‘ব্যক্তিগত’ স্বাস্থ্য রক্ষার্থে যে কাজগুলো কখনোই করা উচিৎ নয় একজন নারীর!
স্বাস্থ্য সচেতনতা সকলের মাঝে থাকা উচিৎ। সুস্বাস্থ্যের জন্য কী করা উচিৎ এবং কী করা উচিৎ নয়, সে সকল বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান থাকলে অসুস্থ হবার সম্ভবনা কমে যায় অনেকাংশে। বিশেষ করে প্রত্যেক নারীর উচিৎ নিজের স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা সঠিকভাবে জেনে মেনে চলা।
নারীদের গোপনাঙ্গ খুবই স্পর্শকাতর একটি স্থান। যেখানে খুব দ্রুত খারাপ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ ঘটতে পারে। যার ফলে নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মাঝে পড়ার সম্ভবনা থাকে অনেক বেশী।
বেশিরভাগ নারীরা তাদের শরীরের অন্যান্য অংশের প্রতি যত্নশীল হলেও, গোপনাঙ্গের যত্নের ব্যাপারে খুবই উদাসীন। অনেকেই তাদের গোপনাঙ্গের স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে তেমন কিছুই জানেন না। তেমনই একটি তথ্য হলো- নারীদের সুস্থ গোপনাঙ্গের লক্ষণ! নারীদের গোপনাঙ্গ প্রাকৃতিকভাবেই এসিডিক এবং এতে থাকে উপকারী কিছু ব্যাকটেরিয়া। যা গোপনাঙ্গে যে কোন ধরণের অস্বস্থিভাব এবং ইনফেকশন হওয়া থেকে প্রতিহত করে।
নিজের সুস্থতা এবং সুরক্ষার জন্য প্রতিটা নারীর প্রয়োজন তাদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে জানা। বিশেষ করে যে সকল কাজ কখনোই করা উচিৎ নয় তাদের গোপনাঙ্গে।
১/ ঘরোয়া প্রতিকারমূলক উপাদান এড়িয়ে চলা
নারীদের গোপনাঙ্গে প্রাকৃতিকভাবে কিছু উপাদান ও ব্যাকটেরিয়ার সমতা থাকে। তবে কোন কারণে ঘরোয়া উপায়ে তার যত্ন নিতে গেলে অনেক সময় নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন: টি ট্রি ওয়েল ব্যবহারের ফলে প্রচণ্ড পেটেব্যাথা হবার সম্ভবনা থাকে। অনেক সময় ইনফেকশনের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই গোপনাঙ্গে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে মনে হলে নিজে ঘরে বসে কোন উপাদান ব্যবহার না করে দ্রুত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
২/ অতিরিক্ত টাইট/স্কিনি জিন্স প্যান্ট না পরা
অনেকেই অতিরিক্ত টাইট জিন্স প্যান্ট পরে থাকেন। যেটা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। এর পরিবর্তে সুতির ঢিলেঢালা প্যান্ট পরতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত টাইট প্যান্ট পড়ার ফলে চাপের সৃষ্টি হয়। যেটা থেকে গোপনাঙ্গের আশেপাশের অংশে ব্রণ হওয়া সহ ইষ্ট ইনফেকশনও দেখা দিতে পারে। যে কারণে বায়ু চলাচল করতে পারে এমন কাপড়ের প্যান্ট ব্যবহার করতে হবে।
৩/ গোপনাঙ্গে এবং তার আশেপাশের অংশে কোন সুগন্ধি ব্যবহার না করা
আপনি কি জানেন, আপনার গোপনাঙ্গ কতোটা স্পর্শকাতর, সূক্ষ্ম এবং দূর্বল? অনেক বেশী স্পর্শকাতর শরীরের এই অংশে অথবা এর আশেপাশের অংশে কখনোই কোন সুগন্ধি ব্যবহার উচিৎ নয়। কারণ এতে গোপনাঙ্গের স্বাভাবিক সিষ্টেমে ব্যাঘাত ঘটে থাকে। যার ফলে গোপনাঙ্গের pH এর মাত্রায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় ইনফেকশন তৈরি হয়।
৪/ গোপনাঙ্গের অংশে চুলকানো থেকে বিরত থাকা
এটা খুবই স্বাভাবিক যে শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই গোপনাঙ্গ ও তার আশেপাশের অংশেও চুলকানির উপদ্রব দেখা দিবে। এমনকি অনেক বেশী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলেও। তবে এমন অস্বস্থি দেখা দিলেও সেই অংশ চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫/ হ্যান্ড শাওয়ার খুব বেশী পরিমাণে ব্যবহার না করা
গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখার জন্য অনেক নারীই হ্যান্ড শাওয়ার অনেক বেশী ব্যবহার করে থাকেন। যার ফলে গোপনাঙ্গে অবস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিনষ্ট হয়ে যায়, যা কিনা গোপনাঙ্গকে সুরক্ষিত রাখে। গোপনাঙ্গ থেকে এই সকল ব্যাকটেরিয়া চলে যাওয়ার ফলে গোপনাঙ্গ আর সুরক্ষিত অবস্থায় থাকে না! এতে করে গোপনাঙ্গে খুব দ্রুত কোন ইনফেকশন কিংবা সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাই গোপনাঙ্গ পরিষ্কার রাখার জন্য অন্য কোন ক্লিঞ্জার কিংবা হ্যান্ড শাওয়ার ব্যবহার না করে আন-সেন্টেড সাবান স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।
৬/ বহুদিন ধরে ব্যবহৃত এবং ময়লা অন্তর্বাস ব্যবহার না করা
সবসময় একদম পরিষ্কার অন্তর্বাস পরিধান করা আবশ্যক সকল নারীদের জন্য। তবে এই নিয়মটি অনেকেই একদম মানতে চান না। যার ফলে গোপনাঙ্গে ইনফেকশন সহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেওয়া শুরু হয়। নারীদের গোপনাঙ্গ থেকে এক ধরণের তরল পদার্থ বের হয় প্রতিনিয়ত। যার ফলে একবার যে অন্তর্বাস ব্যবহার করে হয়েছে সেটা পরিষ্কার না করে পরেরবার ব্যবহার করা কখনোই উচিৎ নয়।
৭/ গোপনাঙ্গ ও তার আশেপাশের অংশ ভেজা না রাখা
বেশীরভাগ সময়ে গোসলের পরে নারীরা ভালমতো গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না করে এবং না শুকিয়েই জামাকাপড় পরে ফেলে। যার ফলে গোপনাঙ্গ ভেজা এবং স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে থাকে। এমন অবস্থা থেকে গোপনাঙ্গে খারাপ ব্যক্টেরিয়ার সংক্রামণ এবং ভালভাবে ফাংসাস জন্মাতে পারে! তাই গোসলের পরে অবশ্যই ভালমতো গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে
৮/ বেশি সময় ধরে স্যানিটারি ন্যাপকিন না পরা
মাসিকের সময়ে অনেক নারীরাই একই স্যানিটারি ন্যাপকিন অনেক লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করে থাকেন। যেটা নারী স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মাসিকের সময়ে গোপনাঙ্গে অনেক বেশী অরক্ষিত অবস্থায় থাকে। একই স্যানিটারি ন্যাপকিন ৪-৫ ঘন্টার বেশী সময় ধরে পরে থাকার ফলে গোপনাঙ্গ অনেক বেশী আদ্র হয়ে যায়। যার ফলে এই অংশে খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। যে কারণে মাসিকের সময়ে প্রতি ৪-৫ ঘন্টা পরপর অবশ্যই ন্যাপকিন বদলানো উচিৎ।
৯/ সঠিকভাবে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার না করা
প্রাকৃতিক কর্ম শেষ করার পরে টিস্যু ব্যবহার করা হয় বাড়তি গোপনাঙ্গের বাড়তি পানি মুছে ফেলার জন্য। কিন্তু ভুল উপায়ে টিস্যু ব্যবহারের ফলে গোপনাঙ্গে ভয়াবহ ধরণের ইনফেকশন দেখা দিতে পারে! সঠিকভাবে টিস্যু ব্যবহারের উপায় হলো- গোপনাঙ্গের সামনের দিক থেকে পেছনের দিকে টিস্যু টেনে নিয়ে যাওয়া এবং এক টুকরো টিস্যু শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা।
১০/ রাতে ঘুমানোর সময়ে কখনোই অন্তর্বাস পরিধান না করা
রাতে ঘুমানোর সময় সবসময় অন্তর্বাস খুলে নিতে হবে। খুব খোলামেলা এবং ঢোলা সুতির পায়জামা পরতে হবে। যাতে করে হাওয়া চলাচলা কোন বাঁধা সৃষ্টি না হতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময়ে অন্তর্বাস পরে ঘুমালে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম বৃদ্ধি পায়। যা অবশ্যই গোপনাঙ্গের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে না।
নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে পারলে এবং সঠিকভাবে নিজের যত্ন নিতে শিখলে প্রত্যেক নারীই সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন। খুব ছোট কোন ভুল কিংবা অসাবধানতার জন্যে অনেক বড় ধরণের স্ত্রী-রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তাই নিজের মাঝে তৈরি করতে হবে সচেতনতা। অসুস্থ হয়ে ডাক্তারের মুখাপেক্ষী হওয়ার চাইতে নিজের প্রতি খেয়াল রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ।