাল কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের ভেতর জন্ম নেওয়া নানান ক্ষতিকর ব্য়াকটেরিয়া মারা যায়। ফলে মুখ থেকে আর বাজে গন্ধ বেরয় না। প্রসঙ্গত, দাঁতকে নানা জীবাণুর হাত থেকে বাঁচাতেও তুলসি পাতা দারুন কাজে দেয়।
৭. জ্বর ও ঠাণ্ডা লাগা কমায় : সেই ছোট বেলা থেকে শুনে আসা কথাটা বাস্তবিকই ঠিক যে জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা কমাতে তুলসির কোনও বিকল্প নেই। আসলে তুলসি পাতা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও জোরাল করে দেয়। ফলে রোগ-ভোগ কমতে শুরু করে। শুধু তাই নয় এতে উপস্থিত অ্যান্টি-ব্য়াকটেরিয়াল প্রপাটি নানা ধরনের সংক্রমণ থেকেও আমাদের দূরে রাখে।
৮. চোখের নানা রোগ সারায় : নানা ধরনের ছোট-বড় চোখের রোগ সারাতে তুলসি পাতার কোনও বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, ভিটামিন- এ-র ঘাটতির কারণে যে যে চোখের রোগ হয়, সেগুলির প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে আসে তুলসি পাতা।
৯. স্ট্রেস কমায়: শরীরে অ্যান্টি-স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে তুলসি পাতা দারুন কাজে দেয়। ফলে স্ট্রেস লেভেল কমতে শুরু করে। আসলে তুলসি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি স্ট্রেস এজেন্ট রয়েছে, যা রক্ত চলাচল বাড়িয়ে দেয়। ফলে শরীরে উপস্থিত নানা ক্ষতিকর উপাদানের শক্তি কমতে থাকে, সেই সঙ্গে কমতে শুরু করে স্ট্রেসও।
১০. মাথা যন্ত্রণা কমায়: একটা বড় পাত্রে জল নিয়ে তাতে কয়েকটা তুলসি পাতা ফেলে দিন। তরপর সেই জলটা ফুটিয়ে নিন। এবার মাথা টাওয়ালে ঢেকে সেই জলের ভাব নিলে দেখবেন মাথা যন্ত্রণা কমে যাবে। আসলে তুলসি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে য নিমেষে মাথা যন্ত্রণা কমিয়ে ফেলতে কার্যকরি ভূমিকা নেয়।