গর্ভবতী হতে স্বামীর সাথে কখন যৌনমিলন করবেন?
আসুন জেনে নেই গর্ভধারণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় জেনে নিতে জনপ্রিয় ওভুলেশন ক্যাল্কুলেটর ব্যবহার করুন। এর মাধ্যমে আপনার ডিম্বস্ফোটনের সময় গণনা করুন এবং স্বামীর সাথে কখন মিলিত হলে গর্ভবতী হওয়ার সবচেয়ে বেশী সম্ভবনা আছে তা জেনে নিন।
ডিম্বস্ফোটনের সাতদিন ৭ দিনব্যাপী সময়ের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে মিলন হলে একজন স্ত্রীর গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। সাধারণত শেষ মাসিকের ১২ দিন পর এই সময় আসে।একটি ডিম্বাণু ডিম্বাশয় থেকে নির্গত হওয়ার পর ১২ থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত জীবিত থাকে। গর্ভধারণের লক্ষ্যে এ সময়ের মধ্যেই ডিম্বাণুটিকে শুক্রাণুর সাথে মিলিত হতে হবে। এমন কোন কথা নেই যে যেই দিন ডিম্বস্ফোটন হয় শুধু সেই দিন মিলিত হলেই আপনি গর্ভবতী হতে পারবেন। একজন নারীর শরীরে শুক্রাণু ২-৩দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে ডিম্বস্ফোটনের ২-৩ দিন আগে মিলন হলেও শুক্রাণুটি ডিম্বাণুর জন্যে ডিম্বনালীর ভেতর অপেক্ষা করে থাকতে পারে।
ডিম্বস্ফোটন কখন হয়?
ডিম্বস্ফোটনের সঠিক সময় নির্ধারণ সম্ভব না, যদি না আপনি ফার্টিলিটি সচেতন হোন (বাইরের লিংক দেখুন)। অধিকাংশ নারীর মাসিক শুরুর ১০-১৬ দিন আগে ডিম্বস্ফোটন হয়
আরও পরিস্কার করে বলতে গেলে মাসিকের প্রথম দিন থেকে একজন নারীর মাসিক চক্র গণনা করা হয়। এর কিছুদিন পর তার ডিম্বস্ফোটন হয় এবং তার ১০-১৬ দিন পর তার আবার মাসিক হয়। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী মাসিকের গড় চক্রকাল হচ্ছে ২৮ দিন অন্তর অন্তর। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর কিছু বেশি অথবা কম সময়েও মাসিক হতে পারে, যা অস্বাভাবিক নয়। ডিম্বোস্ফোটন ঠিক কখন হয় তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়, তবে এটা বলা ভুল হবে যে সব মহিলারই মাসিক চক্রের ১৪ দিনের দিন ডিম্বোস্ফোটন হয়। যেই মহিলাদের মাসিক নিয়মিত হয় এবং মাসিক চক্র ২৮ দিন তাদের বেলায় এটি সঠিক, তবে যেই মহিলাদের মাসিক চক্র এর থেকে ছোট, বা লম্বা, বা অনিয়মিত, তাদের বেলায় এটি প্রযোজ্য নয়। আপনার মাসিক চক্র যদি ৩৫ দিনের হয়, তাহলে আপনি উর্বর থাবেন আপনার মাসিক চক্রের ১৯ দিন থেকে ২৫ দিনের আশেপাশে, ১৪ দিনের দিন নয়। আবাব্র আপনার মাসিক চক্র যদি যদি ছোট হয়, ধরুন ২৩ দিন, তাহলে আপনার হয়তো ডিম্বোস্ফোটন হবে আপনার মাসিক চক্রের ৭-১৩ দিনের মধ্যে এবং আপনি সেই সময়টুকু উর্বর থাকবেন।
আগে যেমন বলা হয়েছে, একজন মহিলার শরীরে শুক্রাণু ঢোকার পর তা ২-৩ দিন বেঁচে থাকে। আপনি যদি গর্ভবতী হতে চান, তাহলে আপনাদেরকে এক-দুই দিন পর পর মিলিত হতে হবে। এর ফলে আপনার যখনই ডিম্বোস্ফোটন হয়ে ডিম্বাণু নিঃসরণ হোক না কেন, সবসময়ই শুক্রাণু আপনার ডিম্বোনালীতে থাকবে এবং আপনার ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে। যেই মহিলাদের মাসিক চক্র অনিয়মিত তাদেরকে এই পদ্ধতি মেনে চলতে বলা হয়।
এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানেন স্বামী-স্ত্রির মিলন অধ্যায়ে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি গর্ভবতী, তাহলে গর্ভধারণের লক্ষণসমূহ জেনে নিন, এবং কি কি টেস্ট করে এই ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন তা জানুন।
গর্ভাবস্থা যেভাবে এড়িয়ে চলবেন
আপনি যদি গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলতে চান, তাহলে বিভিন্ন রকমের গর্ভনিরোধ পদ্ধতি আছে যা আপনি ব্যাবহার করতে পারেন। আপনাদের মত দম্পতির জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত তা জেনেন নিন। কনডম হচ্ছে একমাত্র গর্ভনিরোধ পদ্ধতি যা গর্ভাবস্থা এবং যৌনরোগ সংক্রমণ দুটোই প্রতিরোধ করে।
