নতুন এক রক্ত পরীক্ষা দেবে স্তন ক্যান্সারের আগাম বার্তা
নারীর জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ বার্তা বয়ে আনতে পারে স্তন ক্যান্সার। সময়মতো সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার থেকে মুক্তি মেলে।
তবুও একটা ভয় থেকেই যায়। তা হলো, আবারো কি এই মরণব্যাধি ফিরে আসতে পারে? দুঃখজনক হলেও উত্তরা ‘হ্যাঁ’। অনেকেরই স্তন ক্যান্সার আবারো ফিরে আসে। কিন্তু লক্ষণগুল আগেভাগেই ধরা যায় না। ফলে বিপদব ঘটেই যায়। কিন্তু এবার নতুন এক রক্তপরীক্ষা আশা জাগিয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমে কারো দেহে স্তন ক্যান্সার আবারো ফিরে আসবে কিনা তা বোঝা যাবে।
প্রাথমিক গবেষণার পর দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সার চিকিৎসা নেওয়ার ৫ বছর পর এই পরীক্ষা করতে হবে। এতে বোঝা যাবে আক্রান্ত নারী আবারো আক্রান্ত হতে পারেন কিনা।
বেশ আগেই বোঝা যাবে সম্ভাবনার কথা। ‘লিকুইড বায়োপসিস’ নামের এই পরীক্ষা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে, কোন নারীর দীর্ঘসময় ধরে চিকিৎসা দরকার। কিংবা কোন কারণে তার ক্যান্সার আবারো ফিরে আসতে পারে।
নিউ ইয়র্কের মন্টেফিয়োরি আইনস্টাইন সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ারের বিশেষজ্ঞ ড. জোসেফ স্পারানো বলেন, ক্যান্সার ফিরে আসার আগাম লক্ষণ শনাক্ত করবে এই পরীক্ষা। ফলাফল যদি নেগেটিভ আসে, তবে ৯৮ শতাংশ নিশ্চিত হয়ে বলা যায় যে আগামী দুই বছরের মধ্যে ক্যান্সার দেখা দেবে না। চিকিৎসা লাগবে কিনা তাও বোঝা যাবে।
এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD
সান অ্যান্টোনিও ব্রেস্ট ক্যান্সার সিম্পোজিয়ামে এই পরীক্ষার কথা তুল ধরেন বিজ্ঞানী। জানান, ‘সেলসার্চ’ পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে ক্যান্সারের কোষ খুঁজে বের করা হবে। চিকিৎসা নেওয়ার বহু দিন পরও অনেকের দেহে এই কোষের দেখা মিলতে পারে। অর্থাৎ, তারা আবারো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় আছেন। ক্যান্সার রোগীদের ওপর ইতিমধ্যে যুগ ধরে এই পরীক্ষার কার্যকারিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত পরীক্ষাটি নারীদের কতটা নিরাপত্তা দিতে পারবে তা পরিষ্কার হয়নি।
শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির স্তন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. মাসিমো ক্রিস্টোফানিলি জানান, নতুন এই গবেষণা সঠিক পথে সম্পন্ন করলে ব্যাপক উপকারী হবে। তিনি নিজেও এই পরীক্ষা নিয়ে গবেষণা করছেন এবং তা উন্নতকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
গবেষণায় ৫৪৭ জন নারীর ওপর দীর্ঘমেয়াদে পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের চিকিৎসার ইতিহাস বিশ্লেষণ করা হয়। তাদের দুই-তৃতীয়াংশের দেহে ক্যান্সারকে উর্বর করেছে ইস্ট্রোজেন। অধিকাংশের দেহে অক্সিলারি লিম্ফ নডস নামের এক গ্রন্থিতে ক্যান্সার ছড়ায়। তবে তা সীমিতভাবে। তাদের সবাই ওষুধ ও কেমোথেরাপি নিয়েছেন। এতে ক্যান্সার পুনরায় বিস্তারের সম্ভাবনা আগামী ৫ বছরের জন্যে রহিত করা হয়। ক্ষতিকর হরমোন ব্লকার দিয়ে আগামী ১০ বছরের জন্যেও নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। কিন্তু এসব চিকিৎসার অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। ফলে ৫ বছর পর আবারো ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
এ গবেষণায় নারীদের দেহে ৫ বছর পর সেলসার্চ পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের অনেকেরই দেহে আবারো ক্যান্সারের কোষ মিলেছে। তাদের আবারো চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রদান করা হয়। তাদের ৫ শতাংশের রক্ত পরীক্ষায় আবারো ক্যান্সারের সম্ভাবনা ধরা পড়ে।
এই পরীক্ষাটি নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি এটাকে পরিপূর্ণতা দেওয়া যায়, তবে ক্যান্সারে আক্রান্তরা আবারো ঝুঁকির মুখে পড়ার আগেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারবেন। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হবে।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস