পানিশূন্যতায় শারীরিক জটিলতা !!!
আমাদের দেহের ওজনের দুই তৃতীয়াংশই পানি! গঠনগত এমন কারণে একজন মানুষের পক্ষে কখনোই পানি ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব না। এমনকি দুয়েক দিনের বেশি মানুষ পানি পান না করে বেঁচে থাকতে পারে না। মানবদেহের টিস্যু, কলা এবং কোষের সুস্থতা নির্ভর করে পানির ওপর। পানি আমাদের দেহে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, তাহল-
* দেহের সুস্থতায় পানি পর্যাপ্ত রস ধরে রাখতে সাহায্য করে।
* আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পানির।
* হাড়ের জোড়ায় এবং চোখের মধ্যে থাকা পিচ্ছিল লুব্রিকেন্ট তৈরিতে পানি সাহায্য করে। এতে করে প্রয়োজনে হাত- পা নাড়ানো এবং চোখ ঘোরাতে কোনো সমস্যা হয় না।
* দেহের উচ্ছিষ্ট এবং বিষক্রিয়া বের করতে পানি সরাসরি ভূমিকা রাখে।
* দেহের শক্তি যোগাতেও পানির ভূমিকা অনেক।
* আপনার ত্বকের যত্ন নিয়ে যৌবন ধরে রাখতে পানি গুরুত্বপূর্ণ।
পানি ছাড়া মানবদেহ পুরোপুরি কাজ করায় বন্ধ করে দিতে পারে। এমনকি দেহকে একদম শুকিয়ে ফেলতে পারে। শরীরে প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখতে তরল পানীয় পান করতে পারেন। যেসব খাবরে পানি আছে তা খেলেও উপকার পাবেন। এছাড়া সুস্থ থাকার জন্য দিনে অন্তত আট গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিৎ। দেহের পানিশূন্যতা দেখা দেয় বিভিন্ন কারণে। যেমন- অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, বেশি ঘেমে যাওয়া, ডায়রিয়া, বমি, ডায়বেটিস এবং অতিরিক্ত মুত্র বিসর্জন। এসব কারণেই মুলত আপনার দেহ পানিশূন্য হয়ে পড়তে পারে। শুরু হতে পারে নানা রকম জটিলতা।
অধিকাংশ মানুষই দেহের পানিশূন্যতা নিয়ে খুব বেশি সচেতন নন। অথচ পানিশূন্যতার কারণে অনেক রকম শারীরিক জটিলতা হয়ে থাকে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো ঠিকভাবে জানলে এসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায় সহজেই। দেখে নিন পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো..
মাথাব্যথা ও অস্থিরতা
কিছু লক্ষণ খুব স্পষ্টভাবে আপনার দেহের পানিশূন্যতা প্রকাশ করতে পারে। যেমন- তীব্র মাথাব্যথা, সব কাজে অস্থির লাগা এবং কোনো বিষয়ে খুব সহজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা। দেহে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ব্রেনের চারপাশের তরল পদার্থ কমে যায়। তখন মস্তিষ্ক সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না আর এসময় মাথাব্যথা শুরু হয়, অস্থির লাগে।
উদাসীন
মানুষের মস্তিষ্ক প্রথমেই পানিশূন্যতার লক্ষণ প্রকাশ করে। কারণ মস্তিষ্কের ৯০ শতাংশই পানি দিয়ে তৈরি। পানিশূন্যতার কারণে সিন্ধান্ত নেয়া, স্মৃতিচারণ এবং ভাবমুর্তি বদলে দিতে পারে। আচরণে খুব সহজেই উদাসিনতা দেখা দেয়।
মুখে দুর্গন্ধ
মুখে দুর্গন্ধ পানিশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ। এছাড়াও বার বার গলা শুকিয়ে যাওয়া, পানি পানের পরেও পিপাসা অনুভূত হওয়া, দূর্বল লাগা পানিশূন্যতার অন্যতম লক্ষণ।
কোষ্ঠকাঠিন্য
পরিমিত পানি পান না করলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। হজমেরও তীব্র সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে পেটে গ্যাসের উৎপত্তি হয়। সবমিলে শারীরিক নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হঠাৎ ক্ষুধা
পানিশূন্যতা হঠাৎ করেই খাবারের ক্ষুধা বাড়িয়ে দিতে পারে। যখনই পানিশূন্যতা কাজ করে তখনি আপনি ভেবে নিতে পারি ক্ষুধার্ত অথচ বাস্তবে আপনি পিপাসার্ত।
প্রস্রাবে সমস্যা
পানিশূন্যতা প্রস্রাবে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, রঙ বদলে যাওয়া, মুত্রনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। ফলে দেহে ক্ষতিকারক উপাদান জমে যেতে শুরু করে।
হাত-পায়ে ব্যথা
পানিশূন্যতার কারণে হাত-পায়ে ব্যথা হতে পারে। শরীর পানিশূন্যতায় ভুগলে হাড় দূর্বল হয়ে যায় এবং ব্যথা শুরু হয়।
ত্বক শুকিয়ে যায়
ত্বক এবং চুলের ওপর পানিশূন্যতা মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অকালে চুল ঝরে যাওয়া, পেকে যাওয়া, ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া, দাগ পড়ার অন্যতম কারণ দেহে পর্যাপ্ত জলীয় না থাকা।
হৃদকম্পন
পানিশূন্যতা প্রতিদিন ১ শতাংশ করে হৃদকম্পন পরিবর্তন করে। শরীরে পানি কম থাকলে একসময় হৃদকম্পন বেড়ে যায় অনেক বেশি। এতে প্রেসার নিচে নেমে যেতে পারে। এসময় আপনার মানসিক চাপও বাড়তে পারে। তাতে উত্তেজনা এবং অস্থিরতা বাড়বে। যখনই আপনার হৃদকম্পন অনেক বেশি মনে হলে অবশ্যই অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
Related Posts
Comments
comments