রোগ নিরাময়ের উপায় রয়েছে কোষ মানচিত্রে
ডোপামিন উৎপাদক কোষ তৈরি করে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট স্থানে বসিয়ে দিলে পার্কিনসন্স ডিজিজ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। মতিষ্কের ঠিক কতটা এলাকা জুড়ে ওই ডোপামিন উৎপাদক কোষ রয়েছে, তার সঠিক সংখ্যাই বা কত-এ বিষয়ে জানতে প্রয়োজন মানব শরীরের কোষ মানচিত্র।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণাগারে যে কাজটি এখন জোরেশোরে চলছে, তা হলো মানব শরীরের কোষের মানচিত্র তৈরি করা। কোন অঙ্গে কী ধরনের কোষ রয়েছে, তাদের সংখ্যা, রোগ প্রতিরোধকারী কোষের অবস্থান সম্পর্কে একটা পূর্ণাঙ্গ ছবি তৈরি করাই ওই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য। খবর আনন্দবাজারের।
এমআইটি-র ব্রড ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড ও ব্রিটেনের ওয়েলকাম ট্রাস্ট স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউট এই গবেষণার প্রাথমিক কাজগুলি শুরু করেছে। বিশ্বের আর কোন কোন দেশের কোন কোন গবেষণাগারকে এতে যুক্ত করা হবে তা-ও ঠিক করবে ওই তিনটি সংস্থা। গবেষকদের দাবি, আগামী ১০ বছরে এমন একটি মানব শরীরের প্রতিকৃতি তারা তৈরি করতে পারবেন যার প্রতিটি কোষ থাকবে নিরোগ। ওই আদর্শ মানব শরীরটির কোষ মানচিত্রের সঙ্গে বিভিন্ন মানুষের কোষ মানচিত্র মিলিয়ে দেখা হবে। আর তখনই বোঝা যাবে কার শরীরে কোন কোষে কী ধরনের রূপান্তর ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর সাহায্যেই মোকাবিলা করা যাবে এইডস, অ্যালঝেইমার্স, ক্যানসার বা পার্কিনসন্স ডিজিজের মতো রোগগুলির সঙ্গে। স্টকহলমের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ স্টেন নিলারসন বলেন, কোষের ওই মানচিত্র আমাদের নতুন নতুন পথ দেখাবে। যে কোষগুলি কোনও রোগের ফলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেগুলিকে শরীরের বাইরে বা ভিতরে পুনর্জীবিত করা সম্ভব হবে।
সম্প্রতি লন্ডনে একটি সম্মেলনে এই বিশ্বব্যাপী গবেষণার সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেন। ব্রড ইনস্টিটিউট অব এমআইটি-র আভিভ রেজেভ ওই সম্মেলনে বলেন, আমরা এমন একটা গবেষণায় হাত দিয়েছি যাতে আমাদের শরীরের কোন কোষ কী কাজ করছে, কোন কোষ কী অবস্থায় রয়েছে, কোনটা কাজ বন্ধ করে দিলে কী হয়, কোন কোষ অতি সক্রিয় হয়ে গেলে কী হয়- এই সব বৃত্তান্তই আমাদের চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। অনেক মরণ রোগের হাত থকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ও এর ফলে খুব সহজেই সামনে আসতে পারে। আমাদের শরীর সম্পর্কে আমরা এতদিন যা জানতাম তা কোনো জানাই নয়। এবার মানব শরীরকে জানার আসল প্রচেষ্টা শুরু হলো।
রেজেভ আরো বলেন, মানব দেহে যে ৩৫ লাখ কোটি কোষ রয়েছে তার প্রতিটির জিনগত বিশ্লেষণ করা হবে। দেহের প্রতিটি কোষ কী কাজ করবে তা নির্ভর করে তাদের মধ্যে কোন জিনটি সক্রিয় তার উপরে। এক ধরনের জিন সক্রিয় হলে কোনও কোষ নিউরনের কাজ করে। আবার অন্য এক ধরনের জিন সক্রিয় হলে ওই কোষই হৃৎপিণ্ডের কোষ হিসেবে ঘন ঘন সঙ্কোচিত ও প্রসারিত হয়।