যৌন সঙ্গী রোবট: কতটা বাস্তব, কতটা কাল্পনিক,জেনে নিন অজানা সত্যি
রোবটের সঙ্গে যৌন মিলন; শুনতে কাল্পনিক মনে হলেও এমনটাই ঘটতে যাচ্ছে বাস্তবে এবং তা সম্ভব। তবে বাস্তবে তা দেখতে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
সম্প্রতি লন্ডনে আয়োজিত এক সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সাইন্স ফিকশনে এতোদিন বেশ গুরুত্ব পেয়েছে রোবটের সঙ্গে মানুষের যৌনতার ধারণাটি।
বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন সিরিজেও এ নিয়ে নানা ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে আর অপেক্ষা নয়, যৌন মিলনের প্রোগ্রামেবল রোবট কয়েক মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
‘লাভ অ্যান্ড সেক্স উইথ রোবট’ নিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা ডেভিড লেভি বলেন, রোবটের সঙ্গে মানুষের যৌন সম্পর্কের বিষয়টি খুবই সন্নিকটে। আগামী বছরেই আসছে সেক্সবোটস।
সংবাদমাধ্যম গ্যাজেটস নাউ’য়ের খবরে জানায়, আগামী বছর মানুষের মতোই চলাফেরা ও কথা বলতে পারা সেক্স রোবট বাজারে আনছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যাবেস ক্রিয়েশনস।
‘২০৫০ সালের মধ্যে মানুষের সঙ্গে রোবটের বিয়ে হবে এমন ভাবনাও মানুষের ভাবা উচিত।’
ওই সম্মেলনে রোবটিক সেক্সটয়ের অগ্রগতির কিছু নিদর্শনও তুলে ধরা হয়েছে। এরমধ্যে একটি গ্যাজেটও উপস্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে দূরে অবস্থান করলেও চুমুর অনুভূতি নিতে পারবেন যুগলরা।
উপস্থাপনায় বলা হয়, ধরুন-কিসেঞ্জার নামের অ্যাপটির সাহায্যে আপনি চুমু খাবেন। এ সময় আপনার ফোনে এমন একটি সেন্সর থাকবে যেটি আপনার সঙ্গীকে সঠিক সময়ে চুমু পাঠিয়ে তাকে অনুভূতি দিতে সক্ষম হবে।
কয়েক বছর ধরেই এর অগ্রগতিতে গবেষকরা কাজ করছেন বলে ওই উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়।
এদিকে টেলিটং নামের এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ওরাল ইন্টার্যাকশন নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রযুক্তির সহ-উদ্ভাবক ডোলহাটায় কাউয়েসার্মওং।
এ প্রযুক্তিতে মানুষ তাদের সঙ্গীকে যৌন উত্তেজনার সময়ে শব্দ পাঠাতেও পারবেন সাইবার স্পেসকে ব্যবহার করে।
মানবিক আতঙ্ক
যুক্তরাজ্যের সান্ডারল্যান্ডস বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের শিক্ষক লাইনি হল বলেন, অসাধারণ যৌন অভিজ্ঞতা দিতে পারে রোবট। রোবটের সঙ্গে যৌন মিলেনের অনেক উপকারিতাও রয়েছে। যেমন এটা নিরাপদ, আপনি কখনই কোনো রোগে আক্রান্ত হবেন না এবং আপনি এটাকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন।
তবে এই উদ্ভাবনের ফলে মানুষের সঙ্গে যৌন মিলনের বিষয়টি হুমকির মধ্যে পড়তে পারে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেন তিনি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের এ শিক্ষক বলেন, আমরা এখন এক মানবিক যন্ত্রণায় ভুগছি যে, কেউ হয়তো আর মানুষের সঙ্গে যৌন মিলন করবেন না। আসলে এটা খুবই বিরক্তিকর ভাবনা। লোকজন এখনও নিয়মিত পর্ন দেখেন এবং এখনও তারা মানুষের সঙ্গেই যৌন মিলন করেন।
লেভির লেখা ‘লাভ অ্যান্ড সেক্স উইথ রোবট’ বইয়ের নামানুসারেই বার্ষিক এ সম্মেলনের নামকরণ করা হয়েছে। ‘রোবটিক যৌনতার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে মানুষের সঙ্গে রোবটের বিয়ে,’ বলেন লেভি।
তার ভাষায়, রোবটের সঙ্গে যৌন মিলনের বিষয়টা যেহেতু খুবই স্বাভাবিক হয়ে উঠছে তাই আমাদের উচিত রোবটকে বিয়ে করার বিষয়টি নিয়ে ভাবা।
কেন নয়?
এ প্রসঙ্গে লেভি বলেন, ‘ভবিষ্যতের রোবট হবে ধৈর্যশীল, সদয়, প্রতিরক্ষী, প্রেমময় এবং কখনোই সে হিংসুটে, দাম্ভিক, অহংকারী কিংবা অভদ্র হবে না। কয়েক দশকের মধ্যেই উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অর্জন সম্ভব সফটওয়ারের উন্নতির মাধ্যমে।’
রোবট ব্যক্তিত্বের স্বাতন্ত্র
লেভির মতে, আইন সিদ্ধ হলে রোবটের অভিভাবকত্ব হতে পারে একটি সামাজিক নিয়ম। মানুষের অভিভাবক হবে রোবট-ভবিষ্যতে এটি শুধুমাত্র কল্পনার থেকেও বেশিকিছু হবে বলে মনে করেন তিনি।
তার কথায়, তাত্ত্বিক এ ধারণা আইনে পরিণত হবে এমন সময়ের দিকে খুব দ্রুতই ধাবিত হচ্ছি আমরা। তবে এটা খুবই বিস্ময়কর হবে। বর্তমানে অনেকের জন্যই রোবটের সঙ্গে যৌন মিলনের বিষয়টা বেশ দূরের কল্পনা।
লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটির পিএইচডি-এর শিক্ষার্থী ইম্মা ইয়ান ঝাং কাজ করছেন কিসিঞ্জার প্রোটোটাইপ নিয়ে। তার বিশ্বাস, এই আইডিয়া গ্রহণ করতে মানুষের আরও অনেক সময় পার করতে হবে।
মালয়েশিয়ার ইমাজিনারিং ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সিটি ইউনিভার্সিটির এক পরীক্ষামূলক গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি সেক্স রোবট এবং ঘনিষ্ঠতা ও আকর্ষণের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
এ প্রসঙ্গ তুলে ঝাং বলেন, অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই রোবটের প্রতি মানুষের আকর্ষণের ধারণাটিকে সম্ভব বলে মনে করেন। তবে যখন প্রশ্ন করা হয়- আপনি কী রোবটকে ভালোবাসবেন? তখন বেশিরভাগেরই উত্তর ছিল- না।
তবে লেভির দেওয়া পরিবর্তন খুব অল্প সময়ের মধ্যে হচ্ছে না-এমন বিষয়ে একমত লাইনি হলও।