করোনার স্ট্রেস ঠেকাতে মদ্যপান? কী বিপদ ডেকে আনছেন জানেন?
একটা সময় রটেছিল, অ্যালকোহলে করোনাভাইরাস মরে।হাতের ভাইরাসের পাশাপাশি মুখ ও গলারও। রটনা ছিল, মাঝেমধ্যে দু’-চার পেগ খেয়ে নিলে সে আর ফুসফুস পর্যন্ত ঢুকতে পারে না, গলা থেকেই বিদায় নেয়। যদিও সে ক্ষেত্রে আর ‘যা রটে, তার কিছু ঘটে’-র নিয়ম খাটেনি। বরং যা রটেছিল, তার পুরোটাই ভুয়ো ও গুজব বলে জানিয়ে দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়, মদ্যপানের ক্ষতিকারক দিকগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কমিয়ে দেয়। ফলে যে কোনও সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই কঠিন হয়।
তবু মদ্যপানের অভ্যাসে রাশ টানতে পারেননি অনেকেই। লকডাউনের সময় মদ জোগানে ব্যর্থ হলেও কউ কেউ আগেই তা কিনে রেখেছিলেন আবার কেউ বা লুকিয়েচুরিয়ে কিনছেন চড়া দামে। কখনও অভ্যাসের ছুতোয়, কোথাও বা স্ট্রেস কমানোর ফাঁপা যুক্তিতে মজে মদ্যপান ছাড়তে পারছেন না অনেকেই।
অ্যালকোহল খাবেন না, বরং ইথাইল অ্যালকোহল মেশানো স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার রাখুন মোবাইল।
রোগ প্রতিরোধে অ্যালকোহলের বাধা
• ‘অ্যালকোহল রিসার্চ জার্নাল’-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত মদ্যপানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফুসফুসে সংক্রমণ তথা নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় অ্যাকিউট রেসপিরেটরি স্ট্রেস সিনড্রোম বা ‘এআরডিএস’ ও সেপসিসের আশঙ্কা।
• কোভিড-১৯-এর রোগীর যে যে কারণে বোগের জটিলতা ও বিপদ বাড়ে, অতিরিক্ত মদ্যপানে ঠিক সেগুলির আশঙ্কাই বাড়ে। অর্থাৎ দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ফলে সংক্রমণ একবার হলে তার বাঁকা পথে যাওয়ার আশঙ্কা প্রতি পদে।
• বেশি মদ খেলে মনের প্রতিরোধ ভেঙে যায়। ফলে তাঁরা এমন অনেক বিপজ্জনক কাজ করেন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় করার কথা ভাবতেই পারেন না। করোনা সংক্রান্ত নিয়ম না মানাও পড়ে তার মধ্যে।তার হাত ধরে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।
• একাকিত্ব, রোগ ও ভবিষ্যতের আতঙ্কের সঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপান যুক্ত হলে তার হাত ধরে বাড়ে চোরা স্ট্রেস।এবং ঘুরপথে শেষমেশ তার প্রভাবে বাড়ে করোনার আশঙ্কা।
• যত বেশি মদ ও তার অনুষঙ্গে এটা-সেটা খাওয়া, তত ওজন বাড়া, হাই প্রেশার-সুগার-কোলেস্টেরল বা হৃদরোগ থাকলে তার প্রকোপ বাড়া। এর প্রত্যেকটা কিন্তু কোভিডের রিস্ক ফ্যাক্টর।
কাজেই বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছেন বলে বা স্রেফ শুযেবসে থেকে বিরক্ত হচ্ছেন বলে অথবা শুধুই অভ্যাসের বশে মদ্য়পানের দিকে ঝুঁকবেন না। বরং অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি কমানো ও মদ্যপান ছেড়ে দেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। মনে জোর এনে সামান্য চেষ্টাতেই ফল মিলবে হাতেনাতে। যদি মদ্যপান ছাড়তে গিয়ে উইথড্রয়াল সিনড্রোম দেখা দেয়, তা হলে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। উইথড্রয়াল সিনড্রোম কাটানোর বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি আছে। সেগুলো মেনে চললে অ্যালকোহল ছেড়ে দেওয়া একেবারেই কঠিন কাজ নয় বলেই মত চিকিৎসকদের।
সূত্র: আনন্দ বাজার।