নীরবতা মস্তিষ্কের জন্য ভালো
আমরা যে শহরে বসবাস করি তা আমাদের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। কারণ তা সর্বদা শব্দে পরিপূর্ণ থাকে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরেও প্রবেশ করতে থাকে এর খারাপ প্রভাব।
২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি রিপোর্টে বলা হয় যে, শব্দদূষণ বর্তমানে একটি ‘আধুনিক প্লেগ’ এর মতো। আরো বলা হয়, এই অপ্রতিরোধ্য পরিবেশের ক্ষতিকারক শব্দদূষণের খারাপ প্রভাব রয়েছে মানুষের জীবনেও।
আমরা প্রতিদিন ক্রমাগত শব্দের মধ্যে বসবাস করি। টেলিভিশন, রেডিও, ফোনে বা সাউন্ড সিস্টেমে জোরে জোরে গান শোনা। একটু ভেবে দেখুন তো প্রতিদিন নিজের জন্য ঠিক কতটা সময় ব্যয় করছেন নিরব থেকে। এর উত্তর হয়তো খুব কম মানুষই দিতে পারবে।
আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের পরিবেশ ধীরে ধীরে আরো শব্দময় হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ সামান্য নীরবতা চান খুব করে কিন্তু কোথায় পাবেন সেই নিরাবতা। যান্ত্রিকতার শহরে মানুষ চুপ হয়ে গেলেও যন্ত্র চুপ হয় না।
একজন মানুষের প্রতিদিন কিছুটা সময় হলেও নীরবতার মধ্যে কাটানো দরকার। কারণ এটি মস্তিষ্কের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আসুন জেনে নিই নীরবতা মস্তিষ্কের জন্য ঠিক কতটা ভালো।
* নীরবতা দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ কমায়
১৯ শতকের দিকে ব্রিটিশ সেবিকা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল বলেন, অপ্রয়োজনীয় শব্দ মানুষকে বেশি অসুস্থ করে তোলে। তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত শব্দ মানুষের দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।
একটি গবেষণায় বলা হয় যে, শব্দদূষণ উচ্চ রক্ত চাপ বাড়ায় এবং এতে হার্ট অ্যাটাকেরও সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া জোরে হওয়া শব্দ থেকে মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন করটসল মুক্ত হয়ে যায়, যার দ্বারা মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
২০০৬ সালে মানুষের রক্ত চাপ এবং মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ওপর করা গবেষণা থেকে একটি হার্ট জার্নালে বলা হয়, ২ মিনিটের নীরবতা বেশি রিলাক্সিং, যা রিলাক্সিং মিউজিক থেকেও পাওয়া যায় না।
* নীরবতা মানসিক পুঁজি যোগায়
একটি গবেষণা থেকে বলা হয় যে, যারা বেশি নীরবতার মধ্যে কাটান এদের কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা বেশি থাকে অর্থাৎ তারা অনেক সুন্দরভাবে যেকোনো কিছু চিন্তা করে সমাধান করতে পারেন।
আপনি যদি সারাদিন অনেক শব্দের মধ্যে কাটান তাহলে আপনার মস্তিষ্ক মানসিকভাবে তার চিন্তা করার ক্ষমতা হারায়। এবং ক্রমাগত এটা চলতে থাকলে দেখা যায় যে, মস্তিষ্ক এক সময় কোনো কিছু ভালো বা খারাপ দিক সম্পর্কে বিবেচনা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
* নীরবতা মস্তিষ্কের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে
২০১৩ সালে প্রকাশিত মস্তিষ্ক, গঠন এবং কার্যক্রম নামক একটি জার্নালে বলা হয় যে, প্রতিদিন প্রায় দুই ঘণ্টার নীরবতা আপনার মস্তিষ্কের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে পারে। এতে করে মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি এবং অনুভূতি শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়।
নীরবতার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কোষ পুনরুজ্জীবিত হওয়ার ফলে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা কমে যায় অনেক।
সর্বোপরি বলা যায় যে, একটি মানুষের দৈনিক বেশ কিছু সময় নীরবতার মধ্যে কাটানো উচিত। কিন্তু এই যান্ত্রিকতার মাঝে নীরবতা কোথায়? মানুষ থেমে গেলেও যন্ত্র থামে না। তাই প্রতিদিন সকালে যখন সব মানুষ জেগে ওঠেন না, তখন কিছু সময় ভালো কিছু চিন্তা করে, একেবারে নীরব কোনো জায়গায় কিছুটা সময় ব্যয় করুন। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে হলে আরো ভালো। আর যদি তাও না করতে প্রতিদিন অন্তত দশ মিনিট নীরবতার মধ্যে থাকতে চেষ্টা করুন।