গরম কালের প্রিয় ফলগুলোর কত-শত উপকারিতা
সামনেই আসতেছে মধুমাস জ্যৈষ্ঠ। মানে ফলের মাস। আমরা সবাই জানি এই গ্রীষ্মকাল হল ফলের ঋতু। কিন্তু অনেকেই জানিনা কোন ফলে কি গুন আছে? তাই আর দেরি না করে আসুন জেনে নেই কোন ফলে কি গুন?
লিচু কেন খাবেন?
প্রতিদিন শরীরের জন্য যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ প্রয়োজন, এক কাপের (২৪০ গ্রাম) সমপরিমাণ লিচু খেলে তার চেয়েও বেশি পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। ক্ষত নিরাময় এবং রক্তক্ষরণ প্রতিরোধের পাশাপাশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এই ভিটামিন। লিচু থেকে মিলবে প্রচুর শক্তি। ক্যালরি মান ভালো থাকলেও ফ্যাট আর সোডিয়াম কম থাকায় লিচু বেশ স্বাস্থ্যকর। তাই মৌসুমের রসাল, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এই ফলটি আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন।
১০০ গ্রাম লিচু বলতে মাঝারি আকারের প্রায় ১০টি লিচুকে বোঝায়। মার্কিন ওষুধ প্রশাসন বিভাগ বলছে, প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। চর্বি একেবারেই নেই। আরও আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ মাইক্রোগ্রাম ফলেট এবং সামান্য পরিমাণ (১ মিলিগ্রাম) সোডিয়াম।
লিচুতে আরও আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ‘বি’, যা প্রতিদিনের খাবার থেকে শরীরে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। এগুলোর মধ্যে ফোলেট নামের উপাদানটি শরীরে নতুন কোষ এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীর প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট প্রয়োজন, যার ২৭ মাইক্রোগ্রাম পরিমাণ পাওয়া যায় এক কাপ লিচু থেকে। লিচুতে আছে পটাশিয়ামও, যা আমাদের শরীরে পানির সমতা রক্ষা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও মাংসপেশির সংকোচনে সহায়ক। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় লিচু।
আম নিয়ে গল্পকথা
মহাভারতে আম নিয়ে মজার এক গল্প রয়েছে। সীতাকে রাবণ অপহরণ করে নিয়ে যায় লঙ্কায়। বন্দী অবস্থায় সীতাকে ফল খাওয়ানো হয়। নাম না-জানা ফল খেয়ে খুব মজা পায় সীতা। নিজের ভাগের অংশ থেকে সীতা কয়েকটা ফল রাম, লক্ষ্মণ ও হনুমানের জন্য রেখে দেয়। কদিন পর সীতার খোঁজে হনুমান গেল লঙ্কায়। ঠিক ঠিক হাজির হয় বন্দী সীতার কাছে। সীতা হনুমানকে ওই ফল দিয়ে বলে, এগুলো তোমার, রাম ও লক্ষ্মণের জন্য। তোমরা খেয়ো। হনুমান সেই ফলগুলো থেকে একটা ফল খেয়ে আর লোভ সামলাতে পারেনি। সব ফল একাই খেয়ে ফেলে। ফিরে যায় সীতার কাছে। বলে, মা, আমি অপরাধ করেছি। ফলগুলো রাম ও লক্ষ্মণকে না দিয়ে একাই খেয়েছি। এখন বলো এই ফলের নাম কী? কোথায় পাওয়া যায়? সীতা বলে, আমি তো এখানে বন্দী। কোথায় কী আছে আমি বলতে পারব না। এই ফলের কী নাম, তা-ও জানি না। তবে আশপাশেই পাওয়া যাবে হয়তো। খোঁজ করে দেখতে পারো। হনুমান ফলের সন্ধানে বের হয়। এত স্বাদের ফল, কী নাম এর? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যায় আমবাগান। গাছ থেকে একটি আম খেয়ে হনুমান বুঝতে পারল, সীতার দেওয়া ফলের মতো এই ফলেরও একই রকম স্বাদ। আমগাছে উঠে হনুমান ইচ্ছেমতো খেতে থাকে আর আমের আঁটি এদিক-সেদিক ছুড়ে মারতে থাকে। কথায় বলে, হনুমানের ছুড়ে দেওয়া আমের আঁটি থেকেই এই ভারত উপমহাদেশে জন্ম হয়েছে আমগাছের।
আমের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। উচ্চমাত্রার চিনি, ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে এই ফলে। আমে রয়েছে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন শরীরের স্নায়ুগুলোতে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়। শরীরকে রাখে সতেজ। ঘুম আসতে সাহায্য করে। আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। আঁশ-জাতীয় ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, মুখের ব্রণ প্রতিরোধ করে। চিকিৎসকদের মতে, আমে খনিজ লবণের উপস্থিতিও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। দাঁত, নখ, চুল, মজবুত করার জন্য আমের খনিজ লবণ উপকারী ভূমিকা পালন করে। বুদ্ধি ও শরীরের শক্তি বাড়ানোর জন্য আম ভীষণ জরুরি ফল।
ফলের রাজ্যে কাঁঠাল রাজা
