জিভের রঙ দেখেই জেনে নিন আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা!
জিভ দিয়ে আমাদের কী কী কাজ হয়? জিভের মাধ্যমে কথা তার সৌন্দর্য লাভ করে। আবার খাবারের স্বাদকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করতেও সাহায্য করে এই জিভ।
কারণ, আমাদের জিভে অসংখ্য স্বাদকোরক থাকে। তাই জিভ হল আমাদের শরীরের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যা আমাদের জিভে হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলির নানা কারণও আছে। সবসময় এই কারণগুলি জানা বা সেসব সম্পর্কে সাবধানতা অবলম্বন করা হয়ে ওঠে না। যদিও জিভকে সুস্থ রাখতে হলে এই ব্যাপারে বেশ কিছু জিনিস জেনে রাখা উচিত।
১. জিভ লাল হয়ে যাওয়ার অর্থ কী?
জিভ লাল হয়ে যাওয়া, একইসঙ্গে চকচকে আকার ধারণ করলে বুঝতে হবে যে শরীরে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি আছে। আমাদের দেহের ভেতরে ভিটামিন বি১২ এবং আয়রনের অভাব হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় জিভের শেষ প্রান্তে থাকা বৃন্তগুলি। জিভ যখন লাল এবং চকচকে হয়ে ওঠে, তখন আমাদের জিভের ভেতরে থাকা এই বৃন্তগুলি সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই বিষয়গুলোর উপর ভিডিও বা স্বাস্থ্য বিষয়ক ভিডিও দেখতে চাইলে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটি ঠিকানা: – YouTube.com/HealthDoctorBD
এই ধরণের সমস্যা সবথেকে বেশি দেখা যায় নিরামিষাশীদের ক্ষেত্রে। কারণ ভিটামিন বি১২ নির্দিষ্ট কিছু মাছ এবং মাংসের মধ্যেই মেলে। তাই যারা নিরামিষ খান এবং এই ধরণের সমস্যায় ভোগেন, তাদের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন এমন সমস্যা চলতে থাকলে তা পেটের সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
২. কালো বা খয়েরি দাগ
জিভের উপরিভাগ কি কালো বা খয়েরি রঙ ধারণ করেছে? ঠিক করে মুখের ভেতরটা পরিষ্কার না করলে এই ধরণের সমস্যা হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে এমনটা হলে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। আসলে আমাদের জিভের উপরিভাগে প্রচুর পরিমাণে ছোট ছোট বৃন্ত থাকে, যা সারাজীবন ধরে ছোট-বড় হতে থাকে। তবে সঠিক মাপে থাকলে কোনও সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় তখনই, যখন বৃন্তগুলি মাপে বড় হয়ে ওঠে। এমনটা হলে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বাড়তে পারে এবং খাবারের স্বাদও সঠিকভাবে উপভোগ করা যায় না। প্রসঙ্গত, এই ধরণের সমস্যা বেশি হয় যারা চা, কফি এবং ধূমপান বেশি মাত্রায় করে থকেন। অনেক সময় ঠিকমতো দাঁত না মাজা এবং মুখের ভিতর পরিষ্কার না রাখলেও জিভে এই ধরণের সমস্যা হয়ে থাকে।
৩. জিভ সাদা হয়ে যাওয়া
মুখের ভেতরে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যান্ডিডা সৃষ্টি হতে থাকলে এই ধরণের সমস্যা হয়। মূলত, জিভে ছত্রাক জাতীয় সংক্রমণ হওয়ায় জিভ সাদা হয়ে যায় এবং ছোট ছোট ফুসকুড়ির মতো জিনিস জিভের ওপরে তৈরি হয়। আসলে আমাদের জিভে কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক সবসময়ই থাকে। তবে এটি বেড়ে গেলে তখন বাইরে থেকে আমাদের ওষুধ খেতে হয়। এতে ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হলেও ছত্রাক নষ্ট হওয়া মুশকিল হয়ে যায়। এই ধরণের সমস্যায় স্বাদ গ্রহণে সমস্যা হয় এবং জিভে খুব যন্ত্রণাও হতে পারে। একইসঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যেতে পারে। এই ধরণের সমস্যা শিশুদের মধ্যে সবথেকে বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়াও, ডায়াবেটিস রোগী, কেমোথেরাপি হয়েছে এমন ব্যক্তি এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যা হতে পারে। যদি জিভ সাদা হয়ে যায় বা এমন কোনও উপসর্গ দেখেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখানো উচিত।
