ঘুম কেড়েছে লকডাউন, দেদার চলছে ওষুধ খাওয়া
অনিদ্রার সমস্যা আগে ছিল না। তবে লকডাউন চলার মাসখানেক পর থেকে মাঝেমধ্যেই রাতে ঘুম আসছে না। পরের দিন গ্রাস করছে ক্লান্তি। এমনই সমস্যা নিয়ে পরিচিত চিকিৎসককে ফোন করেছিলেন বালিগঞ্জের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ঘুমের ওষুধ আনিয়ে খাওয়ার পরে আপাতত মিটেছে সেই সমস্যা। শুধু ওই বৃদ্ধা নন, লকডাউন চলাকালীন অনেকেই নিদ্রাহীনতায় ভুগছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ীরা।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে দেশে শুরু হয়েছে তৃতীয় দফার লকডাউন। বাড়ির কয়েক ফুট পরিসরের মধ্যেই সারাদিন আটকে থাকছেন অধিকাংশ মানুষ। বাইরে বেরোনো বলতে সপ্তাহে দু’-তিন দিন প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে যাওয়া। বাড়ির কাজ ছাড়া মোবাইল, টিভি, খবরের কাগজ, বই নিয়ে কাটছে বাকি সময়। বেশির ভাগেরই
শারীরিক পরিশ্রম এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে অনেকটা। চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তাও রয়েছে অনেকের মধ্যে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এ সব মিলিয়েই নিদ্রাহীনতার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসকদের কাছে ঘুমের ওষুধ লিখে দেওয়ার অনুরোধ বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা প্রেসক্রিপশন লিখে, ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সেই ছবি দেখিয়েই ওষুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। তবে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কথায়, মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আসছেন কম। পরিচিত ওষুধের দোকানে গিয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঘুমের ওষুধ নেওয়ার ভিড় হচ্ছে বেশি।
পরিস্থিতির বিষয়টি স্বীকার করে এসএসকেএম হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক সুবীর হাজরা চৌধুরী বলেন, ‘‘মূলত শারীরিক পরিশ্রম কম হওয়াতেই ঘুম উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ওষুধ ছাড়া আর কোনও বিকল্পও নেই।’’ সুবীরবাবু জানাচ্ছেন, কারও অনিদ্রার সমস্যা হলে প্রথমেই ঘুমের ওষুধ দিচ্ছেন না তাঁরা। দুপুরে ঘুমোতে নিষেধ করা হচ্ছে। তার পরেও ঘুমের অসুবিধা হলে খুব কম মাত্রার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি হাসপাতালের আর এক চিকিৎসকও পরামর্শ দিচ্ছেন, দুপুরে ঘুম বন্ধ করতে। এর সঙ্গে বই পড়া, বাড়ির অন্যদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, সুযোগ থাকলে আবাসন বা বাড়ির ছাদে খুব সকাল ও বিকেলে মিনিট কুড়ি হাঁটার অভ্যাস অনিদ্রার সমস্যা দূর করতে পারে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শুধু ক্লান্তি নয়, রাতে ক্রমাগত ঘুম না-হলে হজমের সমস্যা এবং অন্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও, দীর্ঘদিন মদের দোকান বন্ধ থাকাতেও কারও কারও ঘুমের সমস্যা হচ্ছিল বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। যাঁরা নিয়মিত পান করতে অভ্যস্ত, তাঁদের মধ্যে একটা অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। তার জেরেও উধাও হচ্ছে ঘুম।
অনিদ্রার প্রকৃত কারণ না জেনে ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করা বিপজ্জনক বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এক বার খেতে শুরু করলে তা অভ্যাসে পরিণত হতে পারে বলে সতর্ক করছেন তাঁরা। সুবীরবাবু বলেন, ‘‘টানা চার সপ্তাহ ঘুমের ওষুধ খেলে তা অভ্যাসে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে তবেই ওষুধ খেতে হবে।’’ তবে চিকিৎসকদের এই
সতর্কবাণী উপেক্ষা করে পরিচিত দোকানে গিয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কেনার আবদার বেড়েছে লকডাউনে। সামান্য সমস্যা হলেই কোনও বাছবিচার না করে অনেকে ওষুধ খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। মনোরোগ চিকিৎসক শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আচমকা ওষুধ খাওয়া শুরু না করাই ভালে। প্রথমে হাঁটা, প্রাণায়ামের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’’ বেঙ্গল কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সজল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সংগঠনের তরফে সব ব্যবসায়ীকে বিশেষ ধরনের কিছু ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিক্রি না করার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। ঘুমের ওষুধও তার মধ্যেই পড়ে।’’