গর্ভধারণ নিয়ে খুটিনাটি ধারণা
‘মা’ ডাক শোনার স্বপ্ন প্রতিটি নারীর আর একজন নারী হয়ত পূর্ণতা পান মাতৃত্বেই। কিন্তু মা হতে দীর্ঘ সময়ের পথ পাড়ি দিতে হয়! বুলে যেতে হয় কষ্টের ব্যাথা গুলোর কথা। নারী জাতির জন্য গর্ভধারণ একটি শিহরণ জাগানো ঘটনা। যদিও কারো কারো সাথে কথা বললে মনে হবে এটি একটি সাধারন ব্যাপার। আবার কারো মতে গর্ভধারণ ধৈর্য ও ভাগ্যের ব্যাপার। মাতৃত্বের সবচেয়ে সুখের অনূভুতি। তবে গর্ভধারণ সম্পর্কে অনেকের মাঝেই আছে কিছু ভ্রান্ত ধারণা।
মন গড়া এসব ভ্রান্ত ধারণার কারণে গর্ভধারণের সময় নানান রকমের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় অনেককেই। আবার এসব ভুল ধারণা ও অজ্ঞতার কারণে অনেক বড় শারীরিক সমস্যা নিয়েও মাথা ঘামান না অধিকাংশ মানুষ। তবে জেনে নেয়া যাক গর্ভধারণ সম্পর্কে এমন কয়েকটি ভুল ধারণা সম্পর্কে।
সহবাস বেশিবার হলে বেশি গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে
অনেকের মাঝেই একটি ভুল ধারণা আছে, আর তা হলো গর্ভধারণের জন্য দিনে যত বেশিবার সহবাস করা যায় তত বেশি ভালো। বারে বারে সহবাসের মাধ্যমে ডিম্বানুর সাথে শুক্রানুর সংযুক্তির সম্ভাবনা বেড়ে যায় বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। একটি মাত্র ডিম্বাণু সাথে সহস্র শুক্রানুর যেকোনো একটির সংযুক্তি ঘটলেই গর্ভধারণ করা সম্ভব। এর সাথে দিনে একাধিক বার সহবাস করার কোনো সম্পর্ক নেই।
অনিয়মিত পিরিয়ড গর্ভধারণে প্রভাব ফেলে না
অনেকেই মনে করেন গর্ভধারণের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ের কোনো ভূমিকা নেই। যাদের পিরিয়ড প্রতিমাসের নির্দিষ্ট সময়ে হয় না এবং পুরো বছরই অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যায় ভুগেন যারা তারা অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে এই ব্যাপারে পরামর্শ করে নিবেন। কারণ যাদের বছরের মাত্র কয়েকবার পিরিয়ড হয় তাদের গর্ভধারণের সম্ভাবনাও কম থাকে। এছাড়াও অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণে গর্ভধারণের সম্ভাব্য সময় নির্নয় করাও বেশ কঠিন হয়ে যায়। তাই অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যাকে অবহেলা না করে গাইনি ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত।
গর্ভধারণে বয়সের কোনো প্রভাব নেই
অনেকে বলেন গর্ভধারণের জন্য বয়স কোনো ব্যাপার না। অনেকে আবার এটাও বলেন যে, কত নারীই তো ৪০ বছর বয়সে সন্তানের মা হয়েছেন, তাই যে কোনো বয়সই গর্ভধারণের জন্য ভালো। এটা ভুল ধারণা। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীড়ে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমতে থাকে। বয়স তিরিশ পার হওয়ার পরে গর্ভধারণের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং মা ও শিশুর স্বাস্থ্যঝুকি বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে গর্ভপাত হওয়ার প্রবণতাও বৃদ্ধি পায়।
গাইনি ডাক্তার বলে দিবেন সন্তান হবে নাকি হবে না
বেশিরভাগ মানুষই গাইনি ডাক্তারের কথা অন্ধের মত বিশ্বাস করেন। আর তা হলো সন্তান হবে নাকি হবে না সেটা গাইনি ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেন বেশিরভাগ মানুষ। আপনার গাইনি ডাক্তার আপনাকে আপনার শারীরিক সমস্যাগুলো জানিয়ে দিতে পারেন এবং সেগুলোর সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারেন মাত্র। আপনার সন্তান হবে নাকি হবে না সেই নিশ্চয়তা দেয়ার ক্ষমতা তার নেই।
গর্ভধারণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। একটি সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মুহূর্তে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। তবে শুধু গর্ভাবস্থায় নয়, এর প্রস্তুতি শুরু হওয়া উচিৎ গর্ভধারণের অনেক আগে থেকেই। সুস্থ মা সুস্থ শিশু সবারই কাম্য।