রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি হলে যা করতে হবে !!!
প্রতিটি মানুষের রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রায় চর্বি থাকে। এই চর্বির পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখন অনেক মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তে অতিমাত্রার চর্বি করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
টোটাল কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা হয় 220mg /dl পর্যন্ত আর ট্রাইগ্লিসারাইড 50-150 mg /dl পর্যন্ত স্বাভাবিক হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিনকে বলা হয় ভালো কোলেস্টেরল, এটা বেশি থাকাই কাম্য। HDL 35mg /dl এর কম হলে সেটা ভালো নয়। আমরা কীভাবে রক্তে চর্বির পরিমাণ কমাতে পারি বা কম রাখতে পারি।
প্রথমেই বলা যাক খাদ্য তালিকায় কি কি সংযোজন বা পরিহার করতে হবে-
* গরু ও খাসির গোশত খাওয়া কমিয়ে দিন। সেই সঙ্গে অবশ্যই কলিজা জাতীয় খাবারও আপনাকে কম খেতে বা খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
* প্রচুর পরিমাণে মাছ খান।
* শাক-সবজি ও ফল খান।
* দুধ বা দুধ থেকে উৎপন্ন খাদ্য যেমন- ঘি, পনির, মাখন, আইসক্রিম খাবেন না।
* ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে খাবেন, তার মানে শুধু ডিমের সাদা অংশ খেতে হবে।
* নারকেল বা নারকেল দেয়া খাবার পরিত্যাগ করুন।
খাবার তালিকা সংশোধনের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এমন কোনো অভ্যাস যেমন ধূমপান পরিহার করতে হবে। উচ্চরক্তচাপ থাকলে তার জন্য সঠিক চিকিৎসা নেয়া জরুরি।
এবার আসা যাক অ্যারোবিক এক্সারসাইজের কথায়। ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন ব্যায়াম করা স্বাভাবিকভাবেই প্রয়োজন।
ভিটামিন A, E ও C হচ্ছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন। নানাভাবে এরা রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন অ রয়েছে রঙিন শাক-সবজিতে। প্রতিদিন অন্তত 15gm ভিটামিন অ আমাদের জন্য প্রয়োজন। তাই ভিটামিনসমৃদ্ধ প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ও রান্নাকরা শাক-সবজি, ফল গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, তারপরও রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির পরিমাণ বেশি এ রকম অনেকেই আমাদের কারো না কারো পরিবারে আছেন। তাদের তখন নানারকম ওষুধের মাধ্যমে রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
৫০ বছরের অধিক বয়সী অনেক মহিলার সার্জারি করে জরায়ু ফেলে দেয়া হয়। সে সময় তারা এমনিতেই মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তিকালে চলে যান। এই সময় তারা যদি ইস্ট্রোজেন নেন তাহলে তারা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারেন। কারণ ইস্ট্রোজেন বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেয়া হলে তা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
যে সব ওষুধ রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় তা চারটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। বাইল এসিড রেজিন, নায়াসিন, স্ট্যাটিন এবং ফিব্রিক এসিড থেকে প্রাপ্ত ওষুধ।
১. বাইল এসিড রেজিনকে প্রথম ধাপের ওষুধ বলা হয়। এই ওষুধ কোলেস্টেরল এবং বাইল এসিডের সঙ্গে অন্ত্রে সংযুক্ত হয় এবং কোলেস্টেরলের শোষণ কমায়। এতে করে লিভার রক্ত থেকে বেশি পরিমাণ LDL বা লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন শুষে নেয়। এতে করে ২৫-৩০ ভাগ LDL কমে যেতে পারে।
বাইল এসিড রেজিনের সুবিধা এই যে, এটা দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। এটা খেলে প্রচুর পরিমাণ পানি পান ও আশযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো এবং এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
২. নায়াসিন বা নিকোটিনিক এসিড বি ভিটামিন। এটি ঠিক কীভাবে রক্তের চর্বির পরিমাণ কমায় তা জানা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, লিভারের LDL কোলেস্টেরল তৈরিতে এটা বাধা দেয়। এটি ১৫-২০ ভাগ LDL কমাতে পারে এবং ২০-৩৫ ভাগ HDL-এর পরিমাণ বাড়ায়।
নায়াসিনের কর্মক্ষমতা ভালো কিন্তু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যেমন- মাথাব্যথা, চুলকানি, মুখ-চোখ ঝাঁ ঝাঁ করা ইত্যাদি। তবে নায়াসিন খাবার আগে 325mg অ্যাসপিরিন খেলে এগুলো কম হবে। নায়াসিন নেয়ার আগে এটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, লিভার ঠিকমতো কাজ করছে কি না।
৩. স্ট্যাটিন বা HMG CO A রিডাকটেজ ইনহিবিটর-এর মধ্যে রয়েছে লোভাস্ট্যাটিন, সিমভাস্ট্যান্টিন, প্রাভাস্ট্যাটিন, ফ্লুভাস্ট্যাটিন। নতুন আবিষ্কৃত অ্যাটরভ্যাস্টিন এবং সারভিস্ট্যাটিন। এগুলো লিভারে কাজ করে, এরা কোলেস্টেরল তৈরিতে বাধা দেয়। এতে করে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। স্ট্যাটিন নেয়ার আগেও লিভারের কার্যক্ষমতা দেখে নিতে হবে।
কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন- মাথাব্যথা, পেটব্যথা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সবচেয়ে বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে মাংসপেশিতে ব্যথা। এই ওষুধ প্রতিদিন সন্ধ্যায় একবার গ্রহণ করলেই হয়।
৪. ফিব্রিক এসিড থেকে উৎপন্ন জেমোফ্রিব্রেজিল সাধারণত ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে ব্যবহৃত হয়। এটি ৩০-৬০ ভাগ ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। ১০-৩০ ভাগ পর্যন্ত HDL বাড়ায়। জেমোফ্রিব্রেজিল প্রায় সব রোগীরই সহ্য হয় তবে কারো কারো ডায়রিয়া, শরীরে ফুসকুড়ি ওঠা এ সব হতে পারে।
তা ছাড়া ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে। আগে পিত্তথলির অসুখ হয়েছে এমন রোগীর জন্য এটি নয়।
জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হৃদরোগের হাত থেকে রেহাই পেতে রক্তে কোলেস্টেরলের মান বা চর্বির মাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত রাখা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার, সেটি করতে হলে প্রথমেই নজর দিতে হবে আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকার দিকে। বর্জন করতে হবে অনেক কিছু, আবার গ্রহণ করতেও হবে বাড়তি কিছু। লিপিড প্রফাইল করে জেনে নিতে হবে সব কোলেস্টেরলের মাত্রা।
Related Posts
Comments
comments