গরমে পানিশূন্যতা রোধের ৯ উপায়
শুভ নববর্ষ সবাইকে। কালবৈশাখের আগমনের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। সূর্য প্রচন্ড তাপ বিকিরণ করছে অকৃপণ ভাবেই। তাই বলে কী আর ঘোরাঘুরি বন্ধ থাকবে। না তা নিশ্চয়ই নয়! পহেলা বৈশাখে ঘোরাঘুরিতো করবেনই। তবে সারাদিন ঘুরার পরেও যেন সুস্থ থাকতে পারেন সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। গরমে বাহিরে ঘুরার ফলে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হয়ে যেতে পারে আপনার। আর যারা অনেক বেশি ঘামেন তাদেরতো ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
ডিহাইড্রেশন তখনই হয় যখন আমাদের শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ ও খনিজ উপাদান সহ অনেক বেশি তরল বের হয়ে যায়। তাই একে খুব হালকাভাবে নিবেন না, কারণ এর ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তবে গরমের ডিহাইড্রেশন কিছুটা ভিন্ন। বাহিরের তাপ বৃদ্ধির ফলে অনেক ঘাম হয় বলে শরীর এই তরলের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারেনা বলে ডিহাইড্রেশন হয়। ডিহাইড্রেশনকে প্রতিহত করার কিছু টিপস জেনে নিই চলুন।
১। পর্যাপ্ত পানি পান করুন
অনেকেই কম পানি পান করে থাকেন। কিন্তু গরমে যেহেতু ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায় বেশি তাই আপনাকে পানি পান করতে হবে বেশি। ডিহাইড্রেশন থেকে দূরে থাকার প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে পর্যাপ্ত পানি পান করা। প্রতিদিন ৬-৮ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেন কিছু বিশেষজ্ঞ। কিন্তু মনে রাখবেন তরলের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তি বিশেষ ভিন্ন হতে পারে বিভিন্ন কারণে যেমন- ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন, শারীরিক সক্রিয়তা এবং তিনি কোথায় অবস্থান করছেন তার উপর নির্ভর করে।
২। ডাইইউরেটিক এড়িয়ে চলুন
ডাইইউরেটিক হচ্ছে কোন বস্তু বা খাবার যা মূত্রের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এর ফলে শরীর থেকে অনেক তরল বের হয়ে যায়। জনপ্রিয় ডাইইউরেটিক বা মূত্রবর্ধক হচ্ছে ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় যেমন – চা, কফি, কোলা এবং চকলেট ইত্যাদি।
৩। মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
এসিডিটি এবং বুক জ¦ালাপোড়া করার সমস্যা সৃষ্টি করা ছাড়াও মসলাযুক্ত খাবার শরীর থেকে তরল বের হয়ে যাওয়া বৃদ্ধি করে দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে। কিন্তু ঘাম প্রতিরোধের জন্য গরমের সময় মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিতর্কের যোগ্য। কারণ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া ভালো। তাদের মতে মসলা যুক্ত খাবার খেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক তাপমাত্রার মধ্যকার বৈসাদৃশ্য কমে এবং পরবর্তীতে একটি শীতল অনুভূতি পাওয়া যায়।
৪। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
ডিহাইড্রেশন শুধু পানির ঘাটতিকেই বুঝায় না। পানির সাথে সাথে প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইটও কমে যায়। এ জন্য আপনার পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কলা, আনারস, মিষ্টি আলু, ডাবের পানি এবং আম খাওয়া প্রয়োজন।
৫। অত্যধিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন
ফিট থাকার জন্য শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা বা ব্যায়াম করা গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু গরমের সময় অনেক বেশি পরিশ্রমের ব্যায়াম করার ফল মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে যদি আপনি পানির ঘাটতি পূরণের জন্য একটু পর পর পানি পান না করেন তাহলে।
৬। হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরুন
গাড় রঙের ভেতরে তাপ বেশি শোষিত হয় বলে গরম বেশি লাগে এবং ঘাম বেশি হয়। টাইট ফিটিং পোশাক পড়লে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই বাহিরে যাওয়ার সময় হালকা রঙের ও ঢিলেঢালা পোশাক, বিশেষ করে সুতির পোশাক নির্বাচন করুন।
৭। ঘরের ভেতরে থাকুন
সরাসরি সূর্যের তাপে গেলে অনেকবেশি ঘাম হয় বলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। বৈশাখের প্রথম প্রহরে তো অনেকেই বাহির হয়েছেন। আর যারা এখনো যাননি তারা দুপুরের পরে বের হলেই ভালো।
৮। ইয়োগা করুন
ইয়োগা শরীরকে শিথিল হতে ও নার্ভকে শান্ত হতে সাহায্য করে। বাহিরের অত্যধিক তাপের ফলে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার সকেত দেয় যে স্নায়ু তাকে শান্ত রাখতে করতে পারেন ইয়োগা।
৯। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করুন
ধূমপান করলে গলার ভেতরের কোষগুলোকে পানিশূন্য করে দেয়। এছাড়া এটি তৃষ্ণার উপর ও প্রভাব ফেলে বলে আপনি পানি পান করার আকুতি অনুভব করেন না। অন্যদিকে অ্যালকোহল ডাইইউরেটিক। এটি গলা এবং পাকস্থলীর প্রাচীরকে ডিহাইড্রেট করে। এটি যকৃত কোষের উপর ও প্রভাব ফেলে বলে তীব্র ডিহাইড্রেশন হতে পারে।