১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বুধবার

Generic selectors
Exact matches only
Search in title
Search in content
Search in posts
Search in pages
Filter by Categories
Uncategorized
ইসলামী জীবন
ঔষধ ও চিকিৎসা
খাদ্য ও পুষ্টি
জানুন
নারীর স্বাস্থ্য
পুরুষের স্বাস্থ্য
ভিডিও
ভেসজ
যৌন স্বাস্থ্য
রান্না বান্না
লাইফ স্টাইল
শিশুর স্বাস্থ্য
সাতকাহন
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য
স্বাস্থ্য খবর

সেক্স নিয়ে কেন কথা বলবেন?

সেক্স শব্দটি যেন অচ্ছুৎ। উচ্চারণ করতেও লজ্জা পান বেশিরভাগ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে আবার আগ্রহেরও শেষ নেই। কিন্তু সংকোচ এবং লজ্জার কারণে আলোচনা করা হয় না। বিশেষ করে নারীরা তো অত্যন্ত ‘গোপন বিষয়’ হিসেবে বিবেচনা করে এই ব্যাপারে মুখই খুলতে চান না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় জরায়ু কিংবা ব্রেস্ট টিউমারের মতো ব্যাধির কথাও মুখ ফুটে বলেন না অনেক নারী। লজ্জা কাটিয়ে প্রজনন এবং যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে রাজি নন তারা।

স্কুল পর্যায়ে বইয়ে পিরিয়ড কিংবা যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে পাঠ্য থাকলেও সেই অধ্যায়টি সঙ্গোপনে এড়িয়ে যান অনেক  শিক্ষক। অথচ উন্নত দেশগুলোতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই পড়ানো হয় এসব বিষয়।

বাংলাদেশের মতো অনেক জায়গাতেই এমনকি স্বামী-স্ত্রী বহু বছর একসঙ্গে সংসার করার পরও নিজেদের যৌন স্বাস্থ্য কিংবা চাহিদা নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। সেক্স নিয়ে কথা না বলার কারণে সৃষ্টি হয় দাম্পত্য অশান্তি, শারীরিক অতৃপ্তি, ধর্ষণ, নিপীড়ন, অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবন এবং অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের মতো ঘটনা। তাই কিছু কিছু সম্পর্কে সেক্স নিয়ে খোলাখুলি কথা বলাটা খুবই প্রয়োজন।

হাজব্যান্ড-ওয়াইফ
রাহাত এবং বিভার বিয়ে হয়েছে তিন বছর আগে। বিয়ের আগেও দুই বছর প্রেম ছিল তাদের মাঝে। কিন্তু বিয়ের আগের এবং পরের জীবনে অনেক পার্থক্য মনে হচ্ছে বিভার কাছে। বিয়ের আগের রোমান্টিক রাহাত এখন শুধুই একজন শয্যাসঙ্গী। যেসব ফ্যান্টাসি বিভার ছিল সেগুলোও অবাস্তব মনে হচ্ছে এখন তার কাছে। যৌনতার ব্যাপারে নিজের পছন্দ-অপছন্দের কথা রাহাতকে বলতেও ভীষণ সংকোচ হচ্ছে তার। সব মিলিয়ে ভীষণ বিষণ্ণতায় দিন কাটছে বিভার।

স্বামী-স্ত্রীর একান্ত গোপন মুহূর্তগুলো সম্পর্কে কথা বলতে অনেকেই পছন্দ করেন না। বাইরের কারও সঙ্গে এই বিষয়ে কথা না বললেও স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা জরুরী। নিজেদের সম্পর্কটাকে আরও সহজ এবং উপভোগ্য করে তোলার জন্য সেক্স নিয়ে দুজনে আলাপ করার বিকল্প নেই। কী ধরণের যৌনতা পছন্দ করেন, কী অপছন্দ করেন, নিজেদের ফ্যান্টাসি, জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি ইত্যাদি আরও নানা বিষয়ে সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ করা উচিত। এতে যৌনতা অনেক স্বাচ্ছন্দ্যময় ও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। সুস্থ যৌন সম্পর্কের জন্য সেক্স নিয়ে কথা বলা জরুরী। এতে একে অপরের আবেগ-অনুভূতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব।

প্রেমিক-প্রেমিকা ও বন্ধুত্ব
আবিরের সঙ্গে পৃথার পরিচয় হয়েছিল কলেজের বন্ধুর মাধ্যমে। এরপরই বন্ধুত্ব এবং সেখান থেকে প্রেম। কিন্তু প্রেমে জড়ানোর কিছুদিন পর থেকেই আবির বেশ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাতে চাইছে পৃথার সঙ্গে। একটু নিরিবিলি স্থান, অন্ধকার ক্যাফেতে যাওয়াটা আবিরের অভ্যাস হয়ে গেছে। পৃথা আবিরকে খুব ভালোবাসে, কিন্তু বিয়ের আগেই যৌনতা পছন্দ নয় তার। আর তাই পৃথা ঠিক করেছে সেক্স নিয়ে তার পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি আবিরের সঙ্গে আলাপ করবে।

প্রেমের সম্পর্কের সঙ্গে যৌনতাও জড়িয়ে আছে। তবে, অনেক মেয়ে না না চাইলেও প্রেমিকের মন রক্ষায় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি ডেট-রেপ এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণের মতো ঘটনাও ঘটছে প্রেমের ফাঁদে ফেঁসে। তাই প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সেক্স নিয়ে অবশ্যই খোলাখুলি কথা বলে নেয়া উচিত। দুজনের পছন্দ-অপছন্দ জানা থাকলে আবেগের বশবর্তী হয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা কমবে।

বন্ধুত্বেও সেক্স নিয়ে কথা বলাটা দরকার। আর তার কারণ হলো, বন্ধুর সঙ্গে সেক্স নিয়ে আলাপ করলে অনেক কিছু জানতে পারবেন আপনি। অজ্ঞতার কারণে অনেক ভুল করে ফেলার আশঙ্কা থাকে। সবচাইতে কাছের বন্ধুর সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করলে অনেক ভুল ভাঙতে পারে। আপনার যে সমস্যা হচ্ছে সেটা বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করলে হয়তো সমাধান পেতে পারেন। ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হলে অধিকাংশ নারীই সেটা প্রকাশ করেন না লজ্জায় বা ভয়ে। বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টি পরামর্শ করা অনেকটাই সহজ। এমনকি ধর্ষক এবং নিপীড়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাহসটাও বন্ধুর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব।

বয়ঃসন্ধি
কিছুদিন আগেই খুব খারাপ একটা অভিজ্ঞতা হয়েছিল সায়মার। পাশের বাসার আঙ্কেল তাকে ডেকে নিয়ে খুব অশ্লীল কিছু ভিডিও দেখিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে সায়মা। পড়াশোনাতে মন বসছে না, কারও সঙ্গে কথাও বলতে ইচ্ছে করছে না। সারাক্ষণ অজানা ভয় তাড়া করছে সায়মাকে।

বয়ঃসন্ধিতে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময়ই এগুলো মুখ ফুটে বলা হয় না। বিশেষ করে সেক্স বিষয়ক অনেক প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়। এছাড়াও যৌন হয়রানির স্বীকার হলেও বলতে পারে না কাউকে। সঠিক তথ্য জানার জন্য কোনো বিশ্বস্ত সূত্র খুঁজে বেড়ায় কৌতূহলী মন। আর এসব কৌতূহলের কারণেই তারা জড়িয়ে পরে পর্নোগ্রাফির মতো নেশায়। তাই বয়ঃসন্ধিতে অভিভাবকেরই উচিত সন্তানকে সেক্স সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়া।

সন্তানের সঙ্গে বয়ঃসন্ধিতে যে বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই কথা বলতে হবে সেগুলো হলো, শারীরিক পরিবর্তন, বয়ঃসন্ধিকালের আচরণ, প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা, যৌন হয়রানি ইত্যাদি। এছাড়াও সন্তানের মনে যে কোন প্রশ্ন থাকলে সেগুলো এড়িয়ে না গিয়ে বরং স্বাগত জানাতে হবে, খোলামেলা কথা বলতে হবে।

মনোবিদরা কী বলেন?
উত্তরা ওম্যানস মেডিক্যাল কলেজের মনোবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার চিরঞ্জীব বিশ্বাস বলছেন: সেক্স নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে মানুষের জড়তা তৈরি হয় ছোট বেলা থেকেই। পরিবার থেকেই এই জড়তা তৈরি করা হয় মনে। ছোটবেলায় বাবা-মাকে ‘সেক্স’ প্রসঙ্গে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে মনে করা হয় সন্তান খারাপ হয়ে গেছে। ফলে পরিবার থেকে নেতিবাচক সাড়া পেয়ে মনে তৈরি হয় জড়তা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা স্বাভাবিক জিনিসগুলোকে অস্বাভাবিক মনে করি। ঘুমের মাঝে পুরুষের ইজাকুলেশনকে রোগ মনে করেন অনেকেই। সুস্থ এবং অসুস্থতার ফারাক আমরা বুঝি না অজ্ঞতার কারণে। নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণকে ভুল মনে করা হয়। অথচ বাড়ন্ত বয়সে এইটাই স্বাভাবিক। রক্ষণশীলতার কারণে ছেলে-মেয়ে মিশতে দেয়া হয় না, পুরুষ শিক্ষক রাখা হয় না। এমনকি টেলিভিশনে নায়ক-নায়িকা একে অপরের সঙ্গে কথা বললেও পরিবারের মুরুব্বিরা চ্যানেল পরিবর্তন করে দেন।’

তার মতে, সঠিক ধারণা না থাকার কারণে এবং সেক্স নিয়ে কথা না বলার কারণে সেক্সুয়াল সমস্যা এবং সেক্সুয়াল ডিজিজ এর পার্থক্য বুঝতে পারেন না বেশিরভাগ মানুষ। সেক্সুয়াল লাইফের অতৃপ্তির কারণে ডিভোর্সের হারও বেড়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র: চ্যানেল আই অনলাইন

Comments

comments