পিত্তথলিতে পাথর হলে কি করবেন? পিত্তথলির পাথর দূর করতে ঘরোয়া সমাধান জেনে নিন
ইদানীং কালের একটি সাধারণ রোগের নাম হল পিত্তথলিতে পাথর (gallstones) হওয়া। সাধারণত যারা দ্রুত তাদের শরীরের ওজন কমাতে চান (weight loss) তারা পিত্তথলিতে পাথর হওয়া রোগের সম্মুখীন বেশী হন। তাছাড়া জিনগত কারন ও খাদ্যাভ্যাসের ফলেও পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে।
পিত্তথলিতে পাথর কোনো ভয়ের বিষয় নয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা সহজে ধরাই পড়ে না। কখনো দীর্ঘদিন ধরে রোগীর পেটের ওপরের অংশে ব্যথা হয়, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ চলতে থাকে, এমনকি খানিকটা ব্যথা কমেও তাতে। তাই পরীক্ষা করা হয় না।
আবার কারও ক্ষেত্রে পোলাও, বিরিয়ানি বা ভাজাপোড়া বেশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর হঠাৎ করেই শুরু হয়ে যায় তীব্র পেটব্যথা। এ ক্ষেত্রেও ব্যথা হয় পেটের ওপরের অংশে, মূলত ডান দিকে, ছড়িয়ে যেতে পারে পিঠের ওপরের দিকেও। বমি বমি ভাব থাকতে পারে, বমিও হতে পারে। হালকা জ্বর থাকতে পারে।
প্রথম দিকে কিছু ওষুধ সেবনে ব্যথা ভালো হয়ে গেলেও পরে আর সেগুলোতে কাজ হচ্ছে না বলে মনে হয়।
খেয়াল রাখা দরকার, গ্যাস্ট্রিকের ব্যথার মতো মনে হলেও পিত্তথলিতে পাথরের কারণে ব্যথার একটু ভিন্নতা আছে। এই ব্যথা সাধারণত অ্যাসিডিটি জনিত ব্যথার চেয়ে তীব্রতর। গ্যাসের ওষুধ সেবনে এ ব্যথা সম্পূর্ণ উপশম হয় না। কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এ ব্যথা। তারপর ভালো হয়ে গেলেও কিছুদিন পর আবার হয়।
কোনো কোনো রোগীর আবার লক্ষণ থাকে না একদমই, হঠাৎ পরীক্ষা করাতে গিয়ে ধরা পড়ে পাথর।
পিত্তথলিতে পাথর হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাথরসহ পিত্তথলিটি ফেলে দেওয়া উচিত। অস্ত্রোপচার না করে ওষুধের মাধ্যমে পাথর গলিয়ে ফেললেও পরে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এভাবে পাথর গলিয়ে ফেলতে দু-তিন বছর সময় লাগে, এত দিন একটানা ওষুধগুলো খাওয়ার ফলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে। তাই অস্ত্রোপচারই ভালো সমাধান।
কাদের পাথর হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
ওজনাধিক্য বা স্থূলতা, রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বি বেশি থাকা, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি পিত্তথলিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তবে কোনো ঝুঁকি নেই—এমন ব্যক্তিরও পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। আর পুরুষদের তুলনায় নারীদেরই এ সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।
প্রাকৃতিক উপায়ে কাটিয়ে উঠুন পিত্তথলির পাথরের সমস্যা
আমরা চাইলে প্রাকৃতিকভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি। আর তাই ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যা সমাধানের জন্য নিচের টিপস দেখতে পারেন।
- বিটরুট ও গাজরের জুস (beetroot and carrot juice): পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধে বিটরুট ও গাজরের জুসের তুলনা হয় না। বিটরুট গাছ থেকে বিটরুট ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস করুন, একইভাবে গাজর ও শশা থেকে জুস তৈরি করুন। এবার তিন রকম জুস সমপরিমাণ এক সাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশান। দিনে দুইবার এই জুস খাওয়াতে আপনার সমস্যা দূর হবে।
- আঁশযুক্ত খাবার (high fiber cereal): আপনার পিত্তথলির পাথরের সমস্যা দূর করতে উচ্চ ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরী। আপনি আপনার খাবার তালিকা থেকে চিনি ও চর্বি যুক্ত খাবারগুলো বেছে বেছে বাদ দিয়ে সেখানে আপনার সকালে খাদ্যের মধ্যে প্রতিদিন উচ্চ ফাইবার খাদ্য শস্য যোগ করুন. এটি আপনার পিত্তশয়ের সমস্ত রোগ প্রতিরোধের সাথে সাথে পিত্তথলির পাথরের রোগ প্রতিরোধ করবে।
- হলুদ (turmeric): পিত্তথলির পাথর রোধ করতে হলুদ একটি কার্যকরী উপাদান। হলুদের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধের একটি অন্যতম উপাদান। প্রতিদিন আধ টেবিল চামচ হলুদ গ্রহণ করাতে এ রোগের সম্ভাবনা ৮০% কমে যায়।
- সবজি (Vegetables): প্রতিদিনেরখাবার তালিকায় উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি যোগ করুন। আপনার অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবারের থেকে এটি যেমন আপনাকে সুস্থ আর ফিট রাখবে ঠিক একইভাবে আপনার পিত্তথলির পাথর প্রতিরোধ করবে।
- প্রক্রিয়াজাতকৃত খাবার এড়িয়ে চলুন (avoid refined foods): এড়িয়ে চলুন বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাতকৃত ও কৃত্রিম ফ্লেভার-রংযুক্ত খাবার। যেমন, লাল মাংস, আইসক্রিম, সাদা ময়দাপণ্য, কৃত্রিম মিষ্টি জাত পণ্য।