ঠিক কখন আপনার ডিম্বোস্ফোটন হবে তা সঠিকভাবে জানা কষ্টকর ব্যাপার। তাই আপনি যদি গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলতে চান, আনিরাপদ মিলন করার জন্য মাসিক চক্রে কোন নিরাপদ সময় ঠিক নেই। যেই নারী গর্ভবতী হতে চাইছেন না, তার অনিরাপদ মিলনের ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।
যেই মহিলার মাসিক চক্র ছোট তিনি মাসিকের সময় সহবাস করলেও তার গর্ভাবস্থার ঝুঁকি থাকে। এর কারণ পুরুষের শুক্রাণু একজন নারীর ডিম্বনালীতে প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে, এবং যেই মহিলার মাসিক চক্র ছোট তার শরীরে মাসিক শেষ হওয়ার পরপরই ডিম্বোস্ফোটন হতে পারে।
আপনি যদি গর্ভাবস্থা এড়িয়ে চলতে চান, তাহলে আপনাকে নিজের শরীরে বিভিন্ন লক্ষণসমূহ চিনে রাখতে হবে – যেমন ডিম্বোস্ফোটনের সময় বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ, আপনার মাসিক চক্র, এবং আপনি কখন সবচেয়ে উর্বর, তখনকার লক্ষণগুলো। এসব বুঝতে হবে আপনাকে নিয়মিত লক্ষ্য করতে হবে আপনার যোনিপথে যে লালা নিঃসরণ হয় তার প্রকৃতি, আপনার প্রতিদিনের শরীরের তাপমাত্রা দেখতে হবে, এবং আপনার কয় দিন পরপর মাসিক হয় তা একটি ক্যালেন্ডার ব্যাবহার করে সেইখানে তারিখগুলো টুকে রাখতে হবে। এতে আপনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন যে আপনার কখন ডিম্বোস্ফোটন হচ্ছে।
আপনার যোনীপথে যে লালা নিঃসরণ হয়, তা মাসিক চক্রের সাথে সাথে বদল হয়। যখন আপনার ডিম্বোস্ফোটনের সময় ঘনিয়ে আসে, তখন এই লালা পাতলা এবং পিচ্ছিল হয়ে যায়, অনেকটা ডিমের সাদার মত। আপনার শরীরের তাপমাত্রা ০.৪-০.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়ে যায় যখন আপনার ডিম্বোস্ফোটন হয়। আপনি যদি ৪ থেকে ৫ মাস এই সব লক্ষণসমূহ তীক্ষ্ণ ভাবে লক্ষ্য করেন, এবং আরও যে শারীরিক লক্ষণ হয়, সেই সব যদি দেখেন – যেমন তলপেটে ব্যাথা ইত্যাদি, তাহলে আপনি নিজেই মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেন আপনার কখন ডিম্বোস্ফোটন হচ্ছে। আপনি যদি নিজে এটি করতে না পারেন বা আপনার যদি এই সময় গননা করতে সমস্যা হয়, তাহলে আপনি একজন বিশেষজ্ঞের মতামত নিতে ।
আপনার শারীরিক লক্ষণসমূহ ১০০% নির্ভরযোগ্য নয়, এবং সেই কারণে আপনাকে সবসময় যে কোন রকমের গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যাবহার করতে হবে। সবচেয়ে কার্যকরী গর্ভনিরোধ পদ্ধতি হচ্ছে দীর্ঘ-মেয়াদী প্রতিবর্তন-সাধ্য গর্ভনিরোধ পদ্ধতি যেমন – ইঞ্জেকশান, ইমপ্ল্যান্ট, আই-ইউ-এস (IUS – Intrauterine system) এবং আই-ইউ-ডি (IUD – Intrauterine Device))।
জরুরী গর্ভনিরোধ পদ্ধতি
আপনি যদি অনিরাপদ মিলন করে থাকেন, অথবা আপনার গর্ভনিরোধ পদ্ধতি যদি ঠিক মত কাজ করে না থাকে, তাহলে তখন আপনাকে জরুরী গর্ভনিরোধ পদ্ধতি ব্যাবহার করতে হবে অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য।
এটি দুই রকমের আছে –
জরুরী গর্ভনিরোধ পিল – যাকে মাঝে মাঝে বলা হয় মর্নিং-আফটার-পিল (morning -after-pil), এবং এই পিলটি আপনাকে সেবন করতে হবে অনিরাপদ সহবাসের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে।
আই-এউ-ডি (IUD – Intrauterine Device)) যা আপনার জরায়ুতে ঢুকিয়ে দিতে হবে অনিরাপদ সহবাসের ৫ দিনের মধ্যে অথবা আপনি যেই দিন মনে করছেন যে আপনার ডিম্বোস্ফোটন তার ৫ দিনের মধ্যে।
এই মর্নিং-আফটার-পিল (morning -after-pil) আপনি পেতে পারেন যে কোন ফার্মেসী/ঔষধালয়ে। আপনি যদি আই-এউ-ডি (IUD – Intrauterine Device)) আপনার জরায়ুতে ঢুকিয়ে নিতে চান, তাহলে তা অবশ্যই হতে একজন বিশেষজ্ঞের হাতে। এর জন্য আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না, কিন্তু এটি দীর্ঘ সময় আপনার গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করবে।