“অতিরিক্ত স্রাব যখন শারীরিক ক্ষতির কারণ”
অনেক সময় মেয়েদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব ক্ষরণ হয়। এটি যেকোনো বয়সেই হতে পারে। অনেকে এটাকে লিউকোরিয়া বলে থাকেন। কোনো কোনো সময় বেশি স্রাব গিয়ে মেয়েদের অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়। স্বাভাবিক নিয়মে কিছুটা স্রাব যেতেই পারে; কিন্তু সেটা যদি হয় দুর্গন্ধযুক্ত, সাথে থাকে মাসিকের পথে অথবা আশপাশে অস্বাভাবিক চুলকানি কিংবা মাত্রাতিরিক্ত সাদা স্রাব তখন আপনাকে নজরে আনতেই হবে। আপনি একজন গাইনি চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। স্রাবের জন্য যদি আপনার কাপড় নষ্ট হয় কিংবা আপনার প্যাড নিতে হয় সেটা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আর সাথে দুর্গন্ধ যেটা সেটা কয়েক রকম ইনফেকশানের জন্যও হতে পারে।
এ রকম স্রাবের কিছু কারণও আছে। ভ্যাজাইনাল ট্রাইকোমোনাস, ভ্যাজাইনাল ক্যানডিডিয়াসিস কিংবা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিসের জন্যও এ রকম সমস্যা হতে পারে। একটু বয়স্কাদের ক্ষেত্রে জরাযুর মুখ কিংবা জরাযুর ক্যান্সার (Cervical Cancer, Endomet) ইত্যাদি কারণের জন্যও স্রাব দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। এ জন্য বলছি, কারণ যেটাই থাকুক না কেন সেটা সঠিকভাবে শনাক্ত করা এবং সেটার সঠিক চিকিৎসার জন্য আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে। অনেকের আবার বারবার এ ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা বলে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসাব্যবস্থা স্বামীকেও নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে কেন স্বামীকে চিকিৎসা নিতে হয় চিকিৎসক বুঝিয়ে বলবেন। তরুণীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা ভবিষ্যৎ গর্ভধারণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে বন্ধ্যত্ব পর্যন্ত করে দিতে পারে।
এ রকম ইনফেকশন যেটাকে বলে পিআইডি (পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ)। এ জাতীয় সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসা নিতে হবে। পিআইডির ক্ষেত্রে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাবসহ তলপেটে ব্যথা হয়ে থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তলপেটের ব্যথা কিছুটা কম মাত্রায় হওয়াতে অনেকে এটাকে আমলে নেন না; কিন্তু এ ধরনের ইনফেকশন হলে চিকিৎসা নিতেই হবে। অনেকের এই সমস্যার সাথে মাসিকের সময় প্রচণ্ড তলপেটে ব্যথাও হয়ে থাকে। সেই সাথে থাকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কিংবা মাঝে মধ্যে অনিয়মিত কমবেশি রক্তক্ষরণের সমস্যা। অনেক সময় এসব সমস্যার সাথে সাথে জ্বরও আসতে পারে। অনেকের আবার প্রস্রাবে সমস্যা যেমন প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়ার কথা বলে থাকেন। দুর্বলভাবও লাগতে পারে। অনেকে আবার স্বামীর সাথে মেলামেশার সময়ও ব্যথা অনুভব করেন।
এসব সমস্যার প্রত্যেকটি যে একই রোগীর থাকবে এমনটি কিন্তু নয়। দু-একটি উপসর্গ দেখা দিলেই আপনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন। আজকাল প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণে জটিলতা সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ যুবতীদের এ ধরনের ইনফেকশন, যে ক্ষেত্রে চিকিৎসা নেয়া হয়নি। কারণ পিআইডি যখন ডিম্বনালীতে ছড়িয়ে পড়ে তখন নালীটির মাধ্যমে স্বাভাকি শুক্রাণু চলাচলের ক্ষমতা অনেক ক্ষেত্রেই নষ্ট করে দেয়। পরে দেখা যায় বন্ধ্যত্ব কাজেই এসব ক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
এ ছাড়া নিজেকেও সব সময় পরিছন্ন রাখতে হবে। মাসিকের সময় স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা উত্তম। মোটকথা আপনার সচেতনতা, উপযুক্ত সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং সেই অনুযায়ী নিয়ম-কানুন মেনে উপযুক্ত চিকিৎসা আপনাকে অনেক ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে।