নিতম্বের ব্রণ নিরাময়ে ঘরোয়া টোটকা
ব্রণ ত্বকের সাধারণ একটি সমস্যা।এটি কেবল আমাদের মুখেই সীমাবদ্ধ থাকে না, শরীরের আরও অনেক স্থানেই হয়ে থাকে। দেহের বিভিন্ন অংশে ব্রণ হওয়ার মধ্যে একটি হলো বাট অ্যাকনি বা নিতম্বে ব্রণ।এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রদাহ, ব্যথা, চুলকানি এবং জ্বালায় জর্জরিত হয়ে পড়েন। তাই এটি চিকিৎসা না করে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
নিতম্বে ব্রণ মূলত ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হওয়া এবং চুলের ফলিকলগুলোর প্রদাহজনিত কারণে হয়। আর এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া পদ্ধতিই যথেষ্ট।
এবার দেখে নেওয়া যাক, নিতম্বে ব্রণ সারাতে কী কী ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
নিতম্বে ব্রণ নিরাময়ের ঘরোয়া উপায়
১) লেবুর রস এবং গ্লিসারিন
অ্যাসিডযুক্ত লেবুতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং গ্লিসারিনে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এই উভয় উপাদানই ব্রণ কমাতে খুব কার্যকর।
উপাদান
ক) ১ চা চামচ লেবুর রস খ) ১ চা চামচ গ্লিসারিন
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) একটি পাত্রে দুটি উপাদানই ভালো করে মেশান। খ) এরপর তুলোয় এই মিশ্রণটি নিয়ে আক্রান্ত জায়গায় প্রয়োগ করুন। গ) ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন এবং পরে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
২) নারিকেল তেল
নারকেল তেলের ইমোলিয়েন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্যগুলো ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে এবং ত্বকে সংক্রমণের চিকিৎসা করতে, নিতম্বে ব্রণ থেকে মুক্তি দেওয়ার একটি শক্তিশালী প্রতিকার।
উপাদান
ক) প্রয়োজন মতো নারিকেল তেল
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) আপনার তালুতে অল্প পরিমাণে নারিকেল তেল নিন। খ) আক্রান্ত জায়গায় নারিকেল তেল লাগান এবং কয়েক মিনিট ধরে সেখানে ম্যাসাজ করুন। গ) সারা রাত রেখে দিন। ঘ) সকালে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
৩) বরফ
নিতম্বের উপরে বরফ ঘষলে, তা ব্রণ নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি ত্বককে শান্ত করে এবং ব্রণজনিত প্রদাহ হ্রাস করে।
উপাদান
ক) ১-২ টি আইস কিউব
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) কয়েক মিনিট ধরে আক্রান্ত স্থানে আইস কিউবগুলো ঘষুন। খ) কোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ার আগে, জায়গাটি শুকিয়ে নিন।
৪) ওটমিল, দই এবং হলুদ
ওটমিল ব্রণ দূর করতে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। দইতে উপস্থিত ল্যাকটিক অ্যাসিড, হলুদের অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে মিলিত হয়ে ত্বকের ছিদ্রগুলি পরিষ্কার করে এবং নিতম্বের ব্রণ চিকিৎসা করে।
উপাদান
ক) ১ টেবিল চামচ গ্রাউন্ডেড ওটমিল খ) ১ টেবিল চামচ দই গ) ১ চা চামচ হলুদ
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) একটি পাত্রে ওটমিল নিন। খ) এতে দই এবং হলুদ যোগ করুন ও ভালভাবে মেশান। গ) আক্রান্ত জায়গায় পেস্ট লাগান এবং কয়েক মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। ঘ) প্রায় পাঁচ মিনিট রেখে দিন। ঙ) পরে এটি ধুয়ে ফেলুন এবং শুকনো করে নিন।
৫) টি ট্রি অয়েল এবং অলিভ অয়েল
টি ট্রি অয়েলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যগুলো নিতম্বের ব্রণ চিকিৎসা করে। এটি প্রদাহ কমাতেও সহায়তা করে।
উপাদান ক) ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল খ) ১ চা চামচ টি ট্রি অয়েল
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) একটি পাত্রে অলিভ অয়েল নিন। খ) তাতে টি ট্রি অয়েল দিয়ে ভালো করে মেশান। গ) মিশ্রণটি আক্রান্ত জায়গায় লাগান। ঘ) ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন এবং পরে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে শুকনো করে নিন।
৬) দই ও হলুদ
আম্লিক প্রকৃতির দইয়ের সঙ্গে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হলুদ মিশ্রিত করে লাগালে নিতম্বের ব্রণ কমে।
উপাদান
ক) ১/২ টেবিল চামচ দই খ) ১ চা চামচ হলুদ
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) একটি পাত্রে দই এবং হলুদ নিয়ে ভালোভাবে মেশান। খ) এরপর মিশ্রণটি আক্রান্ত জায়গায় লাগান এবং শুকানোর জন্য কিছুক্ষণ রাখুন। গ) পরে হালকা গরম পানিতে এটি ধুয়ে ফেলুন।
৭) অ্যালোভেরা
নিতম্বের ব্রণের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরাও বেশ কার্যকরী।
উপাদান
প্রয়োজন মতো ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) আক্রান্ত জায়গায় অ্যালোভেরা জেলটি লাগান। খ) ২০ থেকে ২৫ মিনিট রেখে দিন। গ) পরে হালকা গরম পানিতে এটি ধুয়ে ফেলুন এবং শুকিয়ে নিন।
৮) বেকিং সোডা
অ্যান্টি-ব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত বেকিং সোডা নিতম্বে ব্রণ চিকিৎসার জন্য সেরা ঘরোয়া প্রতিকারগুলোর একটি।
উপাদান
ক) ১/২ চা চামচ বেকিং সোডা খ) ২-৩ চা চামচ পানি
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) বেকিং সোডায় পানি দিয়ে ভালোভাবে মেশান। খ) আক্রান্ত জায়গায় মিশ্রণটি লাগান। গ) প্রায় পাঁচ মিনিট রেখে দিন। ঘ) এরপর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
৯) চালের গুঁড়ো, দই এবং মধু
চালের গুঁড়ো ব্রণ নিরাময়ে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে। আর মধু ত্বকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে ময়েশ্চরাইজ রাখে।
উপাদান
ক) ১ টেবিল চামচ চালের গুঁড়ো খ) ১ চা চামচ দই গ) ১ চা চামচ মধু
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো নিন। খ) তাতে দই এবং মধু দিয়ে ভালোভাবে মেশান। গ) প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে এই মিশ্রণটি আক্রান্ত জায়গায় লাগান। ঘ) পরে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
১০) অ্যাসপিরিন এবং দই
অ্যাসপিরিন এবং দই নিতম্বের ব্রণ কমানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া প্রতিকার।
উপাদান
ক) ৪-৫টি অ্যাসপিরিন খ) ১ চা চামচ দই
ব্যবহারের পদ্ধতি
ক) একটি পাত্রে অ্যাসপিরিন ভাল করে গুঁড়ো করে নিন। খ) এতে দই দিয়ে ভালোভাবে মেশান। গ) আক্রান্ত স্থানে মিশ্রণটি প্রয়োগ করুন। ঘ) না শুকানো পর্যন্ত রেখে দিন। ঙ) পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।