একেবারেই সেরে যাবে শ্বাসকষ্ট
অনেকেই আছেন যারা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন। বহু চিকিৎসাতেও কার্যকরভাবে এ রোগটি নিরাময় সম্ভব হয় না। সম্প্রতি হাফিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গবেষকরা নাকি শ্বাসকষ্ট সম্পূর্ণভাবে নিরাময়ের একটি যুগান্তকারী উপায় আবিষ্কার করতে পেরেছেন।
চিকিৎসকরা শ্বাসকষ্টের জন্য নানা ধরনের ওষুধ ব্যবহার করলেও এগুলো সাময়িকভাবে কাজ করে, তবে দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে না। কিন্তু নতুন আবিষ্কৃত উপায়ে দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট নিরাময় করা যাবে বলে বিশ্বাস গবেষকদের। গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন-এ।
কেন হয় শ্বাসকষ্ট? শ্বাসনালির সংকোচন ও অ্যালার্জেনের কারণে ইরিটেশন এর মূল কারণ। এসব কারণে ফুসফুসে প্রয়োজনীয় বাতাস ঢুকতে পারে না ফলে রোগীকে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে হয়। এতে ফুসফুসের ভেতরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেকগুলো নালি অকার্যকর হয়ে পড়ে। রোগী অক্সিজেনের অভাববোধ করে এবং এই অভাবজনিত কারণে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সাধারণভাবে, সর্দি-কাশি এমন কি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাইনোসাইটিস হলেও শ্বাসকষ্টে ভুগতে দেখা যায়।
তবে সাইনোসাইটিসের ক্ষেত্রে নাকের ভেতরের গাত্র প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে ফুলে গেলে প্রয়োজনীয় বাতাস নাক দিয়ে ফুসফুসে ঢুকতে পারে না বলে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। অন্যান্য সমস্যার কারণেও যেমন, ফুসফুসে পানি জমলে, অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে, হৃৎপিণ্ডের বাম নিলয়ের কার্যকারিত কমে গেলে, ব্রঙ্কাইটিসের কারণে ফুসফুসের ব্রঙ্কিউল বন্ধ হয়ে গেলে, কোনো কারণে ফুসফুসের ভেতরের ছোট ছোট রক্তনালির অভ্যন্তরের রক্ত জমাট বেঁধে গেলে, ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা দেখা দিলে, রক্তে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলেও শ্বাসকষ্ট হয়। কিডনির বৈকল্য বা ফেইলিওরেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শুষ্ক আবহাওয়া ও শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
নতুন গবেষণায় এডিএএম৩৩ নামের একটি জিন আবিষ্কৃত হয়েছে যা শ্বাসকষ্টের প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে। গবেষকরা ধারণা করছেন, এই জিন শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী জিনের মধ্যে অনতম। এই জিন দেহে একধরনের এনজাইম তৈরি করে যা দেহের বায়ু চলাচলের পথে মাংসপেশিগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত। এই এনজাইমের প্রভাবে যে কোষগুলো ফুসফুসের বায়ু চলাচলের পথে থাকে সেগুলো পরিবর্তিত হয় ফলে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট।
শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে যে যুগান্তকারী পদ্ধতিটির কথা বলা হচ্ছে তা আবিষ্কার করেছে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের একদল গবেষক। চিকিৎসা পদ্ধতিটি মোটেও কঠিন কিছু নয়। গবেষকরা জানাচ্ছেন, শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী জিনটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়াই হল কাজ। তাঁরা আরও জানান, অ্যালার্জি বা এ ধরনের কারণে বায়ু চলাচলের পথ যাতে বন্ধ না হয় এর জন্য বেশ কিছু উপায় নিয়ে গবেষণা চলছে এবং যথেষ্ট অগ্রগতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গবেষকদলের সদস্য ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের প্রফেসর হ্যানস মাইকেল হ্যাইটচি জানান, আবিষ্কৃত উপায়টিতে শ্বাসকষ্ট অনেকাংশে নিরাময় করা সম্ভব হয়েছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো পরীক্ষামূলকভাবে রোগীর দেহে ব্যবহৃত হয়নি। গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ রয়েছে সেখানে সফলতা পেলে পরের ধাপ হিসেবে রোগীর দেহে ব্যবহার করা হবে। তবে কবে সেটা সম্ভব হবে তা জানা যায়নি এখনো।