৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

‘সদা সত্য কথা বলিবে’- এই মন্ত্র কি সবসময় সঠিক?

গোপনীয়তার ঝুঁকি অনেক। প্রথম কথা, যে কোনো সময় গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। সে কারণে মানুষ সতর্ক থাকার চেষ্টা করে। ফলে, তাদের মধ্যে মিথ্যা বলার প্রবণতা তৈরি হয়।

কিন্তু বিবিসির কিংবদন্তী সাংবাদিক মার্ক টালির প্রশ্ন: খোলামেলা হওয়াই কি সবসময় সর্বোত্তম পন্থা, নাকি কথা গোপন রাখাও কখনো কখনো যথার্থ?
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, কথা গোপন রাখতে গিয়ে মানুষের ভেতর চাপ তৈরি হয়, মানুষের সুখ নষ্ট হয়, এমনকী স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ারও ঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে, যেখানে সম্ভব সত্য প্রকাশ করা অথবা কথা গোপন রাখতে অস্বীকার করাটাই বুদ্ধিমত্তার কাজ।কিন্তু সবক্ষেত্রেই এই তত্ত্ব খাটেনা। কখনো কখনো কথা চেপে যাওয়া, গোপন রাখাটাই ভালো, দরকার।

১. যখন অন্য কারোর মাথাব্যথা নেই
আমাদের অনেকের কিছু কিছু গোপন-অস্বাভাবিক কিছু অভ্যাস থাকে, যেগুলো অন্য কারো জানার কোনো প্রয়োজন নেই।যেমন, আপনি এমন একজনের ফ্যান হতে পারেন সমাজে যার ভাবমূর্তি সুবিধার নয়। অথবা আপনি প্রতিদিন সকালে উঠে একটু উদ্দাম নৃত্য করতে পছন্দ করেন। অথবা মাশরুম দেখলে আপনি ভীত হয়ে পড়েন।

এগুলো জানলে অনেক মানুষ হয়তো আপনাকে আহাম্মক বলবে। অবাক হবে। কিন্তু আপনার এসব স্বভাব যদি অন্যকে ক্ষতি না করে, তাহলে তা নিয়ে ঢোল পেটানোর দরকার কী?

২. যখন কোনো বন্ধু আপনার বিশ্বাস করে কিছু বলে
কোনো বন্ধু কোনো কথা প্রকাশ করে তা যদি গোপন রাখতে বলে, তাহলে একশভাগ তা রাখা উচিৎ।বিশ্বাস ভঙ্গ করে সে কথা ফাঁস করলে বন্ধুত্ব চিরদিনের জন্য হারাতে হতে পারে।সবচেয়ে ঝুঁকি যেটা তা হলো, আপনি একজনের কাছেও যদি কথাটি ফাঁস করেন, তখন তার ওপর আপনার আর কোনো নিয়ন্ত্রণই থাকবে না। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

হ্যারি পটার খ্যাত লেখিকা জে কে রাওলিং রবার্ট গলব্রেথ ছদ্মনামে একটি ক্রাইম থ্রিলার লিখেছিলেন। তিনি ছদ্মনামের বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। গুটিকয়েক লোক বিষয়টি জানতো। কিন্তু একদিন মিস রাওলিংয়ের আইনজীবী এই ছদ্মনামের ব্যাপারটি তার স্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে বলেন। দুদিন পরই সারা বিশ্ব তা জেনে যায়।

৩. ব্যবসায়িক গোপনীয়তা
অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকতে কিছু তথ্য বা সূত্র গোপন রাখে।যেমন, কোকা-কোলা তাদের রেসিপি খুবই গোপন রাখে। রেসিপিটি একটি কাগজে লিখে তালা দেওয়া একটি ভল্টে রাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মচারী সেটি দেখতে পারেন।গুগলও একইভাবে তাদের সার্চ অ্যালগরিদমের জটিল সব কোড গোপন রাখে।

শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই নয়, যাদুকররাও তাদের কৌশলগুলো গভীর গোপন রাখেন। কিংবদন্তির যাদুকর হুডিনি কখনো কাউকে জানতেই দেননি, কীভাবে তিনি তার বিস্ময়কর কারসাজিগুলো করেন।

৪. নিজের সুরক্ষা
অনেক সময় মানুষকে সমস্যা থেকে প্রতিকার পেতে তার অনেক গোপন, জটিল, ভয়াবহ সব অভিজ্ঞতার কথা উকিল, চিকিৎসক বা ঘনিষ্ঠ কাউকে বলতে হয়।কিন্তু সেসব গোপনীয়তা প্রকাশের আগে ভাবা উচিৎ তার জন্য সে পুরোপুরি প্রস্তুত কিনা।মনোরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে এমন একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘মাইন্ড’ বলছে, কখনো কখনো কাউন্সেলিং বা সাহায্য প্রয়োজন, কিন্তু সে পথে যাওয়ার আগে

নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে: “আমি কি আমার অনুভূতি, আচরণ জানাতে প্রস্তুত?
গভীর গোপন ব্যক্তিগত কথা বা আচরণ নিয়ে খোলামেলা কথা বলার ক্ষমতা কি আমার আছে? অথবা তা না করে অন্যভাবে সাহায্য নেওয়া নিয়ে আমার বাবা উচিৎ?”

৫. কাউকে ‘সারপ্রাইজ’ দেওয়ার ইচ্ছা থাকলে
অনেক মানুষ না জানিয়ে প্রিয়জনের জন্য জন্মদিনের পার্টি আয়োজন করে বা হঠাৎ কোনো উপহার নিয়ে হাজির হয়ে যায়।

ভালোবাসা প্রকাশ করতে এই গোপনীয়তায় ক্ষতি কী?
তবে আগে থেকে জেনে নিতে হবে সেই প্রিয়জন এ ধরণের ‘সারপ্রাইজ; পছন্দ করে কিনা।

৬. যখন স্পর্শকাতর মীমাংসা-আলোচনা চলে
যুদ্ধ, শান্তি বা নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মীমাংসা আলোচনার সময় গভীর গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় যাতে খোলামেলা কথাবার্তা বলা সম্ভব হয়।ব্রিটেনে নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা চ্যাটাম হাউজের গবেষণা পরিচালক ড. প্যাট্রিসিয়া লিউয়িস বলেন, অনেক সময় নিজেদের মধ্যে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই দুপক্ষের জন্য মারাত্মক রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে, গোপনীয়তা তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।

৭. মানুষকে নিরাপদ রাখতে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বহু মানুষ অন্যদের জীবন রক্ষায় অনেক কিছু গোপন রাখতেন।ডেনমার্ক যখন নাৎসীরা দখল করে নেয়, কেলার পরিবার গভীর গোপনীয়তায় এক হাজার ইহুদিকে নিরাপদে সুইডেনে পার করে দিয়েছিল। দুদিনে কেলার পরিবারের তরুণ একজন সদস্য পুরো ডেনমার্ক ঘুরে সমর্থকদের কাছ থেকে ১০ লাখ ক্রোনার জোগাড় করেছিলেন।সেই চাঁদার টাকা দিয়ে সৈন্যদের ঘুষ দেওয়া হয়েছিল এবং নৌকায় গোপনে ঐ ইহুদিদের পার করে দেওয়ার জন্য জেলেদের পয়সা দেওয়া হয়েছিল।

সুতরাং মানুষের জীবন রক্ষায় গোপনীয়তা অবশ্য প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতেই পারে।জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও গোপনীয়তা একটি সর্বগ্রাহ্য পন্থা।আমরা হয়তো কখনই জানবো না গোয়েন্দারা তাদের গোপন অপারেশনে প্রতিদিন কত সন্ত্রাস বা অপরাধ ঠেকাচ্ছেন, কত মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছেন।

Comments

comments