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল হলেও এই সুস্বাদু ফলের পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। পাকা কাঁঠালের ক্যালরি মূল্য প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৯০ কিলোক্যালরি এবং মোট খনিজ লবণের পরিমাণ প্রায় ০.৯। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের থাকে খাদ্যআঁশ ২ গ্রাম, আমিষ ১ গ্রাম, শর্করা ২৪ গ্রাম, চর্বি ০.৩ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৪ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ৩৭ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩০৩ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.১৯৭ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ২৯৭ আই.ইউ, ভিটামিন সি ৬.৭ মিলিগ্রাম, থায়ামিন (ভিটামিন বি১) ০.০৩ মিলিগ্রাম, রিবোফেবিন (ভিটা বি২) ০.১১ মিলিগ্রাম, নায়াসিন (ভিটা বি৩) ০.৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬০.১০৮ মিলিগ্রাম।
কাঁঠালে থাকা শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে, সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে চর্বির পরিমাণ খুব কম। তাই বেশি খেলেও ওজন বাড়ার শঙ্কা নেই। এর ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কাঁঠাল মস্তিষ্ককে সুরক্ষা দেয় এবং নার্ভাসনেস কমায়। এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ শরীরের নানা রকমের রক্তরোগকে প্রতিরোধ করে। এর ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস আলসার, উচ্চ রক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে কার্যকর। কাঁঠাল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং প্রতিরোধে সাহায্য করে। কাঁঠাল চোখের জন্য বেশ উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ আছে, যা রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। কাঁঠালের কিছু উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং হৃৎপিণ্ডের সুরক্ষা দেয়।
রক্তের চিনির মাত্রা স্বাভাবিক রাখার জন্য কাঁচা কাঁঠালের জুড়ি নেই। কাঁচা কাঁঠালের ফাইবারের পরিমাণ পাকা কাঁঠালের চেয়ে বেশ কয়েক গুণ বেশি। তাই ডায়াবেটিক মানুষের জন্য কাঁচা কাঁঠাল উপকারী, তবে পাকা কাঁঠাল খাওয়ায় বিধিনিষেধ আছে। এতে থাকে আঁশ, তাই বেশি খেলে হজমে গোলযোগ হতে পারে। এ ছাড়া কিডনি রোগে আক্রান্তদের মধ্যে যাঁদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি, তাদের কাঁঠাল না খাওয়াই ভালো।
তরমুজ খাব কি?
গরমে একটু আরাম পেতে তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই। পানিযুক্ত ফল বলে তরমুজ এ সময়টার জন্য আসলেই বেশ উপকারী। প্রতিদিন ২ কাপের মতো তরমুজ খেলে শরীরে ভিটামিন এ-র চাহিদা পূরণ হয়। তরমুজ খেলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুস্থ থাকে। কারণ ভিটামিন এ ত্বককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। তরমুজের ভিটামিন বি৬, ভিটামিন বি১ শরীরে এনার্জি তৈরিতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন সি কোলাজেন গঠনে সাহায্য করে। প্রতিদিন দুই কাপ পরিমাণ তরমুজ খেলে শরীরে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি-র চাহিদা মেটে। তরমুজে আরও আছে পটাশিয়াম, যা উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকিও কমায়। পটাশিয়াম শরীরে ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২ কাপ তরমুজে ৩৫০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। পরিমাণে কম হলেও তরমুজে সোডিয়াম রয়েছে। এছাড়াও আছে থায়ামিন ও ম্যাগনেসিয়াম। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ তরমুজ শরীর সতেজ রাখে। এতে ফ্রি র্যাডিকেলস প্রশমিত হয়। ফ্রি র্যাডিকেল রক্তনালীতে কোলেস্টেরলের স্তর তৈরি করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাঁড়ায়। এর থেকে অ্যাজমাও বৃদ্ধি পেতে পারে। হাড়ের জোড়ায় ব্যথা বাড়ে। সবুজ খোসাসহ তরমুজ ক্যানসার রোগীদের জন্য খুবই আদর্শ। অ্যাজমা, ডায়াবেটিসের মতো রোগে ব্যথা উমশমে তরমুজ সাহায্য করে। তরমুজের বিঁচি অন্ত্রের জন্য উপকারী।এছাড়া তরমুজ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হজমে সাহায্য করে ও কিডনির কাজকর্ম ঠিক রাখে। তবে অনেক সময় তরমুজে মেশানো হয় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যার ফলে এটি খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনার কথা খবরেও এসেছে। তাহলে কি তরমুজ খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো?
এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, ‘তরমুজ খেলেই অসুস্থ হয়ে পড়ব, এমন ধারণা ভুল। তবে কিছু ব্যাপারে প্রয়োজন সতর্কতা, তাহলে আর তরমুজ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ভয় থাকবে না।’ জেনে নিন তাঁর পরামর্শ—
১. অনেকেই তরমুজ কেনার সময় খানিকটা অংশ কেটে পরখ করে নেন, তরমুজটি লাল কি না, তাও দেখে নেন। তবে একদম টকটকে লাল তরমুজ খাওয়া ঠিক নয়। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার মাধ্যমে তরমুজের রং লাল করা হয়। তাই কেনার সময় স্বাভাবিক রঙের তরমুজ কিনুন।
২. বাইরে যেসব তরমুজ দীর্ঘক্ষণ কেটে রাখা থাকে, সেগুলোতে ধুলাবালু ও ময়লা পড়ে যায়। আবার এগুলোতে মাছিও বসে। ফলে এসব তরমুজ খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
৩. কিছু তরমুজে খুব বেশি বিচি থাকে, এগুলো খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, তরমুজের বিচি খুব বেশি খেয়ে ফেললে পেটে ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে।
৪. শিশুদের তরমুজের পরিবর্তে এর রস দিতে পারেন।
৫. কোনো তরমুজ খেয়ে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই তরমুজের বাকি অংশ ফেলে দিন, যাতে তা অন্য কেউ না খেয়ে ফেলে।
গরমের ফল জাম
খেতে সামান্য কষভাব রয়েছে। তবে রোগ নিরাময়ে জামের ভেষজ গুণ অনেক। শুধু এর নরম মাংসল অংশটাই নয়, এর বীজেও ওষুধ হিসাবে ব্যবহার হয়। নিম্নে জামের কয়েকটি ভেষজ গুনাগুণ তুলে ধরা হলো।জামে নানা রকম খনিজ পদার্থের মধ্যে জামে আয়রন থাকে সবচেয়ে বেশি। সেজন্য বলা হয় জাম খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। এছাড়া সর্দি-কাশি, হজমের গণ্ডগোল ও বাতের অসুখে জাম উপকারী। এ সময়কার আরেকটি সুস্বাদু ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল আনারস। সর্দি-কাশিতে আনারস খেলে শ্লেষ্মা ও মিউকাসকে তরল করে।অনেকেই জানি না, জামের বীজ এর উপকারিতা। জামের বীজের মধ্যে রয়েছে জাম্বলিন নামে গ্লুকোসাইট। গ্লুকোসাইট স্টার্চকে শর্করাতে রূপান্তরের হাত থেকে বাঁচায়। যা নারী-পুরুষের মেহ রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
১.কাঁচা জামের পেস্ট পেটের জন্য উপকারী। এতে পেটের রোগ সেরে যায়। ক্ষুধামন্দা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে জামের আচার পানির মধ্যে সমপরিমাণে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা খেলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। ২. বর্তমানে কিছু দেশে জাম দিয়ে বিশেষ ওষুধ তৈরি করা হচ্ছে, যা ব্যবহারে চুল পাকা বন্ধ হবে। ৩. গলার সমস্যার ক্ষেত্রে জাম ফলদায়ক। জাম গাছের ছাল পিষে পেস্ট তৈরি করে তা পানিতে মিশিয়ে মাউথ ওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে গলা পরিষ্কার হবে, মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে, মাড়িতে কোনো সমস্যা থাকলে তাও কমে যাবে।
পেঁপে খান প্রতিদিন, সুস্থ থাকুন চিরদিন
পেঁপের আরেক নাম পাওয়ার ফ্রুট। কারণ, এতে রয়েছে অনেক রোগের নিরাময়ক্ষমতা। এর পেপেইন নামের উপাদান আমিষকে হজম করে সহজেই এবং পরিপাকতন্ত্রকে পরিষ্কার করে। ওজন কমাতেও বেশ সহায়ক। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘ই’, ক্যারোটিনয়েড, লুটিন ও লাইকোপিন আছে পেঁপেতে। ১৫০ গ্রামের ছোট একটি পেঁপের ফালিতে তিন হাজার মাইক্রোগ্রাম লাইকোপিন থাকে। গবেষকদের মতে, লাইকোপিন ক্যানসার প্রতিরোধী। পুষ্টি বিবেচনায় পেঁপে অনেক ফলের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। কমলার চেয়ে পেঁপেতে ৩৩ শতাংশ বেশি ভিটামিন ‘সি’ এবং ৫০ শতাংশ বেশি পটাশিয়াম রয়েছে। আপেলের চেয়ে পেঁপেতে ১৩ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ এবং দ্বিগুণ পরিমাণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। আপেল ও কমলার চেয়ে পেঁপেতে ভিটামিন ‘ই’-এর পরিমাণও চার গুণ বেশি।
