ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চাইলে নিয়মিত আদা খান
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রে এমনটা দাবি করা হয়েছে যে, নিয়মিত অল্প করে আদা খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জিঞ্জেরল নামক দুটি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ক্যান্সার রোগকে ধারে কাছেও ঘেঁষতে দেয় না। আসলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে দেহের অন্দরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
শীতের সময় পিঠের ব্যথা খুবই কমন একটি সমস্যা। সেই সঙ্গে জয়েন্ট পেইন তো আছেই। আর যদি বয়স ৫০ পেরিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই! সেক্ষেত্রে ব্যথা যেন প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে আদা কষ্ট কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে আদায় উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন এত মাত্রায় কমিয়ে দেয় যে কোনো ধরনের ব্যথা কমতে সময়ই লাগে না। শুধু তাই নয়, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতেও এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু দিন আগে একদল বিজ্ঞানী আদার উপর একটি গবেষণা চালাচ্ছিলেন। সে সময় তারা খেয়াল করেছিলেন আদা খাওয়া মাত্র আমাদের শরীরে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান তৈরি হতে শুরু করে, যা শরীরের প্রতিটি কোণায় পৌঁছে গিয়ে যন্ত্রণা কমাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে থাকে। এই কারণেই তো আর্থ্রাইটিস রোগীদের নিয়মিত আদা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।
নিয়মিত আদা খাওয়ার অভ্যাস করলে যে শুধু বডি পেইন এবং ক্যান্সারের মতো রোগ থেকেই দূরে থাকা সম্ভব হয়, এমন নয় কিন্তু! সেই সঙ্গে আরো অনেক উপকার পাওয়া যায়। যেমন…
১. ডায়রিয়ার মতো রোগের প্রকোপ কমায়
শীতকাল মানেই জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া! আর কব্জি ডুবিয়ে খেতে খেতে এক সময় গিয়ে পেট ছেড়ে দেওয়াটাও খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তাই তো এই শীতে ঝাল-মশলা দেওয়া খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত যদি অল্প করে আদা খেতে পারেন, তাহলে শুধু ডায়রিয়া নয়, কোনো ধরনের পেটের রোগেই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
২. পেশীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
সারা সপ্তাহ দৌড়-ঝাঁপ করে কাজ করতে করতে সপ্তাহান্তে আমাদের শরীরের প্রায় প্রতিটি পেশীই বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই সময় তাদের চাঙ্গা করার জন্য কী করা যেতে পারে? কিছুই নয়, এমন পরিস্থিতিতে এক গ্লাস আদা-জল পান করে ফেলুন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে শরীর চাঙ্গা হয়ে উঠবে। আসলে আদা, পেশীর কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো বডি বিল্ডারদেও আদা- জল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
৩. ডায়াবেটিস রোগকে দূরে রাখে
নিয়মিত আদার সঙ্গে অল্প করে লেবুর রস মিশিয়ে পান করার অভ্যাস করলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, তেমনি শরীরে জিঙ্কের ঘাটতি দূর হতে শুরু করে। এই খনিজটি ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা এত মাত্রায় বাড়িয়ে দেয় যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না।
৪. ওজন হ্রাস করে
অতিরিক্ত ওজনের কারণে যদি চিন্তায় থাকেন, তাহলে আজ থেকেই আদা খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন দারুন উপকার মিলবে! আসলে আদার অন্দরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমতে থাকে। সেই সঙ্গে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত মেদও ঝরতে শুরু করে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসতে একেবারেই সময় লাগে না।
৫. জ্বরের চিকিৎসায় কাজে আসে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলার মধ্য দিয়ে জ্বর এবং সংক্রমণের মতো শারীরিক সমস্যার প্রকোপ কমাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পলন করে থাকে। তাই তো সারা শীতকাল জুড়ে বাচ্চাদের নিয়মিত আদা জল খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা।
৬. হাড়কে শক্তপোক্ত করে
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি ইউনির্ভাসিটির গবেষকদের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে প্রদাহ কমানোর মধ্যে দিয়ে অ্যার্থ্রাইটিসের মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে আদার শরীরে থাকা জিঞ্জেরল নামক এটি উপাদান বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়
আদায় উপস্থিত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন, যা ত্বকের অন্দরে জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। সেই সঙ্গে কোলাজেনের উৎপাদনও বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তে শুরু করে। প্রসঙ্গত, এই মশলাটিতে থাকা ভিটামিন এ এবং সি চুলের সৌন্দর্য বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ত্বকের উপর বয়সের ছাপ না পড়ুক, এমনটা যদি চান, তাহলে নিয়মিত আদা খেতে ভুলবেন না যেন!
৮. ব্রেন পাওয়ার বাড়ায়
একাধিক গবেষণায় একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে আদায় উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উপকারি ভিটামিন, সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যাতে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে না যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই স্মৃতিশক্তি বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে বুদ্ধিরও বিকাশ ঘটে চোখে পড়ার মতো।
৯. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে নিয়মিত সকাল বেলা যদি এক গ্লাস করে আদা জল পান করা যায়, তাহলে পাকস্থলির কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। সেই সঙ্গে পাঁচক রসের ক্ষরণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমতে শুরু করে। প্রসঙ্গত, গর্ভাবস্থায় সকাল সকাল যদি এই পানীয়টি খাওয়া শুরু করতে পারেন, তাহলে মর্নিং সিকনেসের মতো সমস্যা একেবারে কমে যায়।