৪. বলিরেখা বা ফাটলের মতো সৃষ্টি হওয়া
জিভে লম্বা রেখা বিশিষ্ট ফাটলের মতো সৃষ্টি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এর পেছনে একটি কারণও আছে। তা হল, আপনার বয়স হয়ে যাচ্ছে। আসলে আমাদের বয়স যত বাড়তে থাকে, ততই জিভে এই ধরণের ফাটল দেখা যায়। এতে চিন্তার কোনও কারণ নেই। যদিও দাঁতের সঠিক যত্ন না নিলেও এই সমস্যা হতে পারে। এই ধরণের সমস্যায় জিভে ব্যাথা, দুর্গন্ধ এবং কখনও জ্বালাও হতে পারে। এই ধরণের সমস্যা দূর করতে ছত্রাকনাশক ওষুধ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন।
৫. সাদা ছোট ধরণের দাগ
জিভে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অসংখ্য ছোট ছোট সাদা ধরণের দাগ বা ফুসকুড়ি হতে পারে। এই ধরণের দাগকে বলা হয় লিউকোপ্লাকিয়া। এই ধরণের সমস্যা সব থেকে বেশি দেখা যায় যারা ধূমপান করেন, তাদের ক্ষেত্রে। আর এই সমস্যা থেকেই ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রায় ৫ থেকে ১৭ শতাংশ। প্রসঙ্গত, লিউকোপ্লাকিয়া হলে ধূমপান বন্ধ করে দেওয়া উচিত। মূলত জিভের নীচে এই সমস্যা দেখা যায়। আরও একটি কারণে জিভে এই ধরণের দাগ বা ফুসকুড়ি হতে পারে। তা হল, দাঁতের সঙ্গে জিভের অনবরত ঘষা লাগা।
৬. লাল ফুসকুড়ি বা ফুলে গেলে
জিভের যে কোনও অংশে লাল ফুসকুড়ি হলে জিভে ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। আবার এই ধরণের সমস্যা নিজে থেকেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। যদি ঘন ঘন এই সমস্যা হয় এবং সারতে না চায়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। এই সমস্যা সৃষ্টির জন্য কোনও বয়সের দরকার পড়ে না। শুধুমাত্র ধূমপান করলেই এই ধরণের সমস্যা অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীক্ষেত্রে এইচপিভি ভাইরাসের থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
৭. জ্বালা করা
এই ধরণের সমস্যা নারীদের ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি হতে দেখা যায়। মূলত, একটি বয়সের পর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে এই ধরণের সমস্যা হতে পারে। অথবা যদি আপনার বয়স খুব বেশি নয়, অথচ এই ধরণের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে হয়তো আপনি ভুল পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজছেন। এছাড়াও এমনটা হতে পারে হরমোনের পরিবর্তনের কারণেও।
৮. উঁচুনিচু ধাপের মতো সৃষ্টি হওয়া
জিভের মধ্যে উঁচু নিচু ধাপের মতো সৃষ্টি হলে তাতে চিন্তার কিছু নেই। এই ধরণের জিভকে বলা হয় জিওগ্রাফিকাল টাং। এই ধরণের জিভে কোনও ক্ষতি বা ভয়ের আশঙ্কা নেই। প্রায় ১৪ শতাংশ ব্যক্তির জিওগ্রাফিকাল টাং থাকে। যদিও, জিভে এমন উঁচু নিচু সৃষ্টি হওয়ার পেছনে স্বাদকোরকের কোনও ভূমিকা থাকলেও থাকতে পারে। এই অবস্থায় কোনও চিকিৎসার দরকার পড়ে না। যদিও, এর থেকে মাঝে মাঝে ব্যাথা হতে পারে। এই কারণে এক্ষেত্রে ডাক্তারেরা স্টেরয়েড এবং অ্যান্টিহিস্টামাইন জাতীয় মুখ ধোয়ার ওষুধ দিয়ে থাকেন।
৯. ব্যাথাযুক্ত ফোসকা
এই ধরণের সমস্যা জিভে হলে বুঝবেন আপনি খুব চিন্তিত। গালের দিকে বা জিভে এগুলি হয়ে থাকে। অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক এবং অসুবিধার সৃষ্টি হয় এর জন্য। যদিও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে থেকেই সেরেও যেতে পারে জিভের ব্যাথাযুক্ত ফোসকা। তবে, বাড়াবাড়ি হলে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া বিশেষভাবে জরুরি। আবার কখনও কখনও এই সমস্যা ঠোঁটের ভিতর দিকেও দেখা যায়।