১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে পানি ৯০ গ্রাম, প্রোটিন শূন্য দশমিক ৫ গ্রাম, ফ্যাট শূন্য দশমিক ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ২০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ২৩০ মিলিগ্রাম এবং বিটাক্যারোটিন, রিবোফ্লাবিন, নিয়াসিন, থায়ামিন, সোডিয়াম পভৃতি উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। পাকা পেঁপে কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতে সাহায্য করে। প্রচুর আঁশ ও ক্যারোটিন থাকায় এটি অন্ত্রের ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। পেঁপে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। প্রতিদিন দুই কাপ পেঁপে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
বাঙ্গির মিষ্টি কম, গুণ বেশি
এখন বাঙ্গির মৌসুম। বাজার ভরপুর গ্রীষ্মের এই ফলে। লতানো গাছে ধরা বাঙ্গিকে অনেকে ফুটি বলেও ডাকে। তবে রসাল ফলটির মিষ্টি কম হওয়ায় অনেকে খেতে আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু পুষ্টিগুণে এর জুড়ি নেই। তাই বাঙ্গিকে অবহেলা নয়।
বাঙ্গির পুরোটাই জলীয় অংশে ভরপুর। এটি ভিটামিন ‘সি’, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফলটি খেলে কী কী উপকার হয়।
বাঙ্গি ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। এটি ত্বকের কোষ নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করতে সাহায্য করে। বাঙ্গির প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে করে সুন্দর। বাঙ্গি মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
দূর করে ব্রণ, একজিমা: ব্রণ বা একজিমার সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন এক গ্লাস বাঙ্গির শরবত খান। এ ছাড়াও বাঙ্গি ভালো করে ব্লেন্ড করে ছেঁকে রসটুকু বের করে তা লোশনের মতো ব্যবহার করুন। এতে ব্রণ এবং একজিমার সমস্যা দূর হয়।
বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘ইন্সনিটোল’, যা আমাদের চুল নতুন করে গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া ব্লেন্ড করা বাঙ্গি শ্যাম্পু করার পর চুলে কন্ডিশনারের মতো ব্যবহার করাও ভালো। বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই ফলের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম। বাঙ্গি মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহে সহায়তা করে শরীরের অবসাদ ভাব দূর করে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুব উপকারী বাঙ্গি। নিয়মিত বাঙ্গির শরবত খেলে খাবারে অরুচি, নিদ্রাহীনতা, আলসার ও অ্যাসিডিটি দূর হয়। তা ছাড়া এই ফলে নেই কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল। তাই বাঙ্গি খেলে মুটিয়ে যাওয়ার ভয় নেই একেবারেই।
ফল খেলে কি ফ্যাট হয়?
ফল খেলে ওজন বাড়ে—এমন কথা অনেকেরই মুখে শোনা যায়। এটি কি সত্য, নাকি ধারণা মাত্র? এ বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলো বলেন, কথাটি আংশিক সত্য বলা যেতে পারে, তবে তা দু-চারটি ফলের ক্ষেত্রে মাত্র। তা ছাড়া কোনো ফলে তেমন ওজন বাড়ার মতো ক্যালরি থাকে না।
কোন ফলে ওজন বাড়তে পারে
পাকা বা কাঁচা কলা, কাঁঠাল, কাঁঠালের বীজ, আম এবং শুষ্ক খাবারের মধ্যে খেজুর, বাদাম ইত্যাদি। এ ছাড়া অন্যান্য ফলে সাধারণত ওজন বাড়ে না। পাকা ও কাঁচা উভয় ধরনের কলায় প্রচুর ক্যালরি, ভিটামিনসহ বিভিন্ন উপাদান থাকে। কাঁঠাল ও কাঁঠালের বীজেও প্রচুর ক্যালরি থাকে। আমে প্রচুর শকর্রা থাকে, যা খেলে হঠাৎ রক্তে শকর্রার পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন বাড়িয়ে তোলার চেয়ে ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তের শকর্রাকে অনিয়ন্ত্রিত করে দিতে পারে।