ভীড় বাড়ছে মেধাশূন্যের দলে
চিন্তা করাটা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কাজ। তাই সুগঠিত মস্তিষ্ক সবচেয়ে আগে দরকার। ধারাবাহিক চিন্তা শক্তিই হচ্ছে যেকোনো বিষয়বস্তুর সঠিক বিশ্লেষণ, ভালোভাবে কাজ করা এবং সফল্য লাভের মূল ভিত্তি।
স্নায়ুকোষের গঠন ও বিকাশ শিশুর গর্ভে আসার প্রথম দিন থেকে জন্মের দুই বছর বয়স পর্যন্ত থাকে। অপরদিকে মানব দেহে অন্য সব দেহকোষের গঠন প্রায় সারাজীবন অব্যাহত থাকে। ক্ষতিগ্রস্থ দেহকোষ প্রায় সারাজীবন প্রতিস্থাপিত হলেও স্নায়ুকোষের ক্ষেত্রে তা হয় না। সুতরাং জীবনের এই প্রারম্ভিক পর্যায়ে যদি কোনো একটি স্নায়ুকোষের গঠনও অসম্পূর্ণ থাকে তবে তা পরবর্তী জীবনে পূরণ হওয়া সম্ভব না। আর তখন হতে হবে মেধাশূন্য। সমস্যাটি তৈরি হয়ে গেলে বিশ্বসেরা খাদ্য, নামী ডাক্তার কোনোকিছুতেই সমাধান পাওয়া সম্ভব নয়। মেধাশূন্য হয়ে পড়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না। এমন ঘটনা শুধু দুয়েক জনের জন্য প্রযোজ্য নয়। জাতির বৃহৎ অংশই ভীড় জমাচ্ছে মেধাশূন্যের দলে।
মায়ের দুধ শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। বিশ্বখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ‘ল্যানসেট’ এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়- দেহের ওপর মাতৃদুগ্ধ পানের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব রয়েছে। বিশেষ করে মানসিক গঠনের ক্ষেত্রে।
অনেকগুলি সুসংগঠিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) -এর ৫৮.৩২ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- গুড়োদুধ বা প্রক্রিয়াজাত যেকোনো শিশুখাদ্য শিশুস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
শিশুদের জন্য মায়ের দুধপান এতো গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বে ০ থেকে ৬ মাস বয়সে শুধুমাত্র মায়ের দুধপান (ইবিএফ)-এর হার মাত্র ৩৯ শতাংশ (ইউনিসেফ – স্টেট অব ওয়ার্ল্ডস চিলড্রেন ২০১৩)। বাংলাদেশের অবস্থা এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভালো। এই বয়সে শুধুমাত্র মায়ের দুধপানের (ইবিএফ) হার ৫৫ শতাংশ (বিডিএইচএস-২০১৪)। তবে তা ৬৪ শতাংশ (বিডিএইচএস-২০১১) থেকে নেমে এসেছে। তাই অবস্থাটা অনেক বেশি উদ্বেগজনক। এখনই যথেষ্ট যত্নশীল না হলে ভবিষ্যতে শিশুদের মায়ের দুধ পানের হার আরও কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
‘রুল অব স্টেকহোল্ডারস ইন প্রোমোটিং ব্রেস্টফিডিং ইন দি লাইট অব দি ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউটস (বিএমএস) ল’ ২০১৩ ইন রুরাল এরিয়াস অব বাংলাদেশ’ নামক, ব্র্যাক রিসার্চ অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন বিভাগের করা একটি বেইজলাইন (নলেজ, এটিচুড অ্যান্ড প্র্যাকটিস) সার্ভেতে প্রক্রিয়াজাত দুগ্ধের প্রতি নির্ভরতার দুটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। (১) সন্তান প্রসবের পর মায়ের বুকে দুধ আসতে দেরী হওয়া এবং (২) কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে দ্রুত কাজে ফিরতে শুরু করা।
মায়ের বুকে দেরীতে দুধ আসাটাও সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত করে। প্রথমবার যারা মা হচ্ছেন সমস্যাটা তাদের মধ্যেই বেশী। আর এই নতুন অবিভাবকরাই বেশী সংবেদনশীল। তারা শিশুর কান্না শুনতে রাজী নন। তাই শিশুকে খুব তাড়াতাড়ি খাওয়াতে চান। তাদের বিরামহীন অভিযোগ ডাক্তারকেও বিরক্ত করে ফেলে। অনেক সময় ডাক্তারকে না জানিয়ে নিজ সিদ্ধান্তেই বাবা-মা সন্তানদের গুড়োদুধ খাওয়াতে শুরু করেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন- এ ধরনের জটিলতা এড়াতে দাইমা প্রথা ফলপ্রসু। কারণ ক্লিনিক বা হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে সন্তানকে দুধদানকারী অনেক মা একসঙ্গে অবস্থান করেন। কোনো মায়ের বুকে দুধ আসতে দেরী হলে অন্য কেউ তার সন্তানকে একটু দুধ দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। আর সন্তানের মা যদি প্রতি ঘণ্টায় একবার নিজের সন্তানকে দুধ দেয়ার জন্য বুকে নেন তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিজের বুকে দুধ এসে যাবে। এটা ছোট্ট একটা সমন্বয়ের কাজ যা ওয়ার্ডে অবস্থানরত ডাক্তার বা নার্সের সহায়তায়ও হতে পারে। জাতীয়ভাবে এ প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সাফল্য পেতে হাসপাতালে সন্তান জন্ম দেয়া নিশ্চিত করতে পারেন।
নবজাতককে আপতকালীন সহায়তার জন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ব্লাড-ব্যাংক এর ন্যায় ‘দুধ ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার উপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে কোনো কোনো মহল থেকে।
Related Posts
Comments
comments