কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়, এর ভয়াবহতা ও প্রতিকারের উপায়ঃ
শিশু থেকে বয়স্ক সব বয়সী মানুষই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে৷ গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য এটা বেশি পীড়াদায়ক৷ কোষ্ঠকাঠিন্যে অাক্রান্তরা অনেক কিছুই খেতে ভয় পান। কোনটা খেলে যে স্বস্তি পাবেন, আর কোনটা খেলে কষ্ট চরমে উঠবে, বুঝতে পারেন না। অাসুন জেনে নেই কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কে বিস্তারিত-
কোষ্ঠকাঠিন্যের কেন হয়-
১. আঁশজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে;
২. পানি কম খেলে;
৩. দুশ্চিন্তা করলে;
৪. কায়িক পরিশ্রম, হাঁটা-চলা কিংবা ব্যায়াম একেবারেই না করলে;
৫. অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে;
৬. ডায়াবেটিস হলে;
৭. মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে;
৮. অনেক দিন বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকলে;
৯. বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন, যেমনঃ ব্যথার ওষুধ; উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ; খিঁচুনির ওষুধ এবং আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামজাতীয় ঔষধ সেবনে৷
১০. তাছাড়া স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার জন্যও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এর মধ্যে কাঁপুনিজনিত অসুখ, স্নায়ু রজ্জু আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও থাইরয়েডের সমস্যা উল্লেখযোগ্য।
কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণঃ
১. শক্ত পায়খানা হওয়া;
২. পায়খানা করতে অধিক সময় লাগা;
৩. পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া;
৪. অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতা না আসা;
৫.মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব করা এবং
৬. আঙুল কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে পায়খানা বের করা।
কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা না হলে যে সমস্যা হতে পারেঃ
১. পায়খানা ধরে রাখার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে;
২. পাইলস;
৩. এনালফিশার;
৪. রেকটাল প্রোলাপস বা মলদ্বার বাইরে বের হয়ে যেতে পারে;
৫. মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে;
৬. প্রস্রাব বন্ধ হতে পারে;
৭. খাদ্যনালীতে প্যাঁচ লেগে পেট ফুলে যেতে পারে;
৮. খাদ্যনালীতে আলসার বা ছিদ্র হয়ে যেতে পারে এবং
৯. কোষ্ঠকাঠিন্য যদি কোলন ক্যান্সার এবং মস্তিষ্কে টিউমারের জন্য হয় এবং সময়মতো চিকিৎসা করা না হয় তবে অকালমৃত্যু হতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীরা যে খাবার এড়িয়ে চলবেনঃ
* দুধ: দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (যেমন: পনির, আইসক্রিম ইত্যাদি)
* মাংস: লাল মাংসে (গরু ও খাসির)
* স্ন্যাকস বা নাশতা হিসেবে পটেটো জাতীয় চিপস
* হিমায়িত খাবার: সংরক্ষিত বা প্রক্রিয়াজাত খাবার
* বেকারি পণ্য: যেমন বিস্কুট, ক্র্যাকার্স, ডোনাট, পেস্ট্রিজাতীয় খাবার ও পাউরুটি
* কাঁচকলা:
* ভাজাপোড়া: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যা খাবেন-
১। কলা
২। কফি
৩। পানি
৪। কমলা
৫। পপকর্ন
৬। লাল চাল
৭। পালং শাক
৮। টকদই
৯। ইসুপগুলের ভুষি- অনেকেই ইসুপগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে রাখেন এবং পরে খান। এতে আসলে উপকার হয় না। বরং পানিতে দিয়ে সাথে সাথেই খেয়ে ফেলতে হবে।
১০। আপেল- সবচাইতে ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন খালি পেটে অন্তত ১ টি আপেল খেতে হবে।
১১। গাজর
১২। শসা
১৩। বেলের সরবত
১৪। কিসমিস, গরম দুধ ও দারুচিনি গুড়া একসাথে খান
১৫। ত্রিফলা
১চা চামচ ত্রিফলা পাউডার ১গ্লাস গরম পানিতে বা দুধে ভালভাবে মিশিয়ে রাতে খেতে পারেন৷
১৬। তিলবীজ
তিল বীজ গুড়া করে আটা বা ময়দার সাথে মিশিয়ে রুটি তৈরি করে খেতে পারেন৷
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথিতে কোষ্ঠকাঠিন্যের ভালো চিকিৎসা রয়েছে৷ যদিও লক্ষনসাদৃশ্যে ঔষধ নির্বাচন করবেন অাপনার চিকিৎসক তবে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে Alumina, Nux vom, Sulphur, Causticum, Graphitis ঔষধগুলো অত্যন্ত সফলতার সাথে ব্যবহৃত হয়৷ নবজাতক ও শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে Opium ঔষধটি ভালো কার্যকরী৷
ডাঃ শামীম হোসেন
BHMS (১ম স্থান), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এক্স হাউজ ফিজিশিয়ান,
সরকারী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মিরপুর, ঢাকা৷
পি জি টি (অাকুপ্রেশার) ঢাকা৷
কনসালটেন্ট, হলিস্টিক হোমিওপ্যাথি সেন্টার, দনিয়া, ঢাকা৷
প্রকাশ: ডা: মেঘনা ইসলাম