৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, শুক্রবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর!

কই বোতল সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ব্যবহার করা সবচেয়ে ক্ষতিকারক।

অনেকেরই প্লাস্টিকের বোতল থেকে পানি পানের অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান যে ক্ষতিকর তা’ অনেকেই জানেন না। প্লাস্টিকের বোতলে পানি পানের ফলে অনেক জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। প্লাস্টিককে বোতল পরিষ্কার দেখালেও, মোটেই পরিষ্কার নয়। একই বোতল সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস ব্যবহার করা সবচেয়ে ক্ষতিকারক।

প্রায় ৩ লাখ ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় বোতলের প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে। ওই বোতলে পানি খাওয়া মানে কোনো টয়লেট সিট চাটার সমান। স্ক্রু-টপ, স্লাইড টপ স্কুইজ টপ এবং স্ট্র টপ এই চার ধরণের বোতলের উপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, স্লাইড টপ বোতলে সবচেয়ে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। তবে স্ট্র টপ এবং স্টেইনলেস স্টিল বোতলে ব্যাকটেরিয়ার প্রভাবটা কম থাকে।

তাইতো বাংলাদেশেও প্লাস্টিক বোতল উৎপাদন ও ব্যবহার, পুণরায় ব্যবহার করে পানি, কোমল পানীয় ও ওষুধসহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ বন্ধে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। জনস্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আর জে খান রবিনের দায়ের করা রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, প্লাস্টিক বোতলে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানকে বিজ্ঞানীরা মানবদেহের জন্য হরমোন বিপর্যয়কারী উপাদান বলেছেন।

প্লাস্টিক বোতলে ব্যবহৃত উপাদান পানিতে খুব দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া সংগঠিত করে। এ বিক্রিয়া মিশে যায় বোতলজাত পানি, খাদ্য দ্রব্য ও ওষুধের মধ্যে। ফলে প্লাস্টিক বোতল দূষণ থেকে মুক্ত থাকে না। এছাড়া প্লাস্টিক বোতল পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর।

ক্ষতিকর হলেও এই প্লাস্টিক বোতল উৎপাদন ও ব্যবহার কমছে না বরং বাড়ছেই। অথচ প্লাস্টিক বোতল আমাদের জীবনকে নিয়ে যাচ্ছে অকালমৃত্যুর দিকে। এসব প্লাস্টিক মাটিতে মিশে যেতে হাজার বছর লাগবে। এর কারণে নষ্ট হয় ভূমির উর্বরতা ও ব্যাহত হয় জলাধারের স্বাভাবিক গতি।

বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বোতলের পানিরও ভোক্তাদের জন্য কম স্বাস্থ্যকর। কারণ যেসব উপাদান দিয়ে প্লাস্টিক বোতল তৈরি হয়, তা পানিতে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে দেয়, যা পানকারীর স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বজুড়েই অন্তত ২২ শতাংশ প্লাস্টিকের বোতলে ক্ষতিকর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। ফলে এ বোতল তৈরির ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদিত হয়। ক্ষতিকর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে নিকেল, ইথাইলবেনজিন, ইথিলিন অক্সাইড, বেনজিন প্রভৃতি।

এসব রাসায়নিক পদার্থ মানবদেহে ঢোকার পর হরমোনের স্বাভাবিক কাজে বাধা দেয়। পাশাপাশি মুটিয়ে যাওয়া, অকালে যৌবনের চিহ্ন দেহে ফুটে ওঠা, উর্বরতা বা সন্তান জন্মদানের হার কমে যাওয়া, স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, জরায়ু ক্যান্সার, হাইপারঅ্যাকটিভ শিশু, অটিজম, হৃদরোগও এসব রাসায়নিক পদার্থের কারণে হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এসব রাসায়নিক পদার্থের নাম দিয়েছেন ‘এন্ডোক্রাইন ডিজরাপ্টার্স’। এন্ডোক্রাইন হচ্ছে দেহের এমন একটি গ্রন্থি যা থেকে নির্গত রস রক্তের মাধ্যমে আমাদের টিস্যুতে পৌছায়। প্লাস্টিকের ক্ষতিকর উপাদান পানি ও খাদ্যের মাধ্যমে দেহে ঢোকার পর তা প্রাকৃতিক এস্ট্রোজেনের মতোই আচরণ করে। এতে দেহের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়।

মূলত দুই ধরণের প্লাস্টিক দিয়ে এসব তথাকথিত মিনারেল বা ড্রিংকিং ওয়াটারের বোতল তৈরি হয়। এর একটি পলিকার্বন, যা বিসফেনল এ (বিপিএ) থেকে উ‍ৎপাদিত এবং অন্যটি পলিইথিলিন টেরেফথালেট বা পিইটি, যা পলিইথিলিন থেকে উৎপাদিত। পলিইথিলিনকে নিরাপদ বিবেচনা করা হলেও বিপিএ ক্ষতিকর কারণ বিপিএ প্লাস্টিকের আধারে জমে থাকা উপাদান দ্রবীভূত করার ক্ষমতা রাখে। পানিতে এসব উপাদান মিশে যায় সহজেই।
বিপিএর সঙ্গে এক প্রকার হরমোনের গাঠনিক মিল রয়েছে। এটি ওয়েসট্রোজেন মিকি হরমোন নামে পরিচিত। বিপিএ নানা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণ। যেমন— অনুর্বরতা, মোটা হয়ে যাওয়া, ডায়াবেটিস, গলার ক্যান্সার, এমনকি এ উপাদান কেন্দ্রীয় সংবেদনশীলতাকেও অবশ করে দিতে পারে। স্তন ও জরায়ু ক্যান্সারের কারণও হয়ে উঠতে পারে এ বিপিএ।

পানিতে বিদ্যমান কিছু মাইক্রো-অর্গানিজম মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা বিপজ্জনক নয়। কিন্তু প্লাস্টিকের বোতলে ঢুকানোর পর তা সত্যি বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। প্লাস্টিক বোতল-পানিতে যে মাত্রায় ক্লোরিন মেশানো হয়, তাতে পানির অপকারী ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি উপকারি ব্যাকটেরিয়াও মারা যায়। আর এটার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে, মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল বা অকার্যকর হয়ে যাওয়া।
গ্লাস তৈরির জন্য কাচ তৈরি কালে যে পরিমাণ ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত হয়, সমপরিমাণ প্লাস্টিক তৈরিতে তার চেয়ে একশ গুণ বেশি ক্ষতিকর পদার্থ নির্গত হয়। প্লাস্টিক বোতলের পুনর্ব্যবহার ব্যাকটেরিয়া দূষণের জন্য দায়ী। প্রতিবার ব্যবহারের পর তা এমনভাবে ধুতে হবে, যেন অন্য কোনো উপাদান, যেমন- সাবান প্রভৃতি এর সঙ্গে লেগে না থাকে। তাহলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে অন্তত রেহাই মিলবে। তবে অবশ্যই তা ঠাণ্ডা পানিতে ধুতে হবে। কারণ তাপে প্লাস্টিকে ব্যবহূত রাসায়নিক পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়; যা শরীরের ক্ষতি করে। তাপ লাগলে প্লাস্টিক বোতলের পানিতে খুব দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। এ পানি মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। সূত্র: নিরাপদ নিউজ

Comments

comments