দারুচিনির ঔষধি গুনাগুণ!
ভারত উপমহাদেশে অনেক আগে থেকে মসলা খুবি জনপ্রিয়। রান্নায় খাবারের স্বাদ ও সুগন্ধে মাত্রা যোগ করতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে দারুচিনি। এছাড়া ভেষজ ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এই মসলা। ঠাণ্ডা জনিত রোগ, পেশী সংকোচনের কারণে ব্যথা এবং শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করে দারুচিনি। তাছাড়া রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতেও দারুণ কার্যকর। চলুন জেনে নিই দারুচিনির ঔষধি গুনাগুণ।
রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে:
গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে দারুচিনি। যারা টাইপ টু ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর ঘরোয়া উপাদান হিসেবে দারুচিনি খাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
ব্যাক্টেরিয়া জনিত পেটের অসুখ থেকে মুক্তিতে:
দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। যা পেটে ব্যাক্টেরিয়া কারণে যে সব অসুখ হতে পারে তা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। দারুচিনির চা, দারুচিনির তেল, দারুচিনিগুঁড়া ইত্যাদি পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
অন্ত্রে অস্বস্তি কমাতে:
‘ইরিটেবল বাউয়াল সিন্ড্রম’ বা পেটের ভিতরে অন্ত্রের যে কোন অস্বস্তিকর অনুভূতি কমাতে কার্যকর দারুচিনি। গ্যাস্ট্রোনমিকাল অংশে ক্ষত ভালো করা এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে ‘গ্যাস্ট্রিক জুস’য়ের কার্যপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে। তাছাড়া যাদের পেট ব্যথার সমস্যায় ভুগেন তারা যদি দিনে দুই থেকে তিনকাপ দারুচিনি চা খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে উপকৃত হবেন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর:
গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ও টিউমার, মেলানোমা বা ত্বকের মেলানিন কোষ মিলে যে টিউমার হয় তার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে দারুচিনি। লিউকোমিয়া ও লিমফোমা ক্যান্সারের কোষগুলোর প্রভাব কমাতেও সাহায্য করে এই মসলা।
বাত ও অস্টিওপোরোসিস:
দারুচিনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, যা হাড় গঠন, রক্ত ও শরীরের অন্যান্য কোষ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। যাদের শরীরে খনিজ উপাদানের অভাব থাকে তাদের বাত ও অস্টিওপোরোসিসের সমস্যা হতে পারে। ব্যাথার স্থানে দারুচিনির তেল লাগালে এবং দারুচিনি চা পানের অভ্যাস গড়ে তুললে উপকার পাওয়া যায়।
স্মরণ শক্তি বাড়াতে:
স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য দারুচিনির কিছু উপাদান। যারা প্রতিদিন দারুচিনি খেয়ে থাকেন তাদের স্মরণশক্তি তীক্ষ্ণ হয়ে থাকে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট:
সাত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় আছে দারুচিনি। শরীরের বিভিন্ন অংশের ক্ষত সারিয়ে তুলতে এই মসলা বেশ কার্যকরী।
ওজন কমাতে:
ওজন কমাতে খাবারের তালিকায় দারুচিনি রাখা খুবেই জরুরি। কারণ দারুচিনি রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে এবং হজমেও সাহায্য করে। আর তাই এই উপাদান ওজন কমাতে সাহায্য করে।
পেশীর ব্যথা উপশমে:
টান বা কোনো কারণে পেশীতে ব্যথা হলে আহত স্থানে দারুচিনি তেল দিয়ে মালিশ করলে উপকার হওয়া যায়।
অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান:
শরীরে ছত্রাকের সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে দারুচিনি।
দাঁত ক্ষয় ও মাড়ির সমস্যায় দারুচিনি:
চুইংগাম, মিন্ট চকলেট, মাউথওয়াশ, টুথপেস্ট ইত্যাদি তৈরিতে বহুল প্রচলিত একটি উপাদান হল দারুচিনির তেল। এই উপাদান দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে মুখের ভিতরে এমন ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।
প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রম:
দারুচিনিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, যা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রম বা পিএমএস-এর প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। মাসিকের আগে মেয়েদের শরীরে হরমোনের ভারসম্য পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। দারুচিনি এর প্রভাব কিছুটা কমাতে সাহায্য করে।
খাদ্যের বিষক্রিয়া:
খাদ্য-বিষক্রিয়া থেকে আক্রান্ত হলে দারুচিনি খেলে উপকার পাওয়া যায়। কারণ এই মসলা পাকস্থলির ব্যাক্টেরিয়া ও ফাংগাস দমন করতে সাহায্য করে।