কঠিন শরীরচর্চা: ঠিক না ভুল?
চাকরিজীবীদের ব্যস্ততা সপ্তাহ জুড়েই। তাই সপ্তাহের একটি ছুটির দিনে অনেকেকেই শরীরচর্চায় সময় কাটান। অনেকেই ‘সময় পাই না’ ভেবে পুষিয়ে নেয়ার জন্য ওই একটি দিন কঠিন শরীরচর্চা করেন। মনে করেন পুরো সপ্তাহের ক্যালোরি এই একদিনেই বার্ন করবেন। কিন্তু সেটি কি আর সম্ভব? কখনো কী ভেবেছেন ওই একদিনের কঠিন শরীরচর্চা কতোটা ক্ষতি করছে? টানা হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ ডেকে আনে ব্যথা ও চোট-আঘাতের প্রবণতা। সারা সপ্তাহে এক্সারসাইজ না করে হঠাৎ দু’একদিন টানা কয়েক ঘন্টা হাই ইনটেনসিটি এক্সারসাইজ বা স্পোর্টস অ্যাক্টিভিটি শরীরের সহায়ক হয় না। বরং এতে ক্ষতির প্রভাবই বেশি।
প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ মিনিট শরীরচর্চার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। একে বলা হয় ব্যালেন্সড-ওয়ার্ক আউট। কিন্তু সারা সপ্তাহের এক্সারসাইজ যদি একদিন পুষিয়ে নিতে চান তবে বুঝতেই পারছেন শরীরে কি হাল হতে পারে! সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে একটু বেশি এক্সারসাইজ করলে শরীরে ব্যালান্স থাকে না চোট-আঘাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হাড়ের সংযোগস্থলে ও মাংসপেশিতে প্রচুর ব্যথা হয়। সাধারণত এ ধরনের আন ব্যালেন্সড ওয়ার্ক আউট এর ফলে যে ইনজুরি করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো:
১) শোল্ডার ট্যান্ডন ইঞ্জুরি
২) আঙ্কল লিগামেন্ট ইনজুরি বা আঙ্কল স্প্রেন
৩) নি-লিগামেন্ট ইনজুরি
৪) রিস্ট ইঞ্জুর
৫) হ্যামস্ট্রিং, কোয়ার্ড্রিসেপ বা কাফ মাসল ইনজুরি
প্রতিরোধের উপায়:
যদি শরীরচর্চা করতে গিয়ে এ ধরণের হাড়, মাংসপেশীর ব্যথাসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন তবে এর থেকে সমস্যা সমাধানের উপায় একটাই। প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ৩০ মিনিট ওয়ার্কআউট বা এক্সারসাইজ করুন। এতে শরীরের ওপর ধকল কম পরবে। যদি প্রতিদিন সম্ভব না হয় তবে চেষ্টা করুন একদিন পরপর এক্সারসাইজ করার। তাহলে সপ্তাহের শেষে এক্সারসাইজের অভারলোড হবে না। অবশ্যই মনে রাখতে হবে খেলাধুলা বা এক্সারসাইজের শেষে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া জরুরী।
শরীরে যেন কখনো পানিশূন্যতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া জরুরি। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও ডাল ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাদ্য খেতে হবে। এক্সারসাইজের আগে ওয়ার্মআপ, পরে কুল ডাউন অবশ্যই করতে হবে। অনেকেই ওয়ার্ম আপ না করে এক্সারসাইজ শুরু করে দেন কিন্তু এটি করা উচিত নয়। হালকা জগিং, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি হালকা ওয়ার্ম আপ।
কোয়াড্রোসেপ, হামস্ট্রিং ও কাফ মাসলের উপযোগী স্ট্রেচিং করুন। এ বিষয়গুলো মাথায় রাখে শরীরে ব্যথা ও চোট আঘাতে সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে। সকালে অনেকে রাস্তার ধারে বা পার্কে দৌড়ান এটিও কিন্তু ভুল পদ্ধতি। সঠিক সারফেস ও প্রটেক্টিভ গিয়ার ব্যবহার করা প্রয়োজন। আবার অনেকেই ট্রেনিং ছাড়াই খেলাধুলা করেন। খেলাধুলার টেকনিক সম্পর্কে কোনো বেসিক ধারণা নেই অথচ খেলাধুলা করছেন। এক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। সঠিক নিয়ম জানার অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশ চোট লাগতে পারে।
প্রতিকার কী?
এক্সারসাইজ বা ওয়ার্ম আপের সময় হাঁটুতে চোট লেগে যেতে পারে। তাই সেখানে স্প্লিন্টার ব্যবহার করতে পারেন। শোল্ডার ইনজুরির জন্য সোল্ডার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। সেইসঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যেকোনো ধরনের ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ বা খেলাধুলার পর বিশ্রাম নেয়া একান্ত জরুরি। চোট লাগায স্থানে বরফ ঘষে দিতে পারেন। অতিরিক্ত ব্যথা বা ফুলে রক্ত জমাট বাঁধায় স্থানে ব্যথা নাশক স্প্রে বা মলম ব্যবহার করতে পারেন। কেটে গেলে ব্যান্ডেজ লাগাতে পারেন। হাত বা পায়ের চোট লাগলে তা ঝুলিয়ে রাখুন হাঁটতে শুরু করার পরে কিছুদিন সাপোর্টে নিয়ে হাঁটুন। এতে আহত জায়গায় বারবার আঘাত লাগার সম্ভাবনা কম থাকে। ছোটখাটো চোট লাগার চিকিৎসা পদ্ধতি এগুলোই। কিন্তু যদি ইন্টার্নাল জয়েন ডেমেজ হয় তাহলে সার্জারির দরকার হতে পারে।
লিগামেন্ট ইঞ্জুরি, শোল্ডার মাসল, আঙ্কল ইনস্টাবিলিটি বা শোল্ডার ডিস লোকেশন চিকিৎসাগুলোই ইন্টার্নাল জয়েন্ট রিপেয়ারের সার্জারি। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিকারের পর অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। যদি আঘাত বেশি হয় তাহলে ব্যাথানাষক ওষুধ খেতে পারেন।