ক্যানসারের সংকেত
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ক্যানসার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। কারণ, অজ্ঞতা, অসচেতনতা, কুসংস্কার ইত্যাদি। ক্যানসার প্রতিরোধ ও রোগটির ঝুঁকি সম্পর্কে ঠিকমতো না জানার ফলে এ দেশে ক্যানসার শনাক্ত করতেই অনেকের দীর্ঘদিন পেরিয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে যাওয়ায় রোগটি ধরা পড়ে। ফলে চিকিৎসা প্রায়ই অনিরাময়যোগ্য হয়ে যায়।
সাধারণত ক্যানসারের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ থাকে না। তাই রোগটির ঝুঁকি, প্রতিরোধক ও সতর্কসংকেতগুলো জানা থাকা দরকার। নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ে অংশ নিলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব।
ক্যানসার সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। ধূমপান ও তামাক সেবন ৬০ শতাংশ ক্যানসারের জন্য দায়ী। ৮০ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসার রোগীর মৃত্যুর কারণ ধূমপান ও তামাক সেবন। এ ছাড়া অ্যালকোহল গ্রহণ, অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পানের পরিণামেও ক্যানসার হতে পারে। শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে, শারীরিক পরিশ্রম বাদ দিয়ে অলস জীবনযাপন করলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। দীর্ঘমেয়াদি সংক্রামক ব্যাধি (যেমন: হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস প্রভৃতি) থেকেও ক্যানসার হতে পারে। তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও দীর্ঘ সময় প্রখর রোদের সংস্পর্শে এলে, ঘরে-বাইরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকলে, পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
ক্যানসারের কয়েকটি সতর্কসংকেত
কাশি তিন সপ্তাহের অধিক স্থায়ী হয়, সহজে সারে না। শরীরের ওজন কমে যায়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। জরায়ু থেকে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়। দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময় এবং মেনোপজ-পরবর্তী নারীদের মাসিকের মতো রক্তক্ষরণ হয়। স্তনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, যেমন: স্তনে চাকা অনুভব হয়, ত্বক কুঁচকে যায়, বৃন্ত দেবে যায়, বৃন্ত হতে তরল বের হয়। খাবার গিলতে কষ্ট হয়। দীর্ঘদিন বদহজম হয়, পেট ফেঁপে থাকে, ফুলে ওঠে এবং ভারী বোধ হয়। ত্বকের ক্ষত সারতে দেরি হয়। আঁচিলের পরিবর্তন হয়। মলমূত্র ও কাশিতে রক্ত দেখা যায়। পেটব্যথা ও মনমরা ভাব বেশি হয়। মুখ ও মুখগহ্বরের ক্ষত শুকায় না।
এ ছাড়া দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হয়, শরীরের যেকোনো স্থানে পিণ্ড বা চাকা অনুভব হয়, অকারণে জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয়।
সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের অণ্ডকোষের পরিবর্তন বা চাকা অনুভব হতে পারে। পাশাপাশি প্রস্রাবের সমস্যা, ঘনঘন প্রস্রাব, জ্বালাপোড়া, আটকে যাওয়া, বেগ কমে যাওয়া ইত্যাদি।
উল্লিখিত সংকেতগুলো সুনিশ্চিতভাবে ক্যানসার চিহ্নিত করে না। অন্যান্য রোগেও এসব উপসর্গ হতে পারে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় জরুরি। বিশেষত, এসব উপসর্গ তিন সপ্তাহ স্থায়ী হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
অধ্যাপক পারভীন শাহিদা আক্তার
মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল