পাইলস রোগের কার্যকর চিকিৎসা
অনেকে আমাদের কাছে পাইলস রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আজকে আমরা জানাবো কিভাবে সফলভাবে পাইলস রোগের চিকিৎসা আপনি করতে পারবেন। অনেকে পাইলস রোগ সম্পর্কে না জানার কারণে অনেক ভুল চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এজন্য আজকের health Doctor BD এর পক্ষ থেকে আমরা আপনাদেরকে জানাবো কিভাবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি আপনার পাইলস রোগ সারাতে পারেন।
বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভিতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা। যা প্রয়োজন সাপেক্ষে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এর নাম হেমোরয়েড Hemorrhoids বা পাইলস Piles।
যখন পায়ুপথের এসব শিরার সংক্রমণ এবং প্রদাহ হয়, চাপ পড়ে তখন হেমোরয়েড বা পাইলসে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। যাকে সাধারণ কথায় অর্শরোগ বলা হয়।
পায়ুপথের ভেতরের অর্শরোগ বা পাইলস ফুলে মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসাকে ৪টি পর্যায় ভাগ করা হয়।
১. প্রথম পর্যায় (পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে না বা প্রলেপস হয় না)
২. দ্বিতীয় পর্যায় (পায়খানার পর পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়)
৩. তৃতীয় পর্যায় (পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে এবং নিজে ঠিক করতে হয়)
৪. চতুর্থ পযার্য় (পাইলস ফুলে বাইরে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয়ে এবং তা আর নিজে ঠিক করা যায় না)
পাইলসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, বহু পুরনো ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা, কায়িক শ্রম কম করা। গর্ভকালীন সময়ে, পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস ইত্যাদি কারণে রোগের আশংকা বেড়ে যায়। সর্বোপুরি পোর্টাল ভেনাস সিস্টেমে কোন ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যে কোনো কারনে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোগুলোতে চাপ ফলে পাইলস সৃষ্টি হয়।
অর্শরোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচেছ- পায়ুপথের অন্ত্র বা ভেতরের অর্শরোগে সাধারণত তেমন কোন ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না, অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃ অর্শরোগে পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সাথে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করা টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।
চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা করে ও রোগীর উপর্সগ শুনেই অর্শরোগ সনাক্ত করতে পারবে। এছাড়া পায়ুনালীর সমস্যাগুলো খুব খারাপ কি না বা অন্য কোন রোগ আছে কি না তা জানতে অ্যানোস্কপি বা সিগময়েডস্কপি বা কলোনেস্কপি পরীক্ষা, মলের লুকায়িত রক্ত নির্ণয় পরীক্ষা (ওবিটি), মলের আনুবীক্ষনিক পরীক্ষা করাতে পারেন।
একটা কথা আমরা সবাই জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম, অর্শরোগ যেহেতু জীবনধারা ও খাদ্যাভাস এ সাথে অনেকাংশে জড়িত, তাই শৃঙ্খলিত জীবন যাপনই এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। তাই নিয়ম করে অতিরিক্ত কোথ না দিয়ে সাবলিলভাবে মলত্যাগ করা, যেগুলো ফল খোসাসহ খাওয়া যায়, তা খোসাসহ খাওয়া, আশঁযুক্ত খাবার পেঁপে তরকারিসহ সবধরনের শাকসবজি বেশি খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, লালমাংশ পরিহার করা, প্রাথমিক অবস্থায় উষ্ণ পানি এবং ক্রনিক বা রোগ পুরাতন হলে শীতল পানিতে নিতম্ব স্নান করতে পারেন।
অর্শরোগ প্রতিকারের পূর্বে মূল লক্ষ্য হবে অর্শরোগ হবার মূল কারণগুলো সনাক্ত করে তা প্রতিরোধ করা। অর্শরোগ প্রতিকারে যেসব ভেষজ উপাদান কার্যকর তা হচ্ছেঃ বাসক, থানকুনি, আমলকী, হরীতকী, মেহেদীপাতা, ইসাপগুল, নিমপাতা ও নিমতেল, ভাংপাতা, মুকিল, জিংগবিলোবা।
অর্শরোগকে রোগের ধরনভেদে ০৪টি ডিগ্রীতে ভাগ করে এর পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়।
১ম ও ২য় ডিগ্রির পাইলস সাধারণত ঔষধ দিয়ে সারে। রক্তপাতযুক্ত অর্শরোগে বাসকপাতার রস ০১ (এক ) চামচ করে দিনে তিনবার সেবন করুন। অথবা হরীতকীচূর্ণ একচামচ পরিমান দৈনিক একবার গরমপানি সহ সেবন করুন। সাতটি নিমফুল বা নিমবীজের মজ্জা পানিসহ সকালে সেবন করুন। ইসাপগুল এক চামচ পরিমান পানিসহ রাতে সেবন করুন।
ইসাপগুল, নিমপাতা ও নিমতেল, মুকিল এ-জাতীয় বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি ইউনানি ঔষধ চিকিৎসকের পরার্মশ মতো খেতে পারেন। এছাড়া র্অশরোগ যদি ভেষজ ঔষধ যা অ্যালোপেথিক ঔষধ ও প্রতিরোধ চিকিৎসায় না সারে তাহলে একজন কলোরেকটাল সার্জনের পরার্মশ মতো চিকিৎসা নিতে পারেন । যদি এ রোগ ডায়াগোনোসিস না করানো হয় বা চিকিৎসা না নেয়া হয়, তাহলে দেহ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে পারে, পায়ুপথের ক্যান্সার হতে পারে।
এখানে একটা কথা না বললেই নয় রোগীদের সচেতন ও সাবধান হতে হবে যে এর চিকিৎসায় রাস্তার ধারের চটকদার ক্যানভাসারের খপ্পড়ে পড়বেন না। এ ধরনের চটকদার হাতুড়ে চিকিৎস থেকে এ রোগে আরোও বেশি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।