প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে অার্থিক সহায়তা দেওয়ার আগে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
বাচ্চারা যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে তখন বাবা-মায়েদের কোনো কোনো সহায়তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে। বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাদেরকে সহায়তা করতে চাইবেন এটাই স্বাভাবিক।
অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারী এবং ঋণ পরামর্শকরা এ ব্যাপারে প্রচুর উদাহরণ দেখেন। যে প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানটি চাকরি হারিয়ে ঘরে ফিরে এসেছে এবং চাকরির সন্ধান করা বন্ধ করে দিয়েছে।
যে কন্যা অনবরত তার অ্যাকাউন্ট চেক করায় তালগোল পাকিয়ে ফেলে- এবং বাবা-মা তার অ্যাকাউন্ট খালি হয়ে যাওয়ার পর তাকে সহযোগিতা করা বন্ধ করে দিলে সে নিবন্ধন ঋণের দিকে ঝুঁকে পড়ে। যে বাবা তার ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী অপব্যায়ী সন্তানকে সহায়তা করেন।
ডেনভারের সনদপ্রাপ্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারী ক্রিস্টি সুলিভান একবার এক বয়স্ক দম্পতির সঙ্গে কাজ করেছিলেন। যাদের সন্তান-সন্ততিরা অনবরত সহায়তার জন্য তাদের দিকে হাত বাড়াত।
সুলিভান বলেন, “খদ্দেররা বুঝতে পারেন না কেন তাদের নাতি-পুতিদের সকলের হাতে সাম্প্রতিকতম আইপ্যাড এবং ফোন থাকে। কিন্তু যখন একটি গাড়ি বা ঘর সারাইয়ের কাজ আসে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা সবসময়ই তাদের কাছে অর্থ সহায়তা চাইত। ”
প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে অর্থ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামাজিক রীতি। প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান রয়েছে, এমন প্রতি ১০ জন বাবা-মার মধ্যে ৬ জনই বলেছেন, তারা তাদের সন্তানদের গত ১২ মাসে আর্থিক সহায়তা করেছেন। ২০১৪ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে এই তথ্য উঠে আসে।
বাবা-মায়েরা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে আর্থিক সহায়তা দেন কারণ এতে তাদের ভালো অনুভূতি হয়। যে বাবা-মায়েরা প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন তার বলেছেন, এটা করতে পেরে তাদের ভালো অনুভূতি হয়।
কিন্তু এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। শক্ত-সামর্থ্য সন্তানদেরকে আর্থিক সহায়তা করা বা বারবার তাদেরকে ঋণের দায় থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করার ফলে তাদের মধ্যে বাবা-মায়ের ওপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়। অথচ বাবা-মায়েদের উচিৎ তাদেরকে আত্মনির্ভরশীল হতে সহযোগিতা করা।
আর অবিবেচকের মতো অর্থ ব্যয় করলে, বাবা মায়েদের অবসর গ্রহণ বিলম্বিত হতে পারে। ভাইবোনদের মধ্যে ঝগড়া ও পারিবারিক অনৈক্য উস্কে দিতে পারে। এবং সন্তানরা বিপজ্জনক আচরণে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে। এমনকি তাদের মধ্যে নেশাসক্তি বা মানসিক অসুস্থতাও তৈরি হতে পারে।
সুতরাং প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আগে পাঁচটি বিষয় বিবেচনা করে দেখতে হবে:
১. আপনার পক্ষে কতটুকু বহন করা সম্ভব তা খতিয়ে দেখুন এবং সেই অনুযায়ী সহায়তা করুন।
২. সন্তানদের প্রত্যাশার একটি সীমা টানুন। সন্তানরা যদি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা না করে তাহলে যে কোনো আর্থিক সহায়তারই একটা মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থাকা দরকার।
৩. জরুরি অবস্থার জন্য পরিকল্পনা রাখুন। জরুরি অবস্থায় সন্তানদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার আবেদন আসলে তাও সীমিত পরিসরেই করুন।
৪. আপনার সহায়তার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। খুবই ধনী বাবা-মায়েরা অনেক সময় সন্তানদেরকে প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ দেন। কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন সন্তানদেরকে নগদ অর্থ দেওয়া ঠিক হবে না।
৫. অন্য সন্তানদের কথা বিবেচনায় রাখা
অর্থ ভালোবাসার সমকক্ষ হওয়া উচিত নয়। কিন্তু অনেক সময় এটা ঘটে যখন বাবা-মায়েরা সব সন্তানকে সমানভাবে আর্থিক সহায়তা দেন না।
তবে বাবা-মায়েরা যদি জীবদ্দশায় সন্তানদেরকে সমানভাবে আর্থিক সহায়তা না দিতে পারেন তাহলে অন্তত মৃত্যুর সময় সম্পদ ভাগাভাগি করার ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা উচিৎ।
সন্তানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করাটা খুবই বেদনাদায়ক। যা বাবা-মায়েরা দেখতে পান